দীর্ঘ ন’মাস পরে আবার মুখোমুখি আলোচনায় বসছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির শীর্ষ বৈঠক উপলক্ষে এই সপ্তাহে ইরান যাচ্ছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধানই। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার তেহরানে পার্শ্ববৈঠকে বসে তাঁরা দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতিকে ঝালিয়ে নেওয়ার কাজটি সারবেন। পাশাপাশি আলোচনায় আসবে দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিও।
গত নভেম্বরে মলদ্বীপে সার্ক সম্মেলনে শেষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি করেছিলেন দুই শীর্ষ নেতা। তার পরে বাণিজ্য থেকে নিরাপত্তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’তরফের নিয়মিত আদানপ্রদান চলেছে। মাস তিনেক আগে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ঢাকা সফরে গিয়ে বিপুল পরিমাণ ঋণ মকুবের সিদ্ধান্তও ঘোষণা করে এসেছেন। দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েও আলোচনা চলছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মনমোহন-হাসিনা বৈঠকটিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বাংলাদেশে নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, সে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হচ্ছে। গোটা অঞ্চলের শান্তি, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ধারাবাহিক দৌত্যের বিষয়টিকে গোড়া থেকেই অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তিনি নিজে এবং বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ নিয়মিত কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রেখেছেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলির সঙ্গে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে যে দিন তেহরানে বৈঠক করবেন, সে দিনই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন মনমোহন। এর থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে সুসংহত আলোচনা প্রকিয়াকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে দিল্লি।
অন্য দিকে নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিও যোগাযোগ বাড়াচ্ছে ভারতের সঙ্গে। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে এসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন সে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান এরশাদ। এই মুহূর্তে দিল্লি সফর সেরে কলকাতায় রয়েছেন বাংলাদেশে জোট সরকারের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ও ঢাকার সাংসদ রাশেদ খান মেনন। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতে আসতে পারেন বিএনপি নেত্রী তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-সহ ভারতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন।
এই মুহূর্তে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে সব চেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় তিস্তা নদীর জলবণ্টন চুক্তি রূপায়ণ। বাংলাদেশে ভোটের আগে এই চুক্তিটি সম্পন্ন করাটা খুবই কাঙ্ক্ষিত হাসিনার কাছে। ভারতেরও তা অজানা নয়। কিন্তু বিষয়টি আটকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে। প্রণববাবু ঢাকা সফরে গিয়ে হাসিনাকে জানিয়েছিলেন, ‘জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার’ কারণে বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্য তৈরিতে দেরি হচ্ছে। তবে দিল্লি যত দ্রুত সম্ভব এই চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রীও একই কথা বলবেন হাসিনাকে। তবে অন্যান্য সমস্ত ব্যাপারেই যে বাংলাদেশের জন্য ভারতের দরজা খোলা, এ কথাও মনমোহন জানাবেন হাসিনাকে। |