অধস্তন এক কর্মী সুইসাইড নোটে তাঁকে দায়ী করে যাওয়ার পরেই কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। আবার সেই ‘ছুটি’ চলাকালীনই তাঁকে দেওয়া হল নতুন দায়িত্ব। বুধবার লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবেনবাবুকে ডিসি (সেন্ট্রাল)-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দিন নতুন পদে যোগও দিয়েছেন তিনি। নতুন ডিসি (সাউথ) হলেন ডিসি (সেন্ট্রাল) বিশাল গর্গ।
শনিবার পার্ক স্ট্রিট থানার এসআই কার্তিক চট্টোপাধ্যায় তাঁর সুইসাইড নোটে দেবেনবাবুকে ‘দায়ী’ করার পরে ওই আইপিএস অফিসারকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক ও শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু রবিবার জানান, মুখ্যমন্ত্রী মৃত পুলিশকর্মীর পরিবারকে যথাযথ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সোমবারেই মৃত এসআইয়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মেয়েকে চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে আসেন কমিশনার। তার পরেই এ দিন নতুন পদ দেওয়া হল দেবেনবাবুকে।
পুলিশের মতো বাহিনীতে ছুটি বাতিল হতেই পারে। কিন্তু কলকাতা পুলিশের সদর লালবাজারে প্রশ্ন উঠেছে, দেবেনবাবুকে তড়িঘড়ি ছুটি থেকে ফিরিয়ে এনে নতুন পদ দেওয়া হল কেন? যদি ফেরানোই হল, তাঁর পুরনো পদ দেওয়া হল না কেন? পুলিশের একাংশের ধারণা, ‘রাজনৈতিক চাপ’-এই দেবেনবাবুকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার। আবার একই কারণে তাঁকে ফিরিয়ে এনে দেওয়া হল নতুন পদ।
বাগুইআটির জ্যাংড়া এলাকার ফ্ল্যাটে কার্তিকবাবুর মৃতদেহ পাওয়া যায় শনিবার সকালে। সুইসাইড নোটে তিনি দেবেনবাবুর নাম লিখেছিলেন বলে জানায় বিধাননগর পুলিশ। তবে কার্তিকবাবুর পরিবারের কেউ দেবেনবাবুর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি। স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও কোনও মামলা শুরু করেনি পুলিশ। যদিও শনিবার রাতেই দেবেন্দ্রপ্রকাশকে ‘আর্নড লিভ’ (ইএল) বা অর্জিত ছুটি নিতে বলেন পুলিশ কমিশনার। শনিবার কার্তিকবাবুর দেহ উদ্ধারের আগেই অবশ্য ‘পারিবারিক কারণে’ ৩১ অগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বরের জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেছিলেন দেবেনবাবু। সিপি সেই ছুটি এগিয়ে নিয়েই তাঁকে ‘ইএল’ নেওয়ার নির্দেশ দেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর। তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ‘রাজনৈতিক চাপ’-এই সিপি এই ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বলে লালবাজারের খবর।
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে ডিসি (নর্থ) গৌরব শর্মাকে ফোন করে সিপি তাঁকে ১৫ দিনের জন্য ডিসি (সাউথ)-র কাজ দেখার নির্দেশ দেন। ডিসি (নর্থ)-র দায়িত্ব দেওয়া হয় দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নের ডিসি রবীন্দ্রনাথ সরকারকে। অথচ শনিবার রাতে দেবেনবাবুকে ৩০ দিনের ‘ইএল’ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সিপি। স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশমহলে জল্পনা শুরু হয়, দেবেনবাবুকে ঠিক কত দিন ছুটিতে থাকতে হবে ৩০ দিন না ১৫ দিন? ৩০ দিনই হোক বা ১৫, দেবেনবাবুকে ডিসি (সাউথ)-র পদে আদৌ ফিরিয়ে আনা হবে কি না, ওঠে সেই প্রশ্নও। পরে, সোমবার নিজের নির্দেশ ‘পাল্টে’ সিপি জানান, ৩০ নয়, ১৫ দিনের জন্যই ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে দেবেনবাবুকে। আবার মঙ্গলবার দেবেনবাবুর ছুটি ‘বাতিল’ করে সিপি তাঁকে নতুন দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রবিবার থেকে দেবেনবাবু অবশ্য কলকাতাতেই আছেন। |