|
|
|
|
অরক্ষিত ক্রসিংয়ে বিপদ এড়ানোর বাধা অর্থাভাব |
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
নয় নয় করেও ওদের সংখ্যা এখন প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি। আর ওদের প্রত্যেকেই সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। প্রতি বছর গড়ে ১৫০টি মানুষ ওদের শিকার। স্মারকলিপি, অবরোধ, বিক্ষোভ সবই হয়েছে
ওদের বিরুদ্ধে। প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি। তবু ওরা রয়েই গিয়েছে।
এই ঘাতকের নাম প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং। রেল মন্ত্রকের হিসেব, দেশে বছরভর যত লোক রেল দুর্ঘটনার শিকার হন, তার ৪৫ শতাংশের জন্যই দায়ী ওরা। প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিংয়ের জন্য বছরে মৃত্যু হচ্ছে গড়ে অন্তত ১৫০ জনের। রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে রেল মন্ত্রক যে-কাকোদকর কমিটি তৈরি করেছিল, তারা অবিলম্বে সব প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং তুলে দেওয়া কিংবা সেখানে কর্মী নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটে সেই কাজটা তারা করে উঠতে পারেনি বলে জানিয়েছে রেল।
এক পদস্থ রেলকর্তা জানান, প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিংগুলির অন্তত ৫০ শতাংশের জন্য সাত হাজার পদ মঞ্জুর করেছে রেল বোর্ড। কিন্তু সব পদে এখনও লোক নেওয়া যায়নি। কাকোদকর কমিটির সুপারিশ মেনে কয়েকটি লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে দিয়ে আন্ডারপাস বা উড়ালপুলের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনাই সার। তা রূপায়ণের মতো তহবিলই নেই রেলের। তাই আটকে সব কাজ। |
|
রেললাইনের মৃত্যুফাঁদ |
রেল সূত্রের খবর, সারা দেশে মোট ৩২ হাজার ৭৩৫টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। তার মধ্যে ১৪ হাজার ৮৯৬টি অরক্ষিত। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের নিজের রাজ্যের অবস্থাটা কী? পূর্ব রেলে রক্ষিহীন লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৩০৫। দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ৮১৮। পূর্ব রেল বলছে, এ বছর এখনও পর্যন্ত তাদের এলাকায় প্রহরাবিহীন লেভেন ক্রসিংয়ের জন্য কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলে গত বছর দিঘা লাইনে একটি দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ছ’জনের মৃত্যু হয়। এ বছর প্রাণ হারিয়েছেন মাত্র এক জন। কিন্তু প্রতিটি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে যে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই দুই রেলের আধিকারিকেরা।
প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং বন্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে রেল?
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী জানান, এই রেলের রক্ষিহীন লেভেল ক্রসিংয়ের কয়েকটিতে কম উচ্চতার আন্ডারপাস গড়া হচ্ছে। কিছু গেটে রক্ষী মোতায়েন করার কাজ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার জানান, ইতিমধ্যে প্রহরী বসানো হয়েছে ৬৬টি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে।
যেখানে এখনও রক্ষী বসানো যায়নি, সেখানে যাত্রী সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা থাকে কি?
গ্রামাঞ্চলে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলিতে একটি করে ছোট বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েই দায়িত্ব সারা হয়। বৃষ্টিতে অনেক সময়েই তা ধুয়ে যায়। কিছুই পড়া যায় না। স্থানীয় মানুষ বিষয়টি জানেন বলে তাঁদের ক্ষেত্রে তেমন বিপদ ঘটে না। কিন্তু বাইরে থেকে আসা যে-কেউই ওখানে যে-কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। লেভেল ক্রসিং পেরোনোর আগে একটু দাঁড়িয়ে দু’দিক ভাল ভাবে দেখে নেওয়াটাই দস্তুর। কিন্তু সতর্কতার সেই প্রাথমিক পাঠ না-মেনে তাড়াহুড়ো করে ক্রসিং পেরোতে যান অনেকেই। তখনই বিপদের আশঙ্কা থাকে। |
|
মোকাবিলার চেষ্টায় সাবওয়ে |
ওই সব জায়গায় অন্য কোনও রকম বিপদসঙ্কেতের ব্যবস্থা করা হয় না কেন? রেলকর্তাদের কথায়, এর আগে রেলের তরফে দুর্ঘটনা রুখতে বিজ্ঞাপন, হোর্ডিং ছাড়াও মোবাইলে এসএমএস দেওয়া থেকে শুরু করে ‘ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট ওয়ার্নিং ডিভাইস’ নামে একটি যন্ত্র বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গা থেকেই ওই যন্ত্র চুরি হয়ে যায়। তার পরে ‘গেট ওয়ার্নিং ডিভাইস’ নামে অন্য একটি যন্ত্র আনা হয়। কিন্তু সেটিও তেমন কার্যকর হয়নি। ফলে সেগুলি বাদ দিয়ে উড়ালপুল আর আন্ডারপাস তৈরির কথা ভাবা হয়। কিন্তু রেলে তীব্র অর্থসঙ্কটের কারণে সেই পরিকল্পনাও এখন অথৈ জলে।
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের বিপদ ঠেকানোর কী হবে?
রেল বোর্ডের খবর, উড়ালপুলের বিষয়টি সরিয়ে রেখে ওই সব লেভেল ক্রসিংয়ে এখন কম উচ্চতার সাবওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে খরচ অনেক কম হবে। সুফলও তাড়াতাড়ি মিলবে বলে রেলের আশা। রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে সকাল ৮টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটে সব চেয়ে বেশি। কোন কোন লেভেল ক্রসিং বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ, সেই বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়ে ওই সময়ে প্রহরার ব্যবস্থা করলে প্রাণহানি ও খরচ দু’টোই কম হত।”
সুভাষবাবুর এই প্রস্তাব রেল খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন রেল বোর্ডের এক সদস্য। |
|
|
|
|
|