তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে পোস্টার
তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুরসভার কাজে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগ তুলে পোস্টার পড়ল। মঙ্গলবার সকালে মহকুমাশাসকের দফতর ও পুরসভার দেওয়াল-সহ শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘রামপুরহাট পুরবাসী’ নামে দেওয়া ওই পোস্টারগুলি নজরে আসতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।
ওই পোস্টার আদতে পুরসভায় তৃণমূলের বহুদিন ধরে চলে আসা ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’কেই ফের সামনে আনল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গত ভোটে জেতার পরে তৃণমূল একক ভাবে পুরবোর্ড দখল করে। কিন্তু গত আড়াই বছর ধরে তৃণমূল ওই বোর্ড কার্যত মসৃণ ভাবে চালাতে পারছে না এই ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র জেরেই। মাত্র তিন মাস আগেই প্রাক্তন উপপুরপ্রধান, তৃণমূলের আব্বাস হোসেনের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণকে হাতিয়ার করে পুরসভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন অশ্বিনী তেওয়ারি-সহ কয়েকজন কাউন্সিলর। তাতে ১৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে কার্যত ১৫ জনেরই সায় ছিল। তখন রাজনৈতিক ‘দরাদরি’র চাপে পড়ে পুরপ্রধান বদলাতে ‘বাধ্য’ হয় শাসকদল তৃণমূল। পদ ছাড়েন পুরপ্রধান নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায় ও উপপুরপ্রধান আব্বাস হোসেন। অশ্বিনীবাবুকে পুরপ্রধান করার মধ্যে দিয়ে সে যাত্রায় পুরবোর্ড রক্ষা করে তৃণমূল।
এ দিনের পোস্টারগুলিতে তৃণমূলের সেই পরিচিত ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ই ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনায় নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। বিজেপির দুই কাউন্সিলর মাধবচন্দ্র সর্দার ও সুবর্ণা চৌধুরী বলেন, “এটা তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ।” তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতি ইঙ্গিত করে জেলা বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস চৌধুরীর কটাক্ষ, “একশ্রেণির তৃণমূল কাউন্সিলর পুরপ্রধানের কাজে খুশি না হয়ে এই ধরনের কাজকর্ম করে থাকতে পারেন। আমার মনে হয় তৃণমূলেরই কোনও বড় নেতার মদতে এ সব হচ্ছে।”
মঙ্গলবার সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি।
এ দিন পুরসভার দেওয়ালে সাঁটানো পোস্টারগুলি নজরে আসার পরপরই পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য তা ছিঁড়ে ফেলা হয়। কিন্তু কী বলছে ওই পোস্টার?
পোস্টারে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করে বলা হয়েছে, অশ্বিনীবাবুর প্রত্যক্ষ মদতে পুরসভার প্রশাসনিক ভবন, অতিথিশালা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে মদের আসর বসছে। ওই পোস্টারের আরও একটি অভিযোগ, পুরসভার জলপ্রকল্পের কাজে ঠিকাদারকে অগ্রিম পেমেন্ট করা হয়েছে। অভিযোগগুলি প্রসঙ্গে অশ্বিনীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “একেবারেই ভিত্তিহীন অভিযোগ।” তাঁর দাবি, “প্রথমত অভিযোগগুলি নিয়ে কোনও প্রমাণই নেই ওই পোস্টারে। তা ছাড়া পুর আইনের কোথাও এমন নিয়ম নেই যাতে বলা আছে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে টাকা দেওয়া যাবে না। আইন না জেনে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে।” এ ছাড়া পুরসভার বিভিন্ন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির যে অভিযোগ ওই পোস্টারে করা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন বলেই পুরপ্রধানের দাবি।
এ দিনের ঘটনায় যে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ই বেরিয়ে পড়ল তা স্বীকার করেও তৃণমূলেরই একটা অংশ মনে করছে, ব্যক্তিগত স্বার্থপূরণে বাধা পেয়েই কেউ কেউ এমন ‘অপপ্রচার’ শুরু করেছেন। এতে আখেরে যে রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলেরই ক্ষতি তাও তাঁরা মেনে নিয়েছেন। যদিও ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়েছেন রামপুরহাট শহর তৃণমূল সভাপতি সুশান্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “কাউন্সিলরদের মধ্যেই কেউ পুরপ্রধানের কাজকর্মে খুশি হতে না পেরে এই কাজ করে থাকতে পারেন। তবে আমাদের দলের মধ্যে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।” অন্য দিকে, পুরপ্রধান তৃণমূলের অশ্বিনী তেওয়ারি বলেন, “সবে তিন মাস পুরপ্রধান হয়েছি। এরই মধ্যে শহরে নানা উন্নয়নমূলক কাজকর্ম শুরু করেছি। তাতেই ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ রাতের অন্ধকারে পোস্টার দিয়েছেন।” তাঁর দাবি, পুরসভার উন্নয়ন বিরোধী কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থান্বেষী অংশই এই পোস্টারিংয়ের ঘটনায় যুক্ত।
পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এই ধরনের পোস্টারিংকে গুরুত্ব দিতে না চাইলেও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিকের কটাক্ষ, “পুরসভার ভেতরে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে কোনও ক্ষোভ থেকেই কেউ এ ভাবে পোস্টারিং করতে পারেন।” অন্য দিকে, পদচ্যুত উপপুরপ্রধান আব্বাস হোসেনকে এ দিনের পোস্টারিংয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” আব্বাসবাবুর এই নীরবতা যে ইঙ্গিতপূর্ণ সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.