বদরুদ্দিনের ফেসবুক পেজের বিরুদ্ধে মামলা
সর্বদল বৈঠকে শান্তি ফেরানোর ডাক অসমে
নধকে ঘিরে হিংসা রোখা ও রাজ্যে শান্তি ফেরানোর চেষ্টার মধ্যেই নতুন করে ১০০ পরিবার ঘরছাড়া হল অসমে। যে কারণে বরপেটা জেলায় আজ নতুন তিনটি ত্রাণশিবির খুলতে হয়েছে। ফেসবুকে প্ররোচনামূলক বক্তব্য ছড়ানোর দায়ে এআইইউডিএফ প্রধান তথা ধুবুরির সাংসদ বদরুদ্দিন আজমলের ‘ফেসবুক পেজ’-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সিআইডি।
গুয়াহাটিতে এ দিনই সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও রাজ্যের মন্ত্রীদের একটি দল বৈঠকে বসে শান্তির জন্য একজোট হয়ে কাজ করার আবেদন জানিয়েছে। বৈঠকে যোগ দিয়েছিল বিপিএফ, বিপিপিএফ, জেলা কংগ্রেস, অগপ, সিপিআইএম, আক্রাসু, আবসু, এবিএমএসইউ, অল অসম ট্রাইবাল সংঘ, ট্রাইবাল ইয়ুথ লিগ, বড়ো মহিলা সঙ্ঘ। ভূমিধর বর্মণ, পৃথ্বী মাজি, হাগ্রামা মহিলারির মতে, বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। বৈঠকের পরে বোড়ো আঞ্চলিক পরিষদ (বিটিসি)-এর নেত্রী বিটিসি প্রধান হাগ্রামা মহিলারি জানিয়েছেন, ধুবুরি, চিরাং, কোকরাঝাড়ের ত্রাণ শিবিরে, ‘প্রকৃত ভারতীয়’দের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। তাঁর কথায়, “আজ থেকে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হল। কেবল উপযুক্ত প্রমাণ বা পরিচয়পত্র থাকা শিবিরবাসীদেরই গ্রামে ফেরানো হচ্ছে।”
হিংসার গ্রাসে গিয়েছে সর্বস্ব। বুধবার অসমের বরপেটা জেলার বেলতলায়। ছবি: পি টি আই
সরকারি সূত্রের খবর, আজ আরও ৭টি দেহ উদ্ধার হওয়ায় রাজ্যে সাম্প্রতিক হিংসার বলি বেড়ে দাঁড়াল ৯৫। বর্তমানে ২,৩৫,৫০০ জনেরও বেশি শরণার্থী রয়েছেন রাজ্যের ২১৬টি শিবিরে। পুনর্বাসন নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর ফের যৌথ বৈঠক ডাকা হয়েছে। অসম চুক্তি রূপায়ন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে চুড়ান্ত খসড়া প্রস্তাব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সবুজ সংকেত পেলেই কাজ শুরু হবে। দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে চলে আসা মানুষজনকে আবার কাজে ফেরার সুযোগ করে দিতে গুয়াহাটি থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার জন্য ১ সেপ্টেম্বর একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল। ওই ট্রেনটিই, ৪ সেপ্টেম্বর ফের বেঙ্গালুরু থেকে গুয়াহাটি ফিরবে। ট্রেন দু’টি চেন্নাই, বিজয়ওয়াড়া, বিশাখাপত্তনম, ভুবনেশ্বর, হাওড়া, নিউজলপাইগুড়ি ও রঙিয়া হয়ে যাতায়াত করবে।
হিংসা আগুনে জ্বলেছে বইও। বরপেটায়।
রাজ্যে আর এক বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে একের পর এক বনধ। এই সব বনধ যেমন হিংসা ছড়াচ্ছে, তেমনই পঙ্গু করে দিচ্ছে রাজ্যের অর্থনীতিকেও। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, আগামী এক মাস কোনও বনধ না ডাকার আবেদন জানিয়েছেন। গত কাল, আমসুর ডাকা বনধে চারটি জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর বাইরেও, শোণিতপুর, নগাঁও, মরিগাঁও, বরপেটা, শিবসাগর, যোরহাট, ডিব্রুগড়ে বনধ সমর্থকরা বাড়ি-দোকান-গাড়ি ভাঙচুর, মারধর করে, আগুন লাগিয়ে, ট্রেন আটকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। বনধে সব চেয়ে প্রভাবিত হয় বরপেটা। এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৪০ জন জখম হন। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ১০০ বনধ সমর্থক। প্রশাসন যখন ত্রাণ শিবির থেকে মানুষকে ফেরাবার জন্য সচেষ্ট, তখনই, গত কালের ঘটনার পরে, বরপেটা রোডে অন্তত ১০০টি পরিবারের জন্য তিনটি নতুন ত্রাণ শিবির খুলতে হয়। বরপেটার পাশাপাশি, তেজপুরেও জারি রয়েছে সান্ধ্য আইন। আজ নতুন কোনও হিংসার খবর মেলেনি। তবে, আধা সেনা সূত্রে খবর, বিজনিতে দুই ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।
বরপেটায় অগ্নিদগ্ধ বাড়িতে হতাশ মা-ছেলের বিলাপ। ছবি: পি টি আই
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ এ দিন গগৈকে ফোন করে পরিস্থিতি সামলাতে আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ রাখেন। হাঙ্গামা বাধাতে পারে এমন ব্যক্তিদের আগাম গ্রেফতার করারও পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যদিও এ দিনও রাজ্য সরকারের তেমন পদক্ষেপ নজরে পড়েনি। বড়োভূমিতে অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার বিশেষ উদ্যোগও চোখে পড়েনি। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, এখন এআইইউডিঅফ, এনডিএফবি বা বিপিএফ নেতাদের গ্রেফতার করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তবে এআইইউডিঅফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমলের নামে থাকা ফেসবুকের একটি ‘প্রোফাইল’-এর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ও সি ধারায় এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ১৫৩এ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। আজমল জানিয়েছেন, তিনি ওই প্রোফাইল তৈরি করেননি। প্রোফাইলের ‘আইপি-অ্যাড্রেস’ ও ব্যবহারকারীর পরিচয় জানতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছে সিআইডি।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের মন্ত্রী অকণ বরা, পৃথ্বী মাজি, টংকবাহাদুর রয়, হিমন্ত বিশ্বশর্মা এ দিন বড়ো স্বায়ত্বশাসিত জেলার পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। মন্ত্রী চন্দন ব্রহ্ম যান চিরাং। মন্ত্রী রকিবুল হুসেন ও দুই সংসদীয় সচিব ভূপেন বরা, রাণা গোস্বামী যান কোকরাঝাড়, গোসাইগাঁওয়ে। বড়োভূমি ও নামনি অসম সফরকারী সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল এ দিন কোকরাঝাড় সার্কিট হাউসে সব দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনেন। সেখানেই, বড়ো মহিলা সংগঠনের কাছে ত্রাণশিবিরে মানুষজনের দুর্দশার কথা শোনেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.