|
|
|
|
কাসভের ফাঁসি বহালই রইল সুপ্রিম কোর্টে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সুপ্রিম কোর্টেও ‘বাঁচতে’ পারল না ২৬/১১-র একমাত্র জীবিত জঙ্গি। ফাঁসির সাজাই বহাল রইল আজমল আমির কাসভের।
নিম্ন আদালত তাকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল ২০১০-এর ৬ মে। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বম্বে হাইকোর্টও সেই রায় বহাল রাখে। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কাসভের আর্জি ছিল, মৃত্যুদণ্ডের বদলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হোক। কিন্তু সেই আর্জি আজ খারিজ হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আফতাব আলম এবং বিচারপতি সি কে প্রসাদের বেঞ্চে।
ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার দায়ে কাসভকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারপতিরা বলেছেন, হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোনও রাস্তা নেই। বিচারপতিদের সাফ কথা, “হামলার ছক যে পাকিস্তানেই হয়েছিল, পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে সে দেশের কিছু লোক যে হামলার প্রশিক্ষণ পেয়েছিল এবং আবেদনকারী (কাসভ) যে মুম্বইয়ে হামলা চালিয়েছিল, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত বললেও কম বলা হয়।”
কাসভ-মামলার সঙ্গে প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছিল যাঁর নাম, সেই বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি উজ্জল নিকম আজ বলেন, “যত দ্রুত কাসভের ফাঁসি কার্যকর করা উচিত, যাতে জঙ্গিদের কাছে এই বার্তা যায়, যে আইন আইনের পথে চলবে।” মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে নজিরবিহীন নিরাপত্তায় বন্দি ২৫ বছরের কাসভের সামনে আপাতত একমাত্র রাস্তা, সুপ্রিম কোর্টের উচ্চতর বেঞ্চে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা। বম্বে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে তার বিশেষ অবকাশকালীন আবেদনে কাসভ দাবি করেছিল, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে সে যুক্ত নয়। তাকে ‘রোবটের মতো’ চালিত করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় থেকে তাকে আইনজীবী দেওয়া হয়নি। কাজেই তার ন্যায্য বিচার হয়নি। আদালতে দোষ স্বীকারও করানো হয়েছে জোর করে। সর্বোপরি, তার অল্প বয়সের কথা বিবেচনা করে তাকে যেন মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কিন্তু এই সব যুক্তিই খারিজ হয়ে গিয়েছে। বিচারপতিরা বলেছেন, “কাসভ যে স্বীকারোক্তি করেছে, তার কিছু অংশ ছাড়া বাকিটা সে স্বেচ্ছায় করেছে। মামলা চলাকালীন যদি তাকে আইনজীবী দেওয়া না হত, সে ক্ষেত্রে বিচারপদ্ধতিকে ‘কলঙ্কিত’ বলা যেতে পারত। কিন্তু শুধু মামলা শুরুর আগের সময়টুকুতে আইনজীবী দেওয়া যায়নি বলে ওই অভিযোগ করা যায় না।” সুপ্রিম কোর্টে কাসভের কৌঁসুলি ছিলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী রাজু রামচন্দ্রন। কাসভের তরফে যুক্তিগুলি তুলে ধরতে তাঁকে ‘বিশেষ পরামশর্দাতা’ নিয়োগ করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। রামচন্দ্রন আজ বলেছেন, “আদালতের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি। আমাকে যাবতীয় যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ‘বিশেষ পরামশর্দাতা’ হওয়াটা সম্মানের। যথাসাধ্য করেছি। দেশের আইন ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত।” মহারাষ্ট্র সরকারের কৌঁসুলি তথা প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের গলাতেও একই সুর। তাঁর বক্তব্য, “ভারতের গর্ব করা উচিত যে, গণতন্ত্রে আমরা প্রত্যেক অভিযুক্তকে তার বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দিই।”
সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোনোর পরেই অবশ্য দিল্লি-মহারাষ্ট্র নির্বিশেষে রাজনীতিকরা কাসভের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে সরব হয়েছেন। মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আর পাটিল যেমন জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব কাসভের ফাঁসি কার্যকর করার ব্যাপারে কেন্দ্রকে আর্জি জানাবেন তাঁরা। রাজধানীতে একসুর কংগ্রেস-বিজেপি দুই শিবিরই। এক দিকে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ, অন্য দিকে বিজেপির মুখতার আব্বাস নকভি দু’জনেই ‘অবিলম্বে’ কাসভের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেও মহারাষ্ট্রের নেতা। কাসভ ক্ষমাভিক্ষা করলে যাতে বিষয়টির ন্যূনতম সময়ে নিষ্পত্তি হয়, সে ব্যাপারে সরকার যা করণীয় করবে বলে জানিয়েছেন শিন্দে। পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া ২৬/১১-র অন্য অভিযুক্তদের সাজা দিতে পাক সরকারকেও আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
আগামিকাল তেহরানে নির্জোট সম্মেলনের ফাঁকে পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ আজ কাসভ-মামলার রায় ঘিরে পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়িয়েছেন। কৃষ্ণ বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট ভারতে আবেদনের সর্বোচ্চ ক্ষেত্র। তারা কিছু বললে সেটাই আইন হয়। এই বিষয়টি যে পাকিস্তানের চোখ এড়াবে না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।”
তবে কাসভের সাজা বহাল থাকা যদি মহারাষ্ট্র সরকারের ‘জয়’ হয়, তার পাশাপাশি অস্বস্তির উপাদানও মজুত রয়েছে আজকের রায়ে। ২৬/১১-র ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত দুই ভারতীয় ফাহিম আনসারি এবং সাবাউদ্দিন আহমেদ শেখকে অতিরিক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্ট। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় মুম্বই পুলিশ। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায়ই বজায় রেখেছে। উজ্জ্বল নিকম এই প্রসঙ্গে বলেন, “আনসারি ও সাবাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য জোগাড় করা যায়নি ঠিকই। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, ‘অপ্রতুল’ প্রমাণ এবং একেবারেই প্রমাণ না পাওয়া দু’টো এক ব্যাপার নয়।” |
|
|
|
|
|