|
|
|
|
এনডিএ আমলের কলঙ্ক খুঁড়ে বিজেপি-বধে সনিয়া |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে বাজপেয়ী জমানার কবর খুঁড়তে নেমে পড়ল কংগ্রেস। কৌশল এই যে, বিজেপি ইট ছুড়লে সে ক্ষেত্রে তাদেরও পাটকেল খেতে হবে। অন্য দিকে নিজেদের অবস্থানে অনড় বিজেপি শিবির। দলের পক্ষ থেকে আজ ফের জানানো হয়েছে, কয়লা কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত সংসদ চলার কোনও প্রশ্নই নেই।
কংগ্রেস নেতৃত্ব আজ এনডিএ আমলের কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে অনিয়মের দৃষ্টান্ত তুলে ধরার পাশাপাশি অরুণ জেটলি, জর্জ ফার্নান্ডেজরা সেই আমলে সিএজি-র সমালোচনায় কী-কী বলেছিলেন সে প্রসঙ্গও টানেন। সংশয় নেই বিজেপি-র বিরুদ্ধে এই প্রতি-আক্রমণে সনিয়া গাঁধীই নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সনিয়া শুধু সক্রিয় নন, তার থেকেও বেশি। তিনি বুঝতে পারছেন, স্পেকট্রাম কাণ্ডে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়ে ভুল করেছিল দল। তাই দলের সব নেতা-মন্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘গো ফর কিল।’ কয়লা বণ্টন নিয়ে বিজেপি আমলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচার ঝাঁপাতে বলা হয়েছে কেন্দ্রে নেতা-মন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিদের। যাতে কয়লা প্রশ্নে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে না পারে বিজেপি।
পাল্টা আক্রমণের এই লড়াইয়ে সনিয়ার সেনাপতিরা হলেন কপিল সিব্বল, সলমন খুরশিদ, ভি নারায়ণ স্বামী, অম্বিকা সোনি ও শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল। গত কাল রাতে কংগ্রেসের ‘ওয়ার-রুম’ বৈঠকের পর আজ সাংবাদিক বৈঠক করে সিব্বল বলেন, বাজপেয়ী জমানায় সেন্টুর হোটেল বিলগ্নিকরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল সিএজি, তখন সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী অরুণ শৌরি বলেছিলেন, “নির্বোধের মতো সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে অঙ্ক কষেছে সিএজি।” আর অরুণ জেটলির যুক্তি ছিল, “সিএজি এ দিক-ও দিক থেকে যা শোনে সে সবই রিপোর্ট লিখে দেয়।” সে সময় সিএজি-র গণনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেটলি সে সময় আর যা যা মন্তব্য করেছিলেন, সে সব তুলে ধরে সিব্বলের কটাক্ষ, “জেটলি-র হয় স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে, নয়তো উনি দ্বিচারিতা করছেন।” এরই পাশাপাশি এনডিএ আমলের কয়লা ব্লক বণ্টন সংক্রান্ত নথিপত্র প্রকাশ্যে এনে কংগ্রেস নেতৃত্ব এ দিন অভিযোগ করেন, ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কয়লা খনি বণ্টনের নিয়মনীতি ছিল না। মনমোহনের আমলেই সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করা হয়।
আক্রমণে ধার বাড়াতে তৎপর বিজেপি-ও। কয়লা কেলেঙ্কারি-সহ ইউপিএ জমানার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে শুক্রবার থেকে তিন দিন তারা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। বিজেপি-র মতে, দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে এখন দিশেহারা সরকার। শুধু সংসদের ভিতরে-বাইরে আক্রমণ শানানোর এটাই প্রকৃত সময়। বণ্টন হওয়া কয়লা ব্লকগুলি বাতিল করার সঙ্গে প্রকাশ জাভড়েকরের দাবি, “কোন যুক্তি ও পদ্ধতিতে ১৪২টি সংস্থাকে ব্লক বণ্টন করা হয়েছিল সরকার তা দেশবাসীকে জানাক।”
এর জবাবে কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব আজ স্পষ্ট জানিয়েছেন, কয়লা ব্লক বণ্টনের লাইসেন্স বাতিল করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ সেটা হবে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকেই আঘাত করা। কয়লা ব্লক নিলাম না করার পিছনে সরকারের একটি জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গিও কাজ করেছে। কয়লা ব্লক নিলামে তুললে বিদ্যুতের মাসুল, ইস্পাত, সিমেন্টের দাম বেড়ে যেত। তাতে আরও বাড়ত মুদ্রাস্ফীতির হার। সমস্যায় পড়তেন মানুষই।
এই যুক্তি মানতে নারাজ জাভড়েকররা। তাঁর অভিযোগ, “সরকারের উদ্দেশ্য ছিল যে কোনও ভাবে ওই সংস্থাগুলিকে কয়লা খনি পাইয়ে দেওয়া। একটি খনি ছাড়া বাকিগুলিতে খনন শুরুই হয়নি এখনও। তাই নিলাম হলে তা আর্থিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি বা বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধি হত বলে কংগ্রেস যে যুক্তি দিচ্ছে তার কোনও ভিত্তি নেই।” পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়ালের আত্মীয়দের নামে ৮টি কয়লা ব্লক বণ্টন করার যে অভিযোগ উঠেছে, তারও ব্যাখ্যা চেয়েছে বিজেপি। গত কাল তারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেসের সুবোধকান্ত সহায়ের একটি চিঠি ফাঁস করে সরব হয়েছিল বিজেপি। অভিযোগ ছিল, সুবোধকান্ত তাঁর ভাইয়ের জন্য কয়লা খনি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদ্বির করেছিলেন। আজ তার জবাবে সিব্বল আদালতের রায়ের একটি প্রতিলিপি প্রকাশ করেন। ওই রায়ে মামলাটিকে ভিত্তিহীন বলা হয়েছিল। উল্টে এ ধরনের মামলা করার জন্য অভিযোগকারীকে আড়াই লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। |
|
|
|
|
|