ছেলেটা যে ক্রিকেট খেলে, জানতেন পাড়ার লোকজন। কিন্তু সেটা যে বিশ্বজয়ী হয়ে ওঠার মতো, সপ্তাহ তিনেক আগেও জানা ছিল না অনেকের। বুধবার সেই ছেলেকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙল কোন্নগরের ক্রাইপার রোডে। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতে বাড়ি ফিরে রবিকান্ত সিংহও বুঝলেন, এই ক’দিনেই জীবনটা কেমন পাল্টে গিয়েছে।
বাবা, মা, দাদা, দাদু-সহ বাড়ির সকলেই এ দিন বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। কোন্নগরের দুটো মন্দির ঘুরে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ যখন পাড়ায় পৌঁছলেন বিশ্বজয়ী দলের বাংলার সফল সদস্য, বেজে উঠল ড্রাম। ফাটল পটকা। |
জনতার কাঁধেই বাড়িতে পৌঁছলেন রবিকান্ত। হাত ভর্তি ফুলের তোড়া। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রর ঘোষণা, “বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাকরণে রবিকান্ত আর সন্দীপনকে সংবর্ধনা দেবে রাজ্য সরকার।”
বিশ্বকাপ দলে জায়গাই হত না, যদি না মৌসম সৈয়দ অসুস্থ হতেন। রবিকান্ত বললেন, “দুপুরে বাড়িতে বসেছিলাম। হঠাৎ ফোন, পরের দিনই অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে। ওখানে উন্মুক্ত সব সময় বলত, ‘জাদা সোচনেকা নেহি।’ তাই মাথায় কখনও নেতিবাচক চিন্তা আসেনি। দু’টো বল খারাপ করলে বকাঝকা তো দূর, টিমমেটরা এসে পিঠ চাপড়ে ঠাট্টা করে যেত।” টুর্নামেন্টে ১২ উইকেট নেওয়া রবিকান্তের মতে, কাপ জেতার ‘টার্নিং পয়েন্ট’ পাকিস্তান ম্যাচ। ওই ম্যাচে তিন উইকেট পান তিনি। কিন্তু ওই ম্যাচেই টের পেয়েছিলেন টেনশন কী জিনিস! “বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সময়ে স্বাভাবিক ছিলাম। ড্রেসিংরুমে ফিরে টেনশন হচ্ছিল। আমি তো ঘণ্টা খানেক নিজেদের ব্যাটিংই দেখিনি! ব্যাট হাতে নেমে বুঝলাম চাপ কী জিনিস!” ফাইনালের আগের রাতে টিম মিটিংয়ে চাপমুক্তির পথ বাতলান কোচ ভরত অরুণ। “ঠিক হয়, ম্যাচটা ফাইনাল হিসেবে ভাববই না। স্রেফ আরেকটা ম্যাচ। তবে ফাইনালে আরও ক’টা উইকেট পেলে ভাল লাগত।” |
রবিকান্তের আদর্শ ইশান্ত শর্মা। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে বেঙ্গালুরুর শিবিরে প্রস্তুতি ম্যাচে ইশান্ত তাঁদের বিরুদ্ধে খেলতে এলে তাঁর সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল। অনেক টিপস পেয়েছিলেন। শাহরুখ খানের ভক্ত রবিকান্ত অবশ্য আইপিএল খেলার থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ায়। “কেকেআরে সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই খেলব। তবে রঞ্জি, দলীপ খেলেই নিজেকে পোক্ত করতে চাই।” মা নির্মলা দেবী ততক্ষণে ছেলেকে খাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছেন। রবিকান্তের প্রিয় পোলাও, বিরিয়ানি। তাই সেগুলোই এ দিন বিশ্বজয়ী ক্রিকেটারের মা-র রান্নার মেনু। |