লাল ফিতের ফাঁস কেটে অবশেষে দিনের আলো দেখতে চলেছে রাজ্যের ‘শো-কেস’ প্রকল্প ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার।
২০০৭ সাল থেকে চিপ ডিজাইনিং-এর বিশেষ পরিকাঠামো ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা দানা বেঁধেছে। কিন্তু মন্দা ও প্রশাসনিক গড়িমসির জেরে প্রকল্প ফাইলবন্দিই থেকে যায়। এবং সব শেষে তথ্যপ্রযুক্তি ও নগরোন্নয়ন দফতরের মতবিরোধ প্রায় শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছিল ১২০ কোটি টাকার প্রকল্পের কফিনে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর ‘ট্রান্সফার ফি’ সংক্রান্ত সেই বিতর্ক মিটে গিয়েছে।
চিপ ডিজাইনিং শিল্পের প্রধান পুঁজি মেধা সম্পদ। যে সম্পদের টানে সংশ্লিষ্ট শিল্পের প্রথম সারির সংস্থা মেন্টর গ্রাফিক্স সম্প্রতি রাজ্যে পা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই শিল্পে একরের পর একর জমির প্রয়োজন নেই। যে প্রয়োজন উৎপাদন শিল্পের ক্ষেত্রে এ রাজ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্যের এই মেধা সম্পদ ব্যবহার করে গোটা দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও সংশ্লিষ্ট শিল্প বড় হয়েছে। রাজ্যের শিল্পায়নের নতুন যুগে ১৯৯৪ সালে তাই এই মেধার ভিত্তিতেই শিল্প ও সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো গড়ে তোলার নীতি দানা বাঁধে। মেধাকে রাজ্যে ধরে রাখতেই অ্যানালিটিক্স হাব ও চিপ ডিজাইনিং-এর পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা। তবু এই পরিকাঠামো এখনও পরিকল্পনা স্তরে থেকে গিয়েছে । সংশ্লিষ্ট মহলের মতে অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে প্রয়োজন ছিল রাজ্যের সক্রিয় ভূমিকা।
সল্টলেকে সেক্টর ফাইভে প্রায় দু’একর জমির উপরে এই পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার কথা ছিল। নগরোন্নয়ন দফতর এই জমি তথ্যপ্রযুক্তি দফতরকে লিজে দেয়। এর পরে বেসরকারি সংস্থাকে সাব-লিজে জমি দেওয়ার কথা ছিল। জমি হস্তান্তরের প্রসঙ্গে দুই দফতরের মধ্যে ‘ট্রান্সফার ফি’ নিয়ে আলোচনা হয়। সেই অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি দফতর বেসরকারি সংস্থার আর্জি মেনে এককালীন ‘ট্রান্সফার ফি’ নিতে রাজি হয়। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে কাজ শুরুর নির্দেশও দিয়ে দেয় তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। তৈরি হয় সাব-লিজ ডিড। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে বেঁকে বসে নগরোন্নয়ন দফতর। তাদের দাবি ছিল, পরিকাঠামোর জায়গা অন্যান্য সংস্থাকে দেওয়ার সময় প্রতিবারই নির্মাণ সংস্থাকে ট্রান্সফার ফি দিতে হবে। এই শর্ত মানতে চায়নি বরাত পাওয়া সংস্থা। তাদের অভিযোগ ছিল, সে ক্ষেত্রে লাভে টান পড়বে। ফলে গোটা প্রকল্পই প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।
এই ফি নিয়ে দুই দফতরের মতান্তরে প্রকল্প থেকে প্রায় হাত গুটিয়ে নেয় বেসরকারি সংস্থা। আটকে যায় ‘সাব-লিজ ডিড’ সই। খোদ শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। দুই দফতরের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। অবশেষে নগরোন্নয়ন দফতর জানিয়েছে, প্রকল্পের বিশেষত্বের দিকটিকে গুরুত্ব দিয়ে এককালীন ‘ট্রান্সফার ফি’ নিতে রাজি তারা। ফলে পরিকাঠামোর জায়গা অন্যান্য সংস্থাকে দেওয়ার সময় প্রতিবার নির্মাণ সংস্থাকে ট্রান্সফার ফি দিতে হবে না। ১২০ কোটি টাকার প্রকল্পে ২৪ তলা বাড়িতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও গবেষণাগারের সুবিধার পাশাপাশি সংস্থাগুলি চিপ তৈরির প্রয়োজনীয় ‘সফটওয়্যার টুল’-ও ভাড়া নিতে পারবে। সে ক্ষেত্রে উৎপাদনের খরচও কমে যাবে। এই সব সুবিধার কথা জানিয়ে ক্যাডেন্স, কোয়ালকম, টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস, ইন্টেল-এর মতো সংস্থাকে বিনিয়োগের প্রাথমিক প্রস্তাবও দিয়েছিল রাজ্য। |