নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পদে পদে বিপত্তি! শেষ বেলায় সমাধানসূত্র।
কথা ছিল, জলপাইগুড়িতে ভাড়া বাড়িতেই অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট সম্মতি না-দেওয়ায় পিছিয়ে আসতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। কবে তার উদ্বোধন হবে, কেউ জানে না।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঠিক হয়, ওই জেলায় নতুন সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবন তৈরির জন্য ১ সেপ্টেম্বর, শনিবার শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও আপত্তি তোলে হাইকোর্ট। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী একা নন, তাঁর সঙ্গে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল যুগ্ম ভাবে সার্কিট বেঞ্চের শিলান্যাস করবেন।
উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলার মানুষকে কলকাতা হাইকোর্টে যাতায়াতের ঝক্কি থেকে মুক্তি দিতেই সার্কিট বেঞ্চের পরিকল্পনা। সেই জন্যই ভাড়া বাড়িতে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। অগস্টে তার দিনও ধার্য করে সরকার। রাজ্যের আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটক হাইকোর্টকে চিঠি দিয়ে সরকারের ইচ্ছার কথা জানান। এই ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদকেও চিঠি লিখে আর্জি জানান মলয়বাবু। কিন্তু হাইকোর্ট রাজ্যকে জানায়, অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চের জন্য যে-পরিকাঠামোর ব্যবস্থা হয়েছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট নয়। হাইকোর্ট সম্মতি না-দেওয়া পর্যন্ত আইন মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। স্থায়ী ভবন তৈরির কাজ শুরু না-হলে তারা অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ চালু করার অনুমতি দেবে না বলে জানিয়ে দেয় উচ্চ আদালত।
এই অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই শনিবার নতুন ভবনের শিলান্যাস করতে হচ্ছে। বাম জমানায় অধিগৃহীত ৪০ একর জমিতে তৈরি হবে ওই স্থায়ী ভবন। কিন্তু এই নিয়েও বিতর্ক দেখা দেয়। দিন তিনেক আগে সরকারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে সার্কিট বেঞ্চের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ব্যাপারে হাইকোর্ট তাদের অসম্মতির কথা জানিয়ে দেয়। তাদের বক্তব্য, অনুষ্ঠানমঞ্চে হাজির থাকবেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আর শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী তা হয় না। হাইকোর্টের অভিমত জেনে মঙ্গলবার সকালে মলয়বাবু দেখা করেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। তাঁকে একই কথা জানান প্রধান বিচারপতি। অবশেষে একটা সমাধানসূত্র বেরোয়। ঠিক হয়, যুগ্ম ভাবে নতুন ভবনের শিলান্যাস করবেন প্রধান বিচারপতি ও মুখ্যমন্ত্রী।
মলয়বাবু জানান, নতুন ব্যবস্থায় ‘কোর্ট বিল্ডিং’ হবে পাঁচতলা। থাকবে বিচারপতিদের থাকার জন্য ১৫টি বাংলো। থাকবে বার অ্যাসোসিয়েশনের ঘর, হলঘর, গ্রন্থাগার এবং কিছু কর্মীর জন্য আবাসনও। সব মিলিয়ে খরচ হবে ১৬০ কোটি টাকা। পুরো টাকাই দেবে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে ৬০ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। শিলান্যাস অনুষ্ঠানের জন্য দেওয়া হয়েছে ২০ লক্ষ। আইন ও বিচার মন্ত্রী বলেন, “সার্কিট বেঞ্চ তৈরির জন্য বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ওই জমি মাটি ফেলে উঁচু করার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর চার কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা এবং পাঁচিল দেওয়ার জন্য আইন দফতর ছ’কোটি টাকা দিয়েছে পূর্ত দফতরকে।”
কিন্তু শিলান্যাস হলেও স্থায়ী ভবনের কাজ কবে শুরু হবে?
মলয়বাবুর দাবি, “দরপত্র চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া এবং মাটি ফেলে জমি উঁচু করার কাজ শেষ করে মাসখানেকের মধ্যে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে যাবে। কাজ শেষ করতে সময় লাগবে দেড় বছর।” অন্য একটি সূত্রে জানানো হয়, নতুন ভবনের নকশা তৈরি এবং তা অনুমোদনের কাজ এখনও বাকি। তার পরে দরপত্র চূড়ান্ত হবে। দরপত্র চূড়ান্ত হলে তবেই বরাত দেওয়া হবে কাজের। অতঃপর শুরু হবে নির্মাণকাজ। সব মিলিয়ে দেড় বছরের আগে সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
কবে চালু হবে সার্কিট বেঞ্চ? হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত, নির্মাণ শুরু হলে তবেই তারা অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ চালু করার সম্মতি দেবে। এবং এই ব্যাপারে হাইকোর্টের সম্মতি পেলে তবেই আইন মন্ত্রক রাষ্ট্রপতির সই করা বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া শুরু করবে। রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তি জারির পরে উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলার সব মামলার রেকর্ড কলকাতা হাইকোর্ট থেকে অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চে পাঠানো হবে। নিয়োগ করতে হবে কর্মী। কিছু অভিজ্ঞ কর্মীকে বদলি করতে হবে। এই সব পর্ব শেষ হলে তবেই অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ চালু হতে পারে। |