কয়লার ঘায়ে শুধু মনমোহন সিংহ সরকারই নয়, কাহিল এ রাজ্যের বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমও। কোল ইন্ডিয়ার বকেয়া কিছুটা মিটিয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারের রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন (আরইসি)-এর কাছ থেকে এ বার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে নিগম।
ধার বেড়ে ৭০০ কোটি ছুঁয়ে ফেলায় নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কোল ইন্ডিয়া। ফলে কোলাঘাট, বক্রেশ্বর, সাগরদিঘি এবং নিগমের অন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গিয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট। রাজ্যের ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্ষার সময়ে যেখানে কমপক্ষে ২৪০০-২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, সেখানে এখন ২১০০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ঘাটতি মেটাতে ডিভিসি ও অন্য সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানান, আরইসি চলতি সপ্তাহে নিগমকে ৩০০ কোটি ঋণ দেবে। আরও ঋণ পেতে কিছু ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা চলছে। পুজোর আগে কোল ইন্ডিয়ার বকেয়া মেটাতে নিগম কর্তৃপক্ষ উঠে পড়ে লেগেছেন।
অভিযোগ, এত টাকা বকেয়া রাখলে বর্ষার সময়ে যে চাহিদা মতো কয়লা মিলবে না, তা আঁচ করতে পারেননি বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের কর্তারা। কোল ইন্ডিয়ার পাওনা কিছু মিটিয়ে জোগান ঠিক রাখার পরিকল্পনা হয়নি। এটাকে নিগম কর্তৃপক্ষের ‘ব্যর্থতা’ বলে মনে করছেন মহাকরণের বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা। বিভিন্ন সূত্র থেকে এই কয়লা সঙ্কটের খবর বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের কাছে পৌঁছনোর পর তাঁর নির্দেশে দফতরের কর্তারা সক্রিয় হন। কোল ইন্ডিয়ার পাওনা কিছু মেটাতে বিদ্যুৎসচিব মলয় দে আরইসি-র কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। কোল ইন্ডিয়ার কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয় নিগমের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ গুপ্তেরও।মণীশবাবু বলেন, “নিগম কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে হঠাৎ কয়লা সঙ্কট দেখা দেয়। এতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারত। সময় মতো সক্রিয় হওয়ায় তা সামাল দেওয়া গিয়েছে। কয়লার সমস্যা আপাতত মিটেছে।” এমনিতেই বর্ষার সময় জল জমায় কোল ইন্ডিয়ার খনিগুলিতে কয়লা উৎপাদন কমে। তার ফলে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সম্পূর্ণ কয়লার জোগান তারা দিতে পারে না। কয়লা কিনেও টাকা না মেটানোয় কোল ইন্ডিয়া নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা পাঠানো কমায়। দিন কয়েক আগে এমন পরিস্থিতি হয় যে, কোলাঘাট, বক্রেশ্বর-সহ অন্য উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে এক দিনের বেশি কয়লাই মজুত ছিল না। অথচ কমপক্ষে এক সপ্তাহের কয়লা হাতে থাকার কথা। রাজ্যের দাবি, বকেয়া টাকা পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে কয়লার জোগান কিছুটা বাড়িয়েছে কোল ইন্ডিয়া। ফলে সঙ্কট খানিকটা কেটেছে। |