ডাচ কোচের প্ল্যান ‘বি’ এখনও তৈরি নয় |
উইম কোভারম্যান্সের দলের প্ল্যান বি তা হলে এখনও তৈরি নয়! সে মুখে সুনীল ছেত্রীরা যতই দাবি করুন!
বৃষ্টি না হলে হিরো, আর হলে জিরো। এটা কোনও ফুটবল টিমের সাফল্যের রসায়ন হতে পারে না। ডাচ-কোচের আমলে তাই পাস-পাস-পাস স্ট্র্যাটেজি তৃতীয় ম্যাচেই প্রশ্নের সামনে। দুপুর থেকেই বৃষ্টি। খেলা সে জন্য নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা পিছিয়ে শুরু হল। ‘নতুন ভারত’ কিন্তু নিজেদের বদলাতে পারল না। পজেশনাল ফুটবল থেকে বেরিয়ে, নিতে পারল না পারল লং-বল ট্যাকটিক্স। কেন তৈরি নেই আপনার প্ল্যান বি? ম্যাচের পর ডাচ কোচকে এই প্রশ্ন শুনতে হল। “আমরা দ্বিতীয়ার্ধে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি মাঠে সেটা হয়নি। এই মাঠে ভাল ফুটবল খেলা কঠিন। নেপালের হারানোর কিছু ছিল না। আমাদের পরের ক্যামেরুন ম্যাচের কথা মাথায় রাখতে হচ্ছিল। ঠিক আছে আমরা তো লড়াই থেকে ছিটকে যাইনি,” কোনওরকম রাগ না দেখিয়ে উত্তর দিয়ে দিলেন কোভারম্যান্স।
নেপাল ম্যাচ থেকে পুরো পয়েন্ট না পাওয়ায় নেহরু কাপের ফাইনালে যাওয়া নিয়ে একটা চাপ কিন্তু তৈরি হল ভারতের উপর। যা অঙ্ক, তাতে বুধবার ক্যামেরুন যদি মলদ্বীপকে হারিয়ে দেয় তা হলে সুনীল-নবিরা ফাইনালে। ম্যাচ ড্র হলেও ভারতের কোনও সমস্যা নেই। একমাত্র যদি মলদ্বীপ জিতে যায় তা হলেই সমস্যা। সে ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে গৌরমাঙ্গি-নবিদের অন্তত একটা পয়েন্ট পেতেই হবে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে। নতুন জাতীয় কোচ বলেও গেলেন, “খুব উদগ্রীব হয়ে কাল মলদ্বীপ-ক্যামেরুন ম্যাচটা দেখতে আসব।” |
বৃষ্টি আর কাদা যে তাঁর ছেলেদের বিপদে ফেলতে পারে সেটা আগেই বুঝে গিয়েছিলেন কোভারম্যান্স। ম্যাচ শুরু হওয়ার প্রায় আড়াই ঘণ্টা আগে থেকেই মাঠে চক্কর কাঁটতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। স্পঞ্জ দিয়ে মাঠ-কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন জমে থাকা জল সরানোর। সুপার সপার চালানো যাচ্ছে না, স্টেডিয়ামের মাটি নরম থাকায়। গাড়ি চালালেই মাঠ বিশ্রী হয়ে যাচ্ছে। এতে টুর্নামেন্টের স্বত্ব কেনা চ্যানেলের তীব্র আপত্তি। টিভিতে নাকি জঘন্য দেখাচ্ছে মাঠকে। তাই ফিরে যেতে হয়েছে মান্ধাতার আমলে। ভারতের ডাচ-কোচ সাইড লাইন ধরে, মাঠের ভিতরে ঢুকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিলেন কর্মীদের। স্পঞ্জ দিয়ে জল কমানোর চেষ্টায়। কোভারম্যান্সের চোখে মুখে তখন বিরক্তি। সামনে যেতে ঠোঁট উল্টে বললেন, “মনে হয় বৃষ্টি আমার টিমটাকে নিজেদের খেলা খেলতে দেবে না।”
হলও তাই। যে নেপাল মাত্র একদিন আগে ক্যামেরুনের কাছে কার্যত ‘ইঁদুর’ হয়ে গিয়েছিল, তারাই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এল। কিছুটা খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো। নেহরু স্টেডিয়ামে ম্যাচ থাকলেই এক দিকের গ্যালারি ভর্তি করে আসছেন নেপালের সমর্থকরা। ব্যানার, ঢোল নিয়ে ‘নেপাল’ ‘নেপাল’ বলে চিৎকার করছে কয়েক হাজার ছেলে-মেয়ে। পরপর দু’টো ম্যাচে নেপাল হারার পর টিম-বাস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ওঁরা। দাবি ছিল, ভারতের বিরুদ্ধে ভাল খেলতেই হবে। ৫-৩-২ ফর্মেশনে দল সাজানো কৃষ্ণ থাপার ছেলেরা বৃষ্টির সুযোগটা নিয়ে তাঁদের কিছুটা আনন্দ দিয়ে গেলেন। পাঁচ গোল খাওয়া গোলকিপারকে বসিয়ে কিরণ ছেমজংকে এ দিন নামিয়েছিলেন নেপাল-কোচ। দুর্দান্ত খেললেন ছেলেটি। ম্যাচের সেরা তিনিই। জগজিৎ শ্রেষ্ঠা-সুগার থাপারা প্রথমার্ধটা ঘুম কেড়ে নিল ভারতের। কিক অ্যান্ড রান খেলে। তখন সুনীলকেও নামতে হল নীচে। ঘর বাঁচাতে।
ডাচ-কোচ এ দিন দলে দুটো পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু মাঠের কাদা আর জমে থাকা জলে বলই তো গড়ায় না! পজেশনাল-পাসিং ফুটবলটা হবে কী করে? নেপাল কলকাতা লিগের এরিয়ান বা টালিগঞ্জ অগ্রগামীর মতো তেড়েফুড়ে খেলতে লাগল। একটা সময় পরপর তিনটে কর্নারও আদায় করে নিল নেপাল। সঞ্জু প্রধানের মতো বৃষ্টি মাঠের ওস্তাদ ফুটবলারকে বসিয়ে রাখাটা বড় ভুল। অনেক দেরিতে নামানো হল জুয়েল রাজাকে। জুয়েল নামার পরই সত্যিই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল ভারত। দুই বদলি রবিন সিংহ ও জুয়েল রাজার দু’টো নিশ্চিত গোলের শট বাঁচালেন নেপাল গোলকিপার। শেষ তিন মিনিট নেপাল দশ জনে (লালকার্ড দেখলেন বিকাশ ছেত্রী) খেলেও গোল খায়নি।
নেপাল কোচ এই সুযোগে বলে গেলেন, “ভারত আর আমাদের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। দু’দেশই সাফের সদস্য তো।”
|
ভারত: সুব্রত, ডেঞ্জিল, গৌরমাঙ্গি, রাজু, নবি, অ্যান্টনি, মেহতাব, লেনি (জুয়েল), ক্লিফোর্ড (রবিন) ফ্রান্সিস, সুনীল। |