নারোড়া পাটিয়া হত্যাকাণ্ডে জেলে বজরং নেতাও, শাস্তি কাল
গুজরাত দাঙ্গায় দোষী মোদীর কাছের নেত্রী
নারোড়া পাটিয়া হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বর্তমানে বিজেপি বিধায়ক মায়া কোডনানি। পেশায় চিকিৎসক, মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত মায়া। গুজরাত দাঙ্গা সংক্রান্ত মামলায় এই প্রথম কোনও বিজেপি নেতা সরাসরি দোষী সাব্যস্ত হলেন। গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিশেষ আদালতের রায়ে মোদী সরকার কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে কংগ্রেস অবশ্য এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি হইচই করতে চাইছে না। রায়কে স্বাগত জানিয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ এ দিন বলেন, ‘‘এতে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে।” কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ যথারীতি বলেন, “গুজরাত দাঙ্গায় বিজেপির মন্ত্রী-নেতারা যে জড়িত ছিলেন, সেটাই আজ প্রমাণিত হয়ে গেল। নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশেই সব ঘটেছে।” রুটিনমাফিক মোদীর ইস্তফাও দাবি করা হয়েছে।
মায়া কোডনানি।
কিন্তু ওই পর্যন্তই। কংগ্রেস আসলে চাইছে না, এখন নতুন করে গুজরাতে কোনও ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটুক এবং তার ফলে নির্বাচনের আগে মোদী কোনও ভাবে লাভবান হোন। অন্য দিকে বিজেপি বরং এ দিন মায়ার সঙ্গে তাদের কিছুটা দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করেছে। গুজরাত সরকার একটা ব্যাপারেই জোর দিতে চাইছে যে, দাঙ্গার সময় মায়া মোটেই মন্ত্রী ছিলেন না। গুজরাত সরকারের মুখপাত্র জয়নারায়ণ ব্যাস এ দিন বলেন, “যখন ঘটনাটি ঘটেছিল, মায়া মন্ত্রী ছিলেন না। উনি এখন আমাদের দল থেকে নির্বাচিত বিধায়ক। কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত নন।”
ঘটনা হল, ২০০৭ সালে মোদী সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন মায়া। তার দু’বছর পরেই নারোড়া মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তখন মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি শুধু বিধায়ক পদেই আসীন। ২০০৯ থেকে জেলেই ছিলেন। এ বছর মে মাসে জামিনে মুক্তি পান। আজ রায় ঘোষণার পর আবার জেলেই যেতে হল তাঁকে। দোষীদের সকলকেই আজ সাবরমতী জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রায় শুনে আদালতেই কেঁদে ফেলেছিলেন ৫৭ বছরের মায়া।
মোদী নিজে বরাবর বলে এসেছেন, দাঙ্গায় তাঁর কোনও হাত ছিল না। যখনই গুজরাত দাঙ্গায় তাঁর ক্ষমা চাইবার কথা উঠেছে, তিনি সপাটে বলেছেন, ‘‘যে অপরাধ আমি করিইনি, তার জন্য ক্ষমা চাইতে যাব কেন?” ক’দিন আগেই একটি উর্দু দৈনিকের সাক্ষাৎকারে তিনি রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সুরে বলেছিলেন, অপরাধ প্রমাণ হলে তাঁকে যেন ফাঁসি দেওয়া হয়! গুলবার্গ সোসাইটি মামলায় মোদীকে ডেকেও পাঠিয়েছিল বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। কিন্তু দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ মেলেনি বলেই বিশেষ আদালতে জানিয়েছে তারা। কিন্তু এ বার মোদীর ঘনিষ্ঠ বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মোদী কি তাঁর দায় পুরোপুরি এড়াতে পারবেন? জয়নারায়ণ ব্যাস এ দিনও বলেন, মোদীর পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। “কংগ্রেস সব কিছুতেই মোদীর ইস্তফা চায়। বিভিন্ন মামলায় দোষী যাঁরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রয়েছেন, তাঁরা আগে ইস্তফা দিন!”
বাবু বজরঙ্গি
২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যার নিরিখে সব চেয়ে বড় গণহত্যার নজির গড়েছিল নারোড়া। ২০০২-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি গোধরার ঘটনার পর দিন এই হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারান ৯৭ জন। গুজরাতে বন্ধ ডেকেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। আমদাবাদের নারোড়া গাম আর নারোড়া পাটিয়ায় প্রচুর বন্ধ সমর্থক জমায়েত হয়েছিল। মায়া কোডনানি সে সময় নারোড়ারই বিধায়ক। এই জমায়েত থেকেই একটা বড় দল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা চালায়। দলের পুরোভাগে ছিলেন বাবু বজরঙ্গি, আর জনতাকে উস্কানি দিতে থাকেন মায়া। হামলাকারীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছিলেন তিনি। বজরঙ্গি পরে স্বীকার করেন, গোধরার ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ওই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা করেই ঘটানো হয়েছিল। আগে থেকেই মজুত করা হয়েছিল অস্ত্রশস্ত্র, দাহ্য পদার্থ। বজরঙ্গি বলেছিলেন, প্রতিশোধ নিতে পেরে নিজেকে রাণা প্রতাপ বলে মনে হচ্ছিল তাঁর।
নারোড়া পাটিয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার প্রথমে গুজরাত পুলিশের হাতে ছিল। ২০০৯-এ সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দল তদন্তের দায়িত্ব নেয়। অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে নারোড়ার তিন বারের বিধায়ক মায়াকেও গ্রেফতার করা হয়। শুনানিতে ৩২৭ জন সাক্ষী জানান, মায়া জনতাকে প্ররোচিত করেছিলেন। বিশেষ আদালতের রায়ে আজ মায়া এবং বজরঙ্গি-সহ মোট ৩২ জন দোষী সাব্যস্ত হলেন। ২৯ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এক জন ইতিমধ্যেই হেফাজতে মৃত। মোট ৬২ জন অভিযুক্তের মধ্যে বর্তমানে ১০ জন পুলিশ হেফাজতে এবং বাকিরা জামিনে মুক্ত রয়েছেন। মায়া এবং বজরঙ্গি ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৩০২ (খুন), এবং ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। শাস্তি ঘোষণা হবে পরশু। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির আইনজীবী শমসদ পাঠান বলেন, দোষীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানানো হবে।

নারোড়া পাটিয়া হত্যাকাণ্ড
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ গোধরায় সাবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে বন্ধ ডেকেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। উত্তর আমদাবাদের নিম্নবিত্ত সংখ্যালঘু এলাকা নারোড়া পাটিয়ায় সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যায় বন্ধ-সমর্থকরা জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে ছিল প্রচুর দাহ্য পদার্থ এবং ধারালো অস্ত্র।

সন্ধের মধ্যে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৭। অনেককেই স্রেফ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। নিহতদের অধিকাংশই শিশু, মহিলা এবং অশক্ত মানুষ যাঁরা পালাতে পারেননি।
পুরো ঘটনাটাই পূর্ব পরিকল্পিত বলে জানা গিয়েছিল পরে। নেতৃত্বে ছিলেন বজরং দলের নেতা বাবু বজরঙ্গি এবং নারোড়ার বিজেপি বিধায়ক মায়া কোডনানি। বজরঙ্গি পরে বলেছিলেন, গোধরার ‘প্রতিশোধ’ নিতে পেরে নিজেকে ‘রাণা প্রতাপে’র মতো মনে হচ্ছিল।

বজরঙ্গির বিরুদ্ধে ১৫ জন এবং মায়ার বিরুদ্ধে ১১ জন সাক্ষী দিয়েছেন। তাঁরা ১২০খ (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৩০২ (খুন) এবং ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তৎকালীন পুলিশ ইনস্পেক্টর কে কে মাইসোরওয়ালার বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য জমা পড়েছিল। কিন্তু তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.