ডেঙ্গি-আক্রান্ত মহানগর, চাপা দিতে ব্যস্ত পুরকর্তারা
ডেঙ্গির ভয়ে বন্ধ করে দেওয়া হল কলেজ। ফাঁকা করে দেওয়া হল হস্টেল। আবাসিক সব ছাত্রীকে বাড়ি গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে বলে দিয়েছেন আলিপুরের হেস্টিংস হাউসের শারীরশিক্ষা কলেজ-কর্তৃপক্ষ। আপাতত দু’দিনের জন্য কলেজ বন্ধ থাকবে বলে সব ছাত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ অতীন্দ্রনাথ দে মঙ্গলবার বলেন, “কলেজের চার দিকে জঙ্গল। বিহারীলাল কলেজ আর আমাদের কলেজের মাঝে একটি পচা খাল রয়েছে। সেটা মশার আঁতুড়ঘর। কীটনাশক দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সরকারকে অসুবিধার কথা অনেক বার জানিয়েছি। খালের ব্যাপারটাও পূর্ত দফতরকে জানানো হয়েছে।” কলেজ সূত্রের খবর, জ্বরে আক্রান্ত ওই কলেজের এক ছাত্রীকে বাঁকুড়ায় তাঁর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে, মেয়েটির ডেঙ্গি হয়েছে। সোমবার মারা যান স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী। কলেজের ছাত্রীদের বড় অংশই জ্বরে কাবু। ওই ছাত্রীর মৃত্যুর পরে আর ঝুঁকি নিতে চাননি কলেজ-কর্তৃপক্ষ।
শুধু কলেজের হস্টেল কেন, কলকাতা ও সংলগ্ন সল্টলেকে এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গি। কলকাতার বেশ কয়েকটি স্কুলে এ সময়ে ইউনিট টেস্ট চলছে। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে দেখা গেল, ২৫ জন ছাত্র এক ঘরে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। কারণ, তাদের সবাই ডেঙ্গি-আক্রান্ত। বিভিন্ন স্কুলে উপস্থিতির হার অনেকটাই কমে গিয়েছে। বিশেষ করে সল্টলেকে অনেকেই ভয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
লেকটাউনে যত্রতত্র জমে থাকছে বৃষ্টির জল। ছবি: শৌভিক দে।
সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের ঘরের সামনে মঙ্গলবার সকালে ছিল লম্বা লাইন। রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি চলেছে। কারণ, সবাই আগে চিকিৎসককে দেখিয়ে রোগটা কী, জানতে চান। ওয়ার্ডে জায়গা নেই। তাই এমএস-১ পজিটিভ রোগীদের আর ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। প্যারাসিটামল এবং প্রচুর জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মশার কামড় থেকে কারও রেহাই নেই। বিধায়ক থেকে বিচারপতি, খেলোয়াড়, পুলিশ আধিকারিক, চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত সকলেই।
বিভিন্ন আবাসনে এক-একটা পরিবারের সকলেই আক্রান্ত ওই রোগে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, বিধাননগরে ২৩ জন ডেঙ্গি রোগে আক্রান্ত। কিন্তু বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল) দেবাশিস জানার দাবি, “কোনও ডেঙ্গি রোগী নেই। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি পাওয়া গিয়েছে, তা প্রমাণ করতে পারবেন? টাইফয়েড জাতীয় জ্বর হচ্ছে।”
বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক, তৃণমূলের সব্যসাচী দত্ত নিজেই দেবাশিসবাবুর দাবি মানেন না। সব্যসাচীবাবুর স্ত্রী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তিনি যে বাড়িতে থাকেন, সেখানেও অনেকে এ রোগে আক্রান্ত বলে সব্যসাচীবাবুর দাবি। বি জে ব্লকের বাসিন্দা প্রাক্তন পুর-চেয়ারম্যান, সিপিএমের বিশ্বজীবন মজুমদার বলেন, “আমার বাড়িতেও অনেকের ডেঙ্গি।”
২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, সিপিএমের অনুপ মালিক বলেন, “আমি নিজেই এই রোগে আক্রান্ত।” সল্টলেকের দুই চিকিৎসক মহেশ গোয়েন্কা ও রবীন চক্রবর্তীর বাড়িতেও থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। পুরসভা সরকারি ভাবে তা হলে কেন ডেঙ্গি সংক্রমণের বিষয়টি স্বীকার করে নিচ্ছে না? সব্যসাচীবাবু বলেন, “পুরসভার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারিনি।”
একই অবস্থা সল্টলেকেও। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
ডেঙ্গি নিয়ে তাঁরা সচেতনতার প্রচার চালানো ও মেডিক্যাল ক্যাম্প খুলেছেন বলে পুর-কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও, দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকাতেও সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। লেকটাউনের যশোহর রোড ও ভিআইপি রোডের সংযোগকারী রাস্তার মধ্যে আছে বেশ কিছু ফোয়ারা। বছর কয়েক আগে ওই রাস্তার মাঝখানে সৌর্ন্দযায়নের জন্য বসানো হয়েছিল নানা মূর্তি ও কয়েকটি ফোয়ারা। সেগুলি এখন অকেজো। মঙ্গলবার দেখা গেল, পরিত্যক্ত ফোয়ারার নীচে জমে বৃষ্টির জল। কিলবিল করছে মশার শুককীট। পুর-চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, “আমরা শীঘ্রই ওই ফোয়ারাগুলি থেকে জমা জল ফেলে দেব। নিয়মিত পরিষ্কার করব।”
বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতাল, আই ডি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গি রোগীর ভিড়। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “শহরে ডেঙ্গির ব্যাপকতা তেমন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ্বর হলেই ডেঙ্গি বলে অপপ্রচার হচ্ছে।” তিনি জানান, এ পর্যন্ত শহরে মোট ২০৪ জনের রক্ত পরীক্ষায় (অ্যান্টিবডি) ডেঙ্গি পজিটিভ মিলেছে। আর এনএস-১ (আন্টিজেন) পজিটিভ মিলেছে ৭৮৪ জনের ক্ষেত্রে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.