ছেলেকে এ বার আজহারের উপহার শুধু ফুল
ই যে! ছ’ফুটের জায়গাটা জুড়ে শুয়ে আছেন তিনি। পরিবারের অন্য ‘মৃত’ সদস্যদের সঙ্গে!
রোজ ভোরে তাঁর কবরের পাশে নিয়ম করে বসেন এক মৌলবী। তাঁকে কোরান শরিফ পড়ে শোনান! মাঝে মাঝে তাঁর বিখ্যাত বাবাকে দেখা যায়। রোজ আসেন না। মাসে এক কি দু’বার। এসে বসে থাকেন নির্বাক। নিস্তব্ধ!
কয়েক দিন আগেই ঈদ ছিল। খুশির ঈদ। গত বছর বাবা বাইক কিনে দিয়েছিলেন। এ বারের ‘উপহার’ শুধু ফুল। চোখের জল! উর্দু মতে আর ক’দিন পরেই তাঁর ‘বরসি।’ মৃত্যুর পর তাঁর প্রথম ‘জন্মদিন!’
কে ইনি? নাম বললে এক ঝটকায় মনে না-ও পড়তে পারে। মহম্মদ আয়াজউদ্দিন। কিন্তু যদি বলা হয় ইনি মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ছেলে, জীবন যাঁর মাত্র উনিশেই আটকে গিয়েছে চিরকালের মতো, বছরখানেক আগের কিছু মর্মান্তিক স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়া আশ্চর্য নয়।
৩১ অগস্ট ২০১১। সেটাও পবিত্র রোজা-র মাঝে এক দিন ছিল। ছোট ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে হাজার সিসি-র বাইক উপহার দিয়েছিলেন আজহার। ভাল ক্রিকেট খেলত বলে ছোট ছেলে আয়াজের উপর বেশি টান বরাবরই ছিল প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বাবার। তাই তাঁকে আরও বেশি আনন্দ দিতে ঘুম থেকে তুলে বাইক উপহার!
আর তার পরিণাম? পনেরো দিনের মধ্যে ওই বাইক নিয়ে স্বেচ্ছা-রেসে নেমে গাচ্চিবোলির ডিভাইডারে বিশাল দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অকাল মৃত্যু আজহার-পুত্রের!
সন্তোষনগর গোরস্থান যাঁর দায়িত্বে থাকে চব্বিশ ঘণ্টা, সেই মহম্মদ ইয়াসিন আজও ছবির মতো সব কিছু দেখতে পান। বলতে পারেন, “বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ দেহটা এল। আমি নিজের হাতে আয়াজকে ওখানে শুইয়ে দিয়েছিলাম। ওহ! নিয়তি কী নিষ্ঠুর!” ‘ওখানে’ মানে, গোরস্থানে ঢোকার মুখে সিমেন্টের একটা কবর। আয়াজের নাম, মৃত্যুর সাল, তারিখ লেখা তার ওপর। আশেপাশে আরও কয়েকটা কবর। কোথাও শায়িত আজহারের বাবা। কোথাও প্রপিতামহ।
আজহার এ বারের ঈদেও এসেছেন। প্রিয় ছেলের সঙ্গে ‘দেখা’ করতে। একা। ভোর-ভোর এসে কোরান-পাঠ করেছিলেন। পড়তে পড়তে চোখ দিয়ে জল পড়েছে অঝোরে। কবরে ফুল দিয়েছেন। গাড়িতে ভর্তি ছিল নতুন জামা-কাপড়, ফল-মিষ্টি। কিন্তু কবরে যে ফুল ছাড়া অন্য কিছু দেওয়ার নিয়ম নেই। গোরস্থানের বাইরে অগণিত গরিব-দুঃখীকে সে সব বিলিয়ে লাগোয়া দরগায় প্রার্থনায় বসেছেন ছেলের জন্য। গত এক বছরে হায়দরাবাদে থাকা অনেক কমিয়ে দিয়েছেন আজহার। পুত্রশোকের যন্ত্রণায়? হয়তো। সাংসদ জীবনের ব্যস্ততা সামলাতে এখন বেশি সময় কাটে মুম্বই-দিল্লিতে।
“আজ্জুভাইকে খুশির ঈদের দিনই কাঁদতে দেখলাম! এমনিতে মানুষটা ভীষণ চাপা। নইলে যে দিন মৃত ছেলেকে নিয়ে এই গোরস্থানে এসেছিলেন, কত লোকে কত সমবেদনা জানাল। উনি কিন্তু একটা কথা বলেননি, এক বারের জন্যও কাঁদেননি। এ বার কাঁদতে দেখলাম,” বলছিলেন ইয়াসিন। তাঁর মুখ থেকেই শোনা গেল, ১৬ সেপ্টেম্বর নয়, উর্দু মতে তিন-চার দিন পরই আয়াজের ‘বরসি।’ যে দিন আজহার আবার আসবেন। ছেলের জন্য ‘উপহার’ নিয়ে। ফুল, শুধু ফুল!
আজহার বরাবর বিশ্বাস করে এসেছেন, ‘ভাগ্যই মানুষের নিয়ন্ত্রাতা’। সেই ‘ভাগ্য’ যে তাঁকে এ ভাবে ঠকাবে বোধহয় কোনও দিন ভাবতেও পারেননি বিশ্বকাপে দেশকে তিন বার নেতৃত্ব দেওয়া মহাতারকা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.