নির্বাচনী প্রচারের সময়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জর্জ রোমনি বলতেন, “আমার নির্বাচনী প্রচার ঠিক মিনি স্কার্টের মতো। সংক্ষিপ্ত, উন্মোচক।”
সেটা ১৯৬৮। ‘উন্মোচক’ প্রচার হাতিয়ার করে অবশ্য হোয়াইট হাউস দখল করতে পারেননি জর্জ। এখন ৪৪ বছর পরে, তাঁর ছেলে মিট রোমনির নিবার্চনী প্রচার সম্পর্কে ঠিক উল্টো কথা বলা হচ্ছে ‘লম্বা, ঢেউ খেলানো গাউনের মতো। অত্যন্ত দীর্ঘ। ভেতরে কী আছে, বোঝার কোনও উপায় নেই!’
আজ ফ্লোরিডার ট্যাম্পায় রিপাবলিকান দলের জাতীয় কনভেনশনে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পদপ্রার্থী হিসেবে মিট রোমনির নাম ঘোষণা করা হল। সেই রোমনি, যিনি গত ছ’বছরেরও বেশি সময় ধরে আস্তে আস্তে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন। অনেকেই ভাবেননি, রোমনি এত দূর এগোবেন। কিন্তু নিন্দুকদের থামিয়ে দিয়ে রোমনি এগিয়েই চলেছেন। |
২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ম্যাসাচুসেট্সের গভর্নর ছিলেন রোমনি। তখন বেশ কয়েকটি ‘সাহসী’ পদক্ষেপ করেছিলেন তিনি। যেমন গর্ভপাত সমর্থন, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ, দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্য বিমায় বিপুল ভর্তুকি, ইত্যাদি। কিন্তু ‘সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট রোমনি’ এখন তাঁর নির্বাচনী প্রচারে যে কথাগুলো বলছেন, তার সঙ্গে ‘গভর্নর রোমনির’ কাজের আকাশপাতাল তফাত। এতটা রাজনৈতিক ‘ভোলবদলে’ প্রবল অস্বস্তিতে বহু মার্কিন ভোটার। এমনকী, রিপাবলিকান দলের একটা বড়সড় অংশও।
অস্বস্তি আরও বাড়ছে কারণ রোমনি এখনও স্পষ্ট বলছেন না, ভেঙে পড়া মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তিনি কী করতে চান। আর ‘অর্থনীতি’ই যে এই নির্বাচনের একমাত্র বিবেচ্য বিষয়, তা প্রত্যেক মার্কিন ভোটদাতাই জানেন। রোমনির প্রচারপুস্তিকায় অবশ্য একটা ‘৫৯ দফা অর্থনৈতিক খসড়াপ্রস্তাব’ রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সেই ৫৯ দফার মধ্যে কাজের কথা নেই বললেই চলে। যে রোমনি এক বছর আগেও বলতেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আয়কর একই রাখা উচিত, তিনিই এখন দেশের সব চেয়ে বিত্তবান শ্রেণির আয়কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৮ শতাংশ করার পক্ষে সওয়াল করছেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্পের কড়া সমালোচনা করছেন। কিন্তু এক বারও বলছেন না, তাঁর নিজের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি কী রকম। রোমনির বিদেশনীতিও নানা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। যেমন, আমেরিকাবাসী ইহুদিদের মন পেতে তিনি প্রকাশ্যেই আরব দেশগুলির নিন্দা করছেন। এটা ভাল চোখে দেখছে না পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। |
বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে রোমনি অনেক সময়েই ‘চুপ থাকার’ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। জোরদার প্রচার নয়, নিচু গলাতেই কাজ সেরে ফেলতে চাইছেন তিনি। রোমনি-শিবিরের দাবি, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই ভোটারদের ওবামা-বিমুখ করে রিপাবলিকানদের দিকে ঠেলে দেবে। কিন্তু তিনি আসলে ঠিক কী চান, বা দেশের জন্য কী কী করতে প্রস্তুত, তা যত ক্ষণ রোমনি স্পষ্ট না বলছেন, তত ক্ষণ তাঁর উপর ভোটারদের আস্থা রাখা মুশকিল। বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, রোমনির পক্ষে ভোট যা পড়বে, তা মূলত রিপাবলিকান দলের নীতি বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী পল রায়ানের সমর্থনেই। ‘ইয়েস উই ক্যান। হ্যাঁ, আমরা পারি।’ এই স্লোগান দিয়ে মার্কিন ভোটারদের কাত করেছিলেন বারাক হুসেন ওবামা। রোমনি এখনও কোনও চটকদার স্লোগান রপ্ত করতে পারেননি। তবে আজ ট্যাম্পায় এক মনোগ্রাহী ভাষণ দেন মিটের স্ত্রী অ্যান। মার্কিন ভোটার, বিশেষত মহিলা ভোটারদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “ইউ ক্যান ট্রাস্ট মিট মিটকে আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন।”‘মিট, আপনি কীসে বিশ্বাস করেন’, ভোটারদের সেই প্রশ্নের জবাব এখনও অবশ্য মেলেনি! |