|
|
|
|
লাফিয়ে বেড়েছে ভাড়া, বিপাকে যাত্রীরা |
তাপস ঘোষ • কলকাতা |
আঞ্চলিক পরিবহণ বোর্ড, পুলিশ বা সংগঠন কোনও পক্ষেরই অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে একতরফা ভাবে ভাড়া বাড়িয়ে চুঁচুড়া এবং ত্রিবেণীর চারটি রুটে যাত্রী পরিবহণ করছেন অটো-চালকেরা। আচমকা এই ভাড়াবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। এ নিয়ে অটো-চালকদের সঙ্গে তাঁদের বিবাদও হচ্ছে। অটো-চালকেরা যাতে বর্ধিত ভাড়া নিতে না পারেন, সে ব্যাপারে অভিযান চালানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
বেশ কিছু দিন ধরেই চুঁচুড়া-ত্রিবেণীতে এলপিজিতে অটো চলে। প্রশাসনিক তৎপরতার জন্য অগস্ট মাসের গোড়া থেকে অটোতে পিছনে তিন জন, সামনে চালকের পাশে এক জনকে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে, চুঁচুড়া কোর্ট-চুঁচুড়া স্টেশন, চুঁচুড়া কোর্ট-ত্রিবেণী বা চুঁচুড়া কোর্ট-হুগলি স্টেশন এই তিনটি রুটে বেড়ে গিয়েছে অটো-ভাড়া। অটোস্ট্যান্ডগুলিতে এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। তবে, প্রতিটি অটোর সামনের কাচের এক পাশে ছোট কাগজে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা লাগানো হয়েছে। তাতে কোনও সিলমোহর নেই।
চুঁচুড়া কোর্ট-চুঁচুড়া স্টেশনের মধ্যে সপ্তাহখানেক আগে পর্যন্ত যাত্রীপিছু ৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হত। এখন নেওয়া হচ্ছে ৭ টাকা। চুঁচুড়া কোর্ট-ত্রিবেণী রুটে আগে যাত্রীপিছু নেওয়া হত ১২ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ১৮ টাকা। ভাড়া বেড়েছে চুঁচুড়া কোর্ট-হুগলি স্টেশন রুটেও। ৭ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা। চুঁচুড়া কোর্ট থেকে ব্যান্ডেল স্টেশন যেতে আগে ৮ টাকা নেওয়া হত। এখন নেওয়া হচ্ছে ১২ টাকা। যা বেআইনি বলে অভিমত প্রশাসনের। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
আচমকা এ ভাবে ভাড়া বাড়ানোর ফলে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। শ্রীরামপুরের বাসিন্দা, চুঁচুড়ার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী অজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অফিসে যেতে ট্রেন থেকে নেমে অটো ধরি। কয়েক দিন ধরে দেখছি ভাড়া বেড়ে গিয়েছে। চালকেরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়েছেন। মেনে নেওয়া ছাড়া আর তো কোনও উপায় দেখছি না।” চন্দননগরের বাসিন্দা সুষমা মল্লিক ত্রিবেণীতে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি জানান, অটোভাড়া অস্বাভাবিক বেড়েছে। সব সময় ট্রেকার ঠিকমতো পাওয়া যায় না বলে অটো ধরেই যেতে হয়। ভাড়া বাড়ানোর একটা সীমা থাকা দরকার। এর কোনও প্রতিকার হবে বলে আমার আশা নেই।”
চুঁচুড়া কোর্ট থেকে বাঁশবেড়িয়া হয়ে ত্রিবেণী যাতায়াতের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই অঞ্চলের পরিবহণ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। বাস চলে না। কলেজ, স্কুল, অফিসে যাতায়াত করতে হলে অটো বা ট্রেকার ছাড়া বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই। অটোভাড়া বাড়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে এই অঞ্চলের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, বর্ধিত ভাড়া না দিতে পারলে কিছু চালক নানা কটূক্তি করছেন।
ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে অটো-চালকদের বক্তব্য, এ ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোনও পথ ছিল না। চুঁচুড়া কোর্ট-ত্রিবেণী রুটের অটোচালক শেখ আকবর বলেন, “প্রশাসনের চাপে অটোতে এখন পিছনে তিন জন এবং সামনে এক জনকে নিতে হয়। ফলে, আমাদের আয় কমে গিয়েছে। বাধ্য হয়েই আমরা সেই ক্ষতি পোষাতে ভাড়া বাড়িয়েছি।” একই যুক্তি দেখিয়ে চুঁচুড়া কোর্ট-চুঁচুড়া স্টেশন রুটের অটোচালক বাপি দাস বলেন, “যাত্রী কমে যাওয়ায় এখন জ্বালানি গ্যাসের খরচ উঠছে না। সেই কারণে ভাড়া বাড়াতে হয়েছে।” |
চুঁচুড়ায় অটোর দৌরাত্ম্য |
রুট |
ছিল |
হয়েছে |
চুঁচুড়া কোর্ট-চুঁচুড়া স্টেশন |
৫ টাকা |
৭ টাকা |
চুঁচুড়া কোর্ট-ত্রিবেণী |
১২ টাকা |
১৮ টাকা |
চুঁচুড়া কোর্ট-হুগলি স্টেশন |
৭ টাকা |
৯ টাকা |
চুঁচুড়া কোর্ট-ব্যান্ডেল স্টেশন |
৮ টাকা |
১২টাকা |
|
অথচ, অটো-চালকদের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারে সিটু প্রভাবিত ‘হুগলি জেলা অটো ইউনিয়ন’। ওই সংগঠনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনুপ মণ্ডল বলেন, “হঠাৎ করে চুঁচুড়র বিভিন্ন রুটে চালকেরা অটোর ভাড়া বাড়িয়েছেন। আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। আরটিও বোর্ডেরও এ ব্যাপারে কোনও অনুমোদন নেই। এটা বেআইনি। সংগঠনে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বর্ধিত ভাড়া পুরোপুরি বেআইনি বলে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হুগলির আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সৈকত দাস। তিনি বলেন, “অটোর ভাড়া বাড়ানোর জন্য আরটিও বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। তা নেওয়া হয়নি। এটা বন্ধ করতে অভিযান চালানো হবে। প্রয়োজনে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চন্দননগর পুরসভার মেয়র তথা আরটিও বোর্ডের সদস্য রাম চক্রবর্তী বলেন, “অনুমোদন ছাড়া এ ভাবে ভাড়া বাড়িয়ে বেআইনি ভাবে অটো চালালে প্রশাসনিক ভাবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজনও। মঙ্গলবার বর্ধিত ভাড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে চুঁচুড়া, ত্রিবেণীর বিভিন্ন এলাকায় অটো-যাত্রীদের সতর্ক করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের এটা চক্রান্ত। আমরা তা হতে দেব না। বেআইনি ভাবে ভাড়া বাড়ানো বন্ধ করতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|