|
|
|
|
পাটকে হারিয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বাদাম ও তিল চাষ |
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
ক্রমাগত ‘লোকসানে’র মুখে পড়ে পাট চাষ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন আরামবাগের চাষিরা। পরিবর্তে ‘অর্থকরী ফসল’ হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে বাদাম এবং তিল চাষ।
শ্রমিক অমিল, চাষের খরচ বাড়া, জলের অপ্রতুলতা এবং ‘ন্যায্য’ দাম নিয়ে ক্ষোভের কারণে পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন মহকুমার চাষিরা। পাঁচ বছর আগে মহকুমায় পাট চাষ হত সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। কমতে কমতে চলতি বছরে তা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৬৮ হেক্টরে। এই সময়ে বাদাম চাষ প্রায় ৮ হাজার হেক্টর থেকে বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৯ হাজার হেক্টরে। তিল চাষ প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে।
পাট চাষের সমস্যাগুলি যে ভাবে ঘনীভূত হচ্ছে, তাতে মহকুমায় পাট চাষের পরিমাণ আরও কমবে বলে আশঙ্কা চাষিদের। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন মহকুমা কৃষি দফতরের আধিকারিকেরাও। অবশ্য একই সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, নানা ভাবে চাষিদের উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে।
মহকুমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয় পুড়শুড়ায়। চলতি বছরে শুধু পুড়শুড়াতেই চাষ হয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে। এর পরে যথাক্রমে আসে খানাকুল-১ ব্লক, খানাকুল-২ ব্লক, আরামবাগ ব্লক এবং গোঘাট ব্লক। কিন্তু সর্বত্রই পাট চাষ কমে সেই জায়গা দখল করেছে বাদাম বা তিল চাষ।
কোথায় সমস্যা?
পাট চাষিরা জানাচ্ছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মহকুমায় সর্বত্র পাট কেনার ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। দূরত্বের কারণে তারকেশ্বর ব্লকের চাঁপাডাঙায় সরকারি গুদামে গিয়ে অনেকেই পাট বিক্রি করতে চান না। বহু চাষি ফড়েদের কাছে পাট বিক্রি করেন। তা ছাড়া, গ্রামাঞ্চলে জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠির নির্ভরতাও এখন কমে যাচ্ছে। ফলে, ‘ন্যায্য’ দাম মিলছে না বলে অভিমত চাষিদের। এর উপরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প জনপ্রিয় হওয়ায় পাট চাষে প্রয়োজনীয় কৃষিমজুর মিলছে না।
তবে, জলের অপ্রতুলতাই পাট চাষে সবচেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে অভিমত চাষিদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় প্রয়োজনের সময়ে পাট পচানোর জল মিলছে না। ফলে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষ। পাট চাষ শুরু হয় এপ্রিল মাসে। পাট কাটা হয় জুলাইতে। এ বছর পাট পচিয়ে কাচার জন্য জলের অভাবে অগস্ট মাসে বিক্ষিপ্ত ভাবে পাট কাটা শুরু হয়েছে। এতে পাটের আঁশের গুণমান যথাযথ থাকবে না। তা ছাড়া, এখন পাটের গুণমান ঠিক রাখতে একাধিকবার সেচ দিতে হয়। একই সমস্যা কাটার সময়েও। ফলে, খরচ বেড়ে যায়। গুণমান ঠিক না থাকলে পাটের দাম মেলে না।
পুড়শুড়ার রসুলপুরের গ্রামের পাট চাষি ভরত মণ্ডল বা খানাকুলের ধারাশিমুল গ্রামের কার্তিক রায়ের বক্তব্য, “বিঘাপ্রতি পাট চাষে খরচ হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। ৪ কুইন্টাল ফলন হলে তবেই কিছু লাভ থাকে। কিন্তু নানা সমস্যায় এখন চাষ করে লোকসানই হচ্ছে। আগে এত সমস্যা হত না।” মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “কম খরচে উন্নত প্রথায় পাট চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশ চাষি চিরাচরিত প্রথা থেকে বেরোতে চাইছেন না। চাষিদের নানা ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।” কৃষি বিপণন দফতরের মহকুমা আধিকারিক ভবেশ দাস বলেন, “চাষিরা যাতে হাতের কাছে পাট বিক্রি করতে পারেন এবং ন্যায্য দাম পান, সে ব্যাপারে রাজ্য স্তরে পরিকল্পনা চলছে।”
কিন্তু যে ভাবে মহকুমায় বাদাম ও তিল চাষের এলাকা বাড়ছে, তাতে পরিষ্কার, অর্থকরী ফসল হিসেবে মহকুমায় পাটের গুরুত্ব কমছে। চাষিরা জানিয়েছেন, এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা। ফসল উঠতে সময় লাগে সাড়ে তিন মাস। এক বিঘা জমি থেকে গড়ে সাড়ে তিন কুইন্টাল বাদাম মেলে। দাম পাওয়া যায় কুইন্টালপ্রতি ২৪০০ টাকা। অন্য দিকে, এক বিঘা জমিতে তিল চাষের খরচ প্রায় তিন হাজার টাকা। ফসল ওঠে তিন মাস বাদে। এক বিঘা জমি থেকে প্রায় দেড় কুইন্টাল তিল মেলে। দাম পাওয়া যায় কুইন্টালপ্রতি ৪ হাজার টাকা। দু’টি চাষের ক্ষেত্রেই জলের সমস্যা নেই বললেই চলে। সারের প্রয়োজনও কম হয়। |
|
|
|
|
|