তিস্তা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়িত করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর আশা, এ ব্যাপারে শীঘ্রই দেশে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা সম্ভব হবে। বুধবার তেহরানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই মর্মেই আশ্বাস দিয়েছেন মনমোহন।
জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনকে উপলক্ষ করে মুখোমুখি বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি নিয়ে এ দিন কথা বলেন মনমোহন-হাসিনা। দু’দেশের মধ্যে প্রতিনিধি স্তরের আলোচনার পাশাপাশি একান্ত বৈঠকও করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য থেকে নিরাপত্তাআলোচনা হয়েছে সব বিষয় নিয়েই। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এই বৈঠকে বিশেষ ভাবে তিস্তা এবং সেই সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি দ্রুত রূপায়ণে মনমোহন সিংহকে অনুরোধ করেন হাসিনা। তাঁর দেশেও নির্বাচন এগিয়ে আসছে। তার আগে ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সই করা যে হাসিনা সরকারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, এ কথা ভারতও জানে।
মনমোহন আজ হাসিনাকে বলেছেন, বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে তাঁর এবং মমতার আলোচনা চলছে। সম্প্রতি মমতা ইউপিএ সমন্বয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি এলে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে তিস্তার জল সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট তৈরি হলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র। বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণও বিষয়টি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে কলকাতা যাবেন বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর। এখন ভরা বর্ষায় তিস্তায় জল বেশি। কোনও চুক্তি না থাকার জন্য এমনিতেই সেই বাড়তি জল বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের দিকে। এই ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এই সমস্ত বিষয়েই আজ সবিস্তার আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে। কথা হয়েছে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়েও। হাসিনাকে মনমোহন বলেছেন, ভারত এমন পদক্ষেপ করবে না যাতে বাংলাদেশকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়।
হাসিনার বক্তব্য, গত সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যথেষ্ট ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভারত যে বন্ধুভাবাপন্ন, এ ব্যাপারেও সংশয় নেই হাসিনা সরকারের। কিন্তু তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তির বিষয়টিই সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে আশঙ্কা সে দেশের নেতৃত্বের। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত যে নিরাপত্তা প্রশ্নে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছে, এ কথা আজ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছে নয়াদিল্লি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেও এই প্রসঙ্গে হাসিনা সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এ দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারত সফরে আসার কথা খালেদা জিয়ার। তার আগে সে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতি বজায় থাকাটা ভারত তথা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার প্রশ্নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। বৈঠকে বিনিয়োগ-সহ বিভিন্ন আর্থিক বিষয়েও সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ঢাকাকে।
|
গানের তালে পা গুরশরণের
সংবাদসংস্থা • তেহরান |
প্রধানমন্ত্রী মহমোহন সিংহের সঙ্গে তেহরানে এসেছেন তাঁর স্ত্রী গুরশরণ সিংহ। তবে নিছক দেশভ্রমণই নয়, এ বারের তেহরান ভ্রমণ গুরশরণের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এক নতুন সংযোজন। তাঁর তেহরান ভ্রমণ উপলক্ষে একটি গুরুদ্বার ও স্কুলের তরফে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে স্কুলের ছোট ছোট মেয়েরা বলিউডের গানের সঙ্গে নেচে অভ্যর্থনা জানায় গুরশরণকে। গানের তালের সঙ্গে পা দোলাতে দেখা যায় গুরশরণকে। আধ ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত জনতার হাততালিতে ফেটে পড়ে স্কুলের হলঘর। কেন্দ্রের দেওয়া অর্থসাহায্যেই চলে এই স্কুলটি। পড়ুয়া বেশির ভাগই অনাবাসী ভারতীয়। পড়ুয়ার সংখ্যা ১৯০-এর কাছাকাছি। এই স্কুলের জন্য ২ কোটি টাকা অর্থসাহায্য ঘোষণা করেন গুরশরণ। এর পরে পাশের গুরুদ্বারে যান তিনি। প্রার্থনায় যোগও দেন। |