পলিথিনের ছাউনি দেওয়া সারি সারি দোকান। ঘিঞ্জি পরিবেশে দমবন্ধ অবস্থা। পার্কিংয়ের জন্য আলাদা কোনও জায়গা নেই। তাই গাড়ি, মোটরবাইক বা সাইকেলে কার্যত দখল হয়ে থাকে জাতীয় সড়কের ‘বাস-বে’। দুর্দশার এই চিত্র দুর্গাপুরের মুচিপাড়া বাজারে। আশপাশের এলাকায় নতুন নতুন আবাসন গড়ে ওঠায় ক্রেতার চাপ বাড়ছে। কিন্তু পরিকাঠামো উন্নয়নে পুরসভার কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
দুর্গাপুরের পুরনো বাজারগুলির মধ্যে অন্যতম এই মুচিপাড়া বাজার। শিল্প ও ব্যবসার উন্নতির ফলে শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা। মুচিপাড়া বাজারের আশপাশে বামুনাড়া, গোপালপুর ইত্যাদি গ্রামে নতুন নতুন আবাসন গড়ে ওঠায় এলাকার জনসংখ্যা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু এলাকার মানুষের ক্ষোভ, বাজারের পরিকাঠামো কয়েক বছর আগেও যেমন ছিল, আজও প্রায় তেমনই। তুলনায় শহরের অন্য সব পুরনো বাজার, যেমন চন্ডীদাস বাজার, বেনাচিতি বাজার অনেকটা উন্নত হয়েছে। |
কলকাতা থেকে দুর্গাপুর ঢোকার সময়ে শহরের প্রথম বাসস্ট্যান্ড মুচিপাড়া। জাতীয় সড়ক থেকে ফুট দশেক দূরেই বাজার। অভিজাত বিধাননগর ও গোপালপুর পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা কেনাকাটা করেন এই বাজারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজারে ভিড় লেগেই থাকে। নেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ফলে, জাতীয় সড়কের বাস-বে দখল করেই ক্রেতারা সাইকেল, মোটরবাইক, গাড়ি রাখেন। শুধু তাই নয়, ‘বাস-বে’ দখল করে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া সারি সারি ঘিঞ্জি দোকান গজিয়ে উঠেছে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট এলাকায় পৃথক ট্রাফিক পরিকাঠামো গড়ে ওঠার পরে জাতীয় সড়কের প্রায় সব বাস-বে দখলমুক্ত হয়েছে। ব্যাতিক্রম শুধু মুচিপাড়া। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারের এক দিক পড়ে কমিশনারেট এলাকায়। বাকিটা জেলা পুলিশের অন্তর্গত কাঁকসা থানায়। তাই বাস-বে দখলমুক্ত করার কাজ থমকে রয়েছে।
বিধাননগর থেকে বাজার করতে আসা ষাটোর্ধ্ব রমিতা সেন বলেন, “বাজারের ভিতরে ঢুকে দমবন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি হলে তো আর কথা নেই। জল-কাদায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে।” বাজারে ঢোকার রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি নামলেই কাদায় ভরে যায়। বাজারের ভিতরেও একই অবস্থা। আর এক ক্রেতা তুহিন রায়ের আক্ষেপ, “বাজার করতে গিয়ে কারও না কারও গায়ে ধাক্কা লেগে যায়। অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।” বাজারে স্থায়ী শৌচাগার নেই। ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের তরফে চন্দ্রশেখর হালদার, সুজিত মণ্ডলেরা জানান, পরিকাঠামোর উন্নয়ন হলে শহরের অন্য জায়গা থেকেও ক্রেতারা এই বাজারে আসতে চাইবেন।
পুরসভার ৪ নম্বর বোরো কমিটির চেয়ারপার্সন তৃণমূলের শেফালি চট্টোপাধ্যায় জানান, পুরসভার মাধ্যমে বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হবে। তৃণমূলের ২ নম্বর ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায় জানান, হকারদের জন্য পাকা বাজার গড়ে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, “আগেই উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। এটা করা হলে সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে।” সিপিএম পরিচালিত পুরবোর্ডের আমলে এই বোরো কমিটির চেয়ারম্যান তথা মুচিপাড়া এলাকার বর্তমান কাউন্সিলর সিপিএমের শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “বাজারের ভিতরের কাঁচা রাস্তা অনেকটাই পাকা করা হয়েছে। আবর্জনা এক জায়গায় জড়ো করে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের তরফে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জায়গার অভাবে আর শৌচাগার গড়া যায়নি।” তিনি জানান, পুরভোটের আগে ১৭ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু পুরভোট এসে যাওয়ায় তা থমকে যায়।
মুচিপাড়া বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়নের আশু সম্ভাবনার কথা শোনাতে পারেননি শহরের বর্তমান মেয়র তৃণমূলের অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, গত বোর্ড বড় অঙ্কের দেনা রেখে গিয়েছে। তার উপরে পুরসভার পূর্ণাঙ্গ বাজেটও পেশ করা হয়নি। তবে আর্থিক অবস্থার একটু সুরাহা হলেই এ নিয়ে উদ্যোগের আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র। |