একশো দিনের কাজ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। প্রকল্পের দফতরে দৈনিক ভুরি ভুরি চিঠি আসে। তথ্য জানার অধিকার আইনেও অনেকেই দরবার করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলিতে স্থানীয় এলাকার কাজকর্মের হিসেব রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, একটি গ্রন্থাগারে আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের পাঠকেরা আসেন। তাঁরা প্রত্যেকেই কাজের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হবেন। জানাতে পারবেন অন্যদেরও।
একশো দিনের প্রকল্প ঘিরে প্রথম থেকেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাম আমলে কোথাও কাজ করিয়ে টাকা না দেওয়া, কোথাও প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ লোপাট হয়ে যাওয়া, কোথাও বরাদ্দ অর্থের আনুপাতিক কাজ না হওয়া-সহ জেলা প্রকল্প দফতরে অভিযোগ প্রায়ই নানা অভিযোগ আসে। নানা সময়ে এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের হেনস্থা হওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বাম আমলে কাঁকসার মলানদিঘিতে সিপিএম কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়। প্রহৃত হন স্থানীয় নেতৃত্ব। আবার মলানদিঘিতেই প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে প্রকল্পের সুপারভাইজারদের পঞ্চায়েতে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এই প্রকল্পে কাজ করে অনেকেই পাওনার থেকে কম মজুরি পেয়েছেন। কেউ আবার কাজ করেও মজুরি পাননি বলে অভিযোগ। মৃতের নামে মজুরি তুলে সুপারভাইজাররা অর্থ আত্মসাৎ করে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। আগে গ্রাম সংসদ সরকারি প্রকল্পের দেখাশোনায় ভূমিকা রাখত। কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে কোথাও সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত। অথচ সেখানে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাঁরা গ্রাম সংসদে কার্যকরী ভূমিকা নিতে অনীহা দেখান। ফলে কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে আগে স্থানীয় স্তরে সামাজিক ভাবে যে ‘মনিটরিং’ হত তা প্রায় হয়ই না। ‘সোশ্যাল অডিট’ যা হওয়ার তা হয় প্রশাসনিক স্তরে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাবরের মতো এ বারও রাজ্যে বর্ধমান জেলা একশো দিনের প্রকল্প রূপায়ণে সামনের সারিতে রয়েছে। এপ্রিল থেকে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত ২৪০ কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। তৈরি হয়েছে ১৪০ লক্ষ কর্মদিবস। এ সবের পাশাপাশি অনিয়মের অভিযোগও উঠছে বারবার।
জেলাশাসক জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কাজ শেষ হয়ে যাওয়া সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে নিজেদের গিয়ে পরিদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি, কাজের ছবি তুলে রাখা হচ্ছে। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে জোর দেওয়া হচ্ছে ‘সোশ্যাল অডিটে’। জেলাশাসক জানান, এর পরেও অনেক গ্রামবাসীর মনে প্রশ্ন থেকে যায়। সে কথা মাথায় রেখে গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলির সাহায্য নিচ্ছে প্রশাসন। সেখানে ধারাবাহিক ভাবে এলাকার একশো দিনের প্রকল্পের কাজকর্মের হিসেব টাঙিয়ে দেওয়া হবে। বাসিন্দারা এসে প্রকল্প সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে অবহিত হবেন। কী কাজ হয়েছে, কত টাকা খরচ হয়েছে, ক’জন মহিলা ও ক’জন পুরুষ কাজ করেছেন, সব থাকবে সেই তালিকায়। জেলাশাসক বলেন, “আশা করি বাসিন্দারা তাঁদের অনেক প্রশ্নের উত্তর এই তালিকায় পেয়ে যাবেন।” |