শুক্রবার থেকে বাকি সিরিজে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির প্রতিদ্বন্দ্বী অধিনায়ক কে?
ভ্রু কুঁচকে যদি পাল্টা বলা হয়, কেন রস টেলর, তা হলে বোধহয় ভুল হবে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্পিনের ফাঁসে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের হাঁসফাঁস করতে দেখে দেশ থেকে উড়ে এসেছেন ড্যানিয়েল ভেত্তোরি। চিন্নাস্বামীতে টিমের ‘ব্যাটন’ টেলরের হাতে থাকবে বটে, কিন্তু ড্রেসিংরুমে কিউয়িদের অলিখিত অধিনায়ক-কাম-মেন্টর-কাম-কোচ-কাম-ম্যানেজার, সবই ওই ছফুট তিন ইঞ্চির বাঁ-হাতি স্পিনার। স্বাভাবিক। নিউজিল্যান্ডের টালমাটাল অবস্থায় তাদের স্পিন বোলিং সামলানোর দীক্ষামন্ত্র স্বদেশি আর কে-ই বা দেবেন? |
তবে এই পর্যন্ত পড়ে যদি আবার মনে হয়, ভেত্তোরির উপস্থিতিতে ধোনি-শিবির ভ্যাবাচ্যাকা, তা হলেও ভুল হবে। বুধবার বেঙ্গালুরুর দুপুরে মাঠে ধোনিদের তিন ঘণ্টা পড়ে থাকার নির্যাস নিয়ে একটা লাইনই লেখা যায়: পাখির চোখ ‘ক্লিন সুইপ’! উরুর চোট সারিয়ে চেতেশ্বর পূজারা সম্পূর্ণ সুস্থ (প্রথম টেস্টে উইলিয়ামসনের শট লেগেছিল)। দ্রাবিড়ের শহর এই প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন দেওয়াল-কে দেখবে। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির নেটে সহবাগের ব্যাটের রুদ্রমূর্তি দেখে মাঠের ধারে উপস্থিত সাংবাদিককুল যে ভাবে পিঠটান দিল (বল থেকে বাঁচতে), অশ্বিন যে ভাবে নিজের স্পিন-মন্ত্র ঝালিয়ে নেওয়ার বদলে ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকলেন সব কিছুর পাশে ফুরফুরে শব্দটাই সবচেয়ে জুতসই।
সন্ধেটাও কি কম বর্ণময়? টিম হোটেলের এক অনুষ্ঠানে হাজির ভারতীয় ক্রিকেটের অতীত থেকে বর্তমান। অজিত ওয়াড়েকর থেকে সচিন-রাহুলকে ছুঁয়ে একেবারে সোজা উন্মুক্ত চন্দ-এ শেষ। সচিন বলছিলেন, কী ভাবে কোচ ওয়াড়েকরের পিছনে লাগতেন। সঙ্গে ‘লিটল মাস্টারে’-এর সংযোজন, “আমাদের পর্যায়ে কোচকে কভার ড্রাইভ শেখাতে হয় না। বন্ধু হতে হয়। ওয়াড়েকর স্যরের থেকে যেটা পেয়েছি।” আর তাঁর একশো সেঞ্চুরির রেকর্ড কে ভাঙবে? সচিনের এ বার ছোট্ট জবাব, “চাইব কোনও ভারতীয়ই ভাঙুক।” দ্রাবিড় আবার মুগ্ধ পূজারাকে দেখে। বলে ফেললেন, “ওর ব্যাটের হাত যে বেশ ভাল, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই বুঝেছিলাম। উপ্পলের ইনিংসটা তো দুর্ধর্ষ।” বিরাট কোহলি বুঝে উঠতে পারছেন না উন্মুক্ত চন্দ-কে নিয়ে ঠিক কী বলা উচিত। “দিল্লির হয়ে ওর অভিষেক মনে আছে। কী মার না মেরেছিল পঞ্জাবকে।” পাশে দাঁড়ানো উন্মুক্ত লজ্জায় মাথা চুলকোচ্ছেন। কেউ কেউ আবার তারই মধ্যে খোঁজ নিলেন যুবরাজ কবে ফিরবেন ‘অর্জুন’ নিয়ে। যা খবর, বৃহস্পতিবার ফিরছেন যুবি।
কোথাও টেনশনের বলিরেখা নেই। শুধু কেএসসিএ প্রেসিডেন্ট অনিল কুম্বলে বাদে। যাঁর টেনশন বেঙ্গালুরুর আকাশ নিয়ে। কখনও ঝিরঝিরে, কখনও বৃষ্টি নামছে মুষলধারায়। পিচ কিউরেটর নারায়ণ রাজুকে করুণ গলায় বলতে হচ্ছে, “সব দিক ভেবেচিন্তে পিচ তৈরি করছিলাম। বৃষ্টির জ্বালায় শুকোতেই পারছি না।” ‘ভেবেচিন্তে পিচ তৈরি’-র নিগূঢ় অর্থ ধরা কঠিন নয়। হায়দরাবাদের মতোই ঘূর্ণি হচ্ছে। আর সেই পরিণতি আটকাতে ভেত্তোরির সাততাড়াতাড়ি বেঙ্গালুরু চলে আসা। কথা ছিল চোট সারিয়ে দ্বিতীয় টেস্টের পর আসবেন। কিন্তু হায়দরাবাদ টেস্টের পরের দিনই ঢুকে পড়েছেন নিউজিল্যান্ড শিবিরে। বল করার অবস্থায় এখনও নেই। কিন্তু স্পিনের বিরুদ্ধে পায়ের নড়াচড়া কী হওয়া উচিত, দেখিয়ে দিলেন টেলরদের। প্র্যাক্টিস শেষে ভেত্তোরি বলছিলেন, “চোট আছে বলে টেস্টে নেই। টি-টোয়েন্টি থেকে নামব। কিন্তু টিমের যা অবস্থা, আগেই আসতে হল।” রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলেন বলে চিন্নাস্বামীর মাঠের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে। আর কিউয়িরা যে ভেত্তোরির ওপর কতটা ভরসা করছে, বোঝা গেল পেসার ডাগ ব্রেসওয়েলের মন্তব্যে, “ড্যান এসেছে বলে কিছুটা নিশ্চিন্ত। আগের টেস্টের চেয়ে ভাল খেলার চেষ্টা করব।” ‘বলা’ আর ‘করা’-র মধ্যে কতটা তফাত থাকে, সেটাই শুধু দেখার। |