ট্রাফিক সিগন্যালের ‘গোলমাল’। তার জেরে ফের দুর্ঘটনার মুখে পড়ল একটি স্কুলগাড়ি। আহত অন্তত পাঁচ জন পড়ুয়া। এ বারের দুর্ঘটনাস্থল হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ সাত জন পড়ুয়াকে নিয়ে হাওড়ায় ফিরছিল ওই স্কুলগাড়িটি। পড়ুয়ারা পার্ক সার্কাস ডন বস্কো স্কুলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্কুলগাড়িটি বাকসাড়া মোড় থেকে বেতড়ের দিকে ঘোরার সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ, ওই মোড়ের ট্রাফিক সিগন্যালের আলো সবুজ থেকে আচমকা লাল হয়ে যাওয়ায় একটি গ্যাস ট্যাঙ্কার ব্রেক কষেও থামতে না-পেরে স্কুলগাড়িটিকে পাশ থেকে ধাক্কা মারে। ধাক্কার চোটে গাড়িটি সম্পূর্ণ উল্টো দিকে ঘুরে যায়। ভেঙে যায় বাঁ দিকের জানলার সব ক’টি কাচ। |
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ঘটনার সময়ে ওই মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছিলেন এক সিভিক পুলিশ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পুলিশকর্মী। স্থানীয় এক বাসিন্দা সুশান্ত করাতি বলেন, “সিভিক পুলিশ সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই সমস্যা হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় আহত ছাত্রদের নাম যশ জাঠোরিয়া, আরিয়ান শেঠিয়া, করম শেঠিয়া, সায়ন হাজরা এবং সহর অগ্রবাল। এদের মধ্যে যশ ও আরিয়ানের মাথা ফেটে যায়। চোখের নীচে আঘাত পায় সায়ন। আহতদের স্থানীয় দু’টি নার্সিংহোমে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার জেরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। যানজট হয় কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি তখনও বাকসাড়া মোড়ের ট্রাফিক স্ট্যান্ডে পড়ে রয়েছে। ঘটনাস্থলে এলাকাবাসীদের ভিড়। কোনও পড়ুয়া কাঁদছে। কেউ যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। কারও মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে স্কুলগাড়ির জানলার ভাঙা কাচ, জলের বোতল, স্কুলব্যাগ। এক পড়ুয়ার মা স্বাতী হাজরা বলেন, “ঘটনার পরে আমরা এখন ভীষণ আতঙ্কিত। এর পরে কী ভাবে ছেলেকে স্কুলগাড়িতে পাঠাব, সেটাই ভাবছি।” আর এক পড়ুয়ার বাবা জয় জাঠোরিয়া বলেন, “একেই রাস্তার অবস্থা এত খারাপ। তার উপরে আবার শুনছি, সিভিক পুলিশ ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এর পর থেকে ছোট বাচ্চাদের স্কুলগাড়ি করে পাঠাতেই তো ভয় করবে।”
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে প্রায়ই সিভিক পুলিশেরা ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করেন। সম্ভবত সে জন্যই সিগন্যালে গোলমাল হয়। হাওড়ার ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “পুলিশকর্মীরাই সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে সিভিক পুলিশদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাই মাঝেমধ্যে তাঁরাও হাত লাগান। এ দিন কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ঘটনার পরে ট্যাঙ্কার-সহ চালককে জগাছা খানার মৌখালি থেকে ধরা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। |