পরিবহণমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিকে থোড়াই কেয়ার! মঙ্গলবার সকাল থেকেই নানা কারণে শহরের বিভিন্ন রুটে অটো বন্ধ করে দিয়ে ফের চলল অবরোধ।
সোমবারই রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র কার্যত হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, নানা অছিলায় যখন-তখন অটো বন্ধ করা আর চলবে না। সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার কথাও বলেছিলেন তিনি। তার পরেও বিভিন্ন রুটে এ দিন অটো অবরোধ হয়েছে। যার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য নিত্যযাত্রী।
গত তিন-চার দিন ধরে বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের দাবি, বাজেয়াপ্তও করা হচ্ছে বেশ কিছু বেআইনি অটো। অভিযানের ফলে গত কয়েক দিনই শহরের বিভিন্ন রুটে অটোর সংখ্যা কমেছে। সোমবার বিভিন্ন ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্য কলকাতা পুলিশের অন্তর্গত এলাকায় মোট ১৮৫টি অটোর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ড সূত্রের খবর, পারমিট, লাইসেন্স ঠিক মতো রয়েছে কি না, তা দেখতে চেয়ে এ দিনও সকাল থেকে সল্টলেক, উল্টোডাঙা, কাঁকুড়গাছি-সহ বিভিন্ন রুটের অটো থামিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছিল। সে খবর পেয়ে অনেক অটোচালক গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। |
এন্টালি ও ফুলবাগান: বেশি সংখ্যক যাত্রী চাপিয়ে আইন ভাঙার অটো-যাত্রা শহরের সর্বত্রই। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র |
জোড়াবাগান ট্রাফিক গার্ড সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ হরি ঘোষ স্ট্রিট এবং অরবিন্দ সরণির সংযোগস্থলে যান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন এক ট্রাফিক কনস্টেবল। ওই ট্রাফিক কনস্টেবলের অভিযোগ, জোড়াবাগান-উল্টোডাঙা রুটের এক অটোচালক তাঁর পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন। তিনি বাধা দিতে গেলে অটোচালকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। অটোচালক তাঁকে মারধর করেন। ওই ট্রাফিক কনস্টেবলকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় অটো। পুলিশি নিপীড়নের অভিযোগ তুলে ও তার প্রতিবাদে ওই রুটে দীর্ঘক্ষণ অটো বন্ধ রাখেন চালকেরা। তার ফলে দুর্ভোগে পড়েন ওই রুটের নিত্যযাত্রীরা।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে অতিরিক্ত সংখ্যক যাত্রী তোলার দাবি জানিয়ে এক দল লোক তপসিয়া-টিম্বার স্ট্রিট রুটের এক চালককে মারধর করে। মহেশ সাহু নামে ওই চালক গুরুতর জখম হন। তাঁকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই পার্ক সার্কাস এলাকার সাতটি রুটে অটো বন্ধ রাখেন চালকেরা। যার জেরে বিপদে পড়েন হাজার খানেক নিত্যযাত্রী।
ট্রাফিক পুলিশের অভিযোগ, এ দিন বিকেলে উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ডের কর্তব্যরত সার্জেন্ট চিন্ময় মহান্তকে অরবিন্দ সেতুর কাছে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করেন এক অটোচালক। সার্জেন্ট তাঁর কাছে বৈধ কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলেন। পুলিশি হয়রানির অভিযোগ তুলে এবং তার প্রতিবাদে ফের জোড়াবাগান-উল্টোডাঙা রুটে অটো বন্ধ রাখেন চালকেরা।
এ দিন একই ধরনের ঘটনা ঘটে টালিগঞ্জ-গড়িয়া অটো-রুটে। পুলিশ বিনা কারণে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইছে এবং তার ফলে রোজগার বন্ধ হচ্ছে, এই অভিযোগে ওই রুটের অধিকাংশ অটো টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর পাশে দাঁড় করিয়ে দেন চালকেরা। এ ছাড়াও অতিরিক্ত যাত্রী তোলার দাবিতে ফুলবাগান, বেঙ্গল কেমিক্যাল, গণেশ টকিজ-সহ বেশ কয়েকটি রুটে এ দিন কম অটো চলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দিনভর এমন ভোগান্তির খবর পেয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “অনেক জায়গায় সমস্যা হলেও, বেশ কিছু রুটে আজ অটো চলেছে। সরকার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে কিছু দিন মানুষের ভোগান্তি হবে। সে হয়রানি বন্ধ করতে পরিবহণ দফতর বিকল্প ব্যবস্থার ভাবনাচিন্তা করছে। তবে এ ভাবে মানুষের অসুবিধা করে অটোচালকদের কোনও লাভ হবে না।” |