তেহরানে স্বস্তি খুঁজছেন দেশে বিব্রত মনমোহন
হাতিশালে হাতি আছে। ঘোড়াশালে ঘোড়া। তবু রাজার মনে সুখ নেই!
হাসি নেই মনমোহন সিংহের মুখে। সংসদ চলছে, তবু চলছে না। বেশ বোঝা যাচ্ছে, যে, বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্কটে জেরবার। কিন্তু তারাও এ বার আক্রমণাত্মক। কুড়ি বছর আগে যে সংস্কার করে এ দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে পেরেছিলেন, আজ তা-ও আরও এক বার করে দেখাতে পারছেন কই? বাধা এক দিকে জোট রাজনীতি, অন্য দিকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন।
ফলে এখন বিদেশনীতি নিয়ে কাজ করতেই বোধহয় বেশি স্বস্তি বোধ করছেন মনমোহন। কয়লা কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে সংসদে একটি বিবৃতি দিয়ে তাই চলে এলেন এই পাহাড় ঘেরা, সবুজ, মায়াময় তেহরানে।
এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ী তেহরান এসেছিলেন। মনমোহনের সঙ্গে অবশ্য তাঁর বিস্তর ফারাক। ব্যক্তি মনমোহন আপাত-বিবর্ণ, বাজপেয়ীর মধ্যে নানা রঙের সমাবেশ। মরিশাসে সঙ্গী সাংবাদিকদের চমকে দিয়ে ভোরবেলা জিনস পরে চোখে সানগ্লাস চড়িয়ে সমুদ্রসৈকতে চলে এসেছিলেন বাজপেয়ী। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আর মনমোহন সেই মরিশাসে গিয়ে কাজ শেষ করে তড়িঘড়ি হোটেলের ঘরে ঢুকে পড়তেন। সমুদ্র দেখলেন না? এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, হোটেলের জানলা দিয়ে দেখলাম তো।
অভ্যর্থনা: ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বুধবার তেহরানে। ছবি: এ পি
বিদেশে যেতে ভালবাসতেন বাজপেয়ী। অনেক সময়ই সঙ্গী করতেন পালিত মেয়ে-জামাই, আত্মীয়-পরিজনকে। এক বার নিউ ইয়র্ক গিয়ে প্রায় দশ দিন ছিলেন। মাঝের শনি-রবিবারে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এ দিক-ও দিক। আর মনমোহন তো তাঁর বিদেশ সফর যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করতে সদাব্যস্ত। প্রোটোকলের জন্য সঙ্গে স্ত্রী আসেন, কিন্তু মেয়ে-জামাইদের নিয়ে সাধারণত সফর করেন না তিনি।
মরিশাসের বিখ্যাত নীল সমুদ্রের শোভা উপভোগ না করলেও সে বারের সফরে একটা বই কিন্তু পড়ে শেষ করেছিলেন মনমোহন। ‘হিস্ট্রি অফ মরিশাস’। এ বার তেহরানে এসেও ইরানের ইতিহাসে ডুব দিয়েছেন তিনি। এই সেই দেশ, ৫০০ বছর আগে শের শাহর তাড়া খেয়ে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন হুমায়ুন। ইরানের কার্পেটের খ্যাতি জগতজোড়া। তেহরানে কার্পেটের মিউজিয়াম পর্যন্ত আছে। কিন্তু কেনাকাটায় কোনও রকম আগ্রহ নেই মনমোহনের। বাজপেয়ীর ছিল।
বাজপেয়ীর মতো খাদ্যবিলাসীও কখনও ছিলেন না মনমোহন। ফর্মাল ব্যাঙ্কোয়েটে কার্যত কাঁটাচামচ নিয়ে নাড়ানাড়ি করেন, খান না কিছুই। এ বার তেহরানে এসে দেখছি, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে আরও নিয়মনিষ্ঠ হয়েছেন। নিয়ম অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর নিজস্ব রাঁধুনি আছেন, ঠিক যেমন আছেন নিজস্ব চিকিৎসক। হোটেলের যে স্যুইটে মনমোহন আছেন, সেখানেই একটি ঘরে তৈরি হয়েছে বিশেষ পাকশালা।
কিন্তু রাঁধুনি নিয়ে এলে কী হবে? লাউয়ের তরকারি আর দুটো রুটি খেয়েই দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আগে তবু আমিষ খেতেন, কিন্তু হৃদ্পিণ্ডের ব্যামো হওয়ার পর তা-ও ছেড়ে দিয়েছেন।
এক-এক জন মানুষ এক-এক রকম। তাঁদের সত্তা ভিন্ন। স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ আলাদা। তাঁরা আলাদা গ্ল্যামারের নিরিখেও। বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ তখন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেতা রাজীব গাঁধী। নামিবিয়ায় মধ্যরাতে স্বাধীনতা প্রাপ্তির উৎসব। রাজীবের আন্তর্জাতিক গ্ল্যামার এতটাই যে, আফ্রিকার নেতারা সারা ক্ষণ তাঁকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করে গেলেন। ভিপি-র সে কী অস্বস্তি!
ইন্দিরা বা রাজীবের গ্ল্যামার মনমোহনের নেই। এমনকী বাজপেয়ীও তিনি নন। তা ছাড়া, নেহরু-টিটোর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সেই ঔজ্জ্বল্যও আর নেই। তবু স্বদেশে দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জেরবার মনমোহন যেন তেহরান থেকেই স্বস্তি খুঁজে নিতে চাইছেন। বাজপেয়ী আজ এখানে থাকলে হয়তো হাফিজের কবিতায় মগ্ন হতেন। কিছু ক্ষণের জন্য ভুলে যেতে পারতেন দেশের বিচিত্র রাজনীতি। কিন্তু চার ঘণ্টার বিমান পথ পেরিয়েও সংসদের উত্তাল আবহাওয়া মনমোহন ভুলতে পারছেন কি?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.