বুবুনের আইসক্রিম খাওয়া
বুবুন আজ সারা দিন বাড়িতে লক্ষ্মী হয়ে ছিল বলে বাবা অফিস থেকে ফিরে বুবুনকে বেড়াতে নিয়ে গেলেন। বুবুন বেড়াতে যেতে খুব ভালবাসে। দু’তিনটে দোকান থেকে এটা-সেটা কিনে বাড়ি ফেরার পথে বুবুন বলল, ‘আইসক্রিম কিনে দেবে না, বাবা?’
বাবা বললেন, ‘ঠিক আছে চলো।’ বলে বাবা আইসক্রিমের দোকানে নিয়ে গেলেন বুবুনকে। অত রকমের আইসক্রিম দেখে বুবুন সমস্যায় পড়ে গেল। কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে। অনেকক্ষণ দেখে বুবুন একটি আইসক্রিম পছন্দ করল।
বাবা সেটা দেখে বললেন, ‘হয়েছে? এ বার দামটা দিয়ে দিই?’
‘দিদির জন্যে কিনব না?’
‘দিদিকে তোমার থেকে একটু দিলেই হবে।’
ব্যস, বাবা ওই কথাটা বলতেই বুবুনের মুখ চুন হয়ে গেল!
‘দিদির এই ফ্লেভারটা ভাল লাগবে তো, যদি ভাল না লাগে?’
‘না, না, দিদির সব ফ্লেভারই ভাল লাগে’, বাবা বললেন।
‘ও’, বুবুনের মুখ কাঁচুমাচু।
‘এই ব্যাগটা একটু ধরো, আমি দামটা দিয়ে দিই’, বলে বাবা আইসক্রিমের দামটা দিতে যাবেন এমন সময় বুবুন বলল, ‘দাঁড়াও বাবা, দিদি যদি বাড়িতে না থাকে? যদি মিশাদিদিদের বাড়িতে গিয়ে থাকে?’
‘তা হলে আর কী হবে, মা বাটিতে করে দিদির জন্যে ফ্রিজে রেখে দেবে। দিদি পরে এসে খাবে।’
বাবা পকেট থেকে মানিব্যাগটা বার করতেই বুবুন প্যান্ট ধরে টানল।
বাবা বললেন, ‘আবার কী হল?’
‘দিদি তো মাঝে মাঝে মিশাদিদিদের বাড়িতে গিয়ে আইসক্রিম আর অন্য অনেক কিছু খায়, আমি তো তখন পাই না। তাই দিদিকে আইসক্রিম না দিই যদি?’
‘সে তোমার ইচ্ছে, কিন্তু মা কী বলেছে মনে নেই?’
বুবুন মাথা নিচু করে বলল, ‘ভাগ করে খেতে বলেছে! স্কুলে মিসও বলেছে একই কথা।’
‘তা হলে?’
‘তা হলে দিদিকে আইসক্রিম দেব। দিদির যদি স্কুলের মিসের কাছে বকা খেয়ে মন খারাপ থাকে, তা হলে এই আইসক্রিম খেয়ে ওর মন ভাল হয়ে যাবে, তাই না বাবা?’
‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই! তা তো হবেই। সবার সঙ্গে মিলেমিশে ভাগ করে খাওয়া খুব ভাল স্বভাব, বুঝেছ? এ বার দামটা দিই!’
‘দাঁড়াও বাবা!’
‘আবার কী হল?’
‘বাপ্পাকে আইসক্রিম দেব না?’
ছবি: দেবাশীষ দেব
বাপ্পা বুবুনদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। সে বুবুনের প্রিয় বন্ধু। দু’জনে একসঙ্গে খেলা করে।
‘তোমার ইচ্ছে হলে বাপ্পাকেও দিতে পারো।’
‘এই ফ্লেভারটা ওর পছন্দ হবে?’
‘সেটা তো জানি না। তোমার বন্ধু, তুমি জিজ্ঞেস করে নিয়ো। তবে, বাপ্পাও তো আইসক্রিম ভালবাসে, ওকে যা দেবে তা-ই খাবে।’
‘সবটা খেয়ে নেবে না তো?’
‘না, না, সব কেন খাবে? তুমি যতটা দেবে ততটাই খাবে। তা ছাড়া ওকেও তো ওর মা-বাবা মিলেমিশে ভাগ করে খেতে শিখিয়েছেন তাই ও কখনওই সবটা খেয়ে নেবে না!’
‘বাপ্পা যদি বাড়িতে না থাকে?’
‘সেও যদি না থাকে তা হলে আর ওর জন্যে রাখতে হবে না, তুমি আর দিদি খেয়ে নিতে পারো।’
‘তা হলে তো বাপ্পার সঙ্গে মিলেমিশে খাওয়া হবে না!’
‘ঠিক আছে বাবা! মা ওর জন্যেও বাটি করে ফ্রিজে রেখে দেবে না হয়!’
‘ও কি তা হলে কালকে খাবে?’
‘হ্যাঁ, কালকে খাবে।’
‘খারাপ হয়ে যাবে না তো?’
‘না, আশা করা যায় এক দিনে কিছু হবে না।’
‘আর টুপাই?’
টুপাই বাপ্পার ছোট ভাই। তার বয়স তিন মাস।
‘না, টুপাইকে দিতে হবে না। ও ছোট, আইসক্রিম খেতে পারে না।’
‘টুপাই খালি বোতলে করে দুধ খায়, না বাবা?’
‘হ্যাঁ।’
‘আমি যখন টুপাইয়ের মতন ছোট ছিলাম তখন আমিও আইসক্রিম খেতে পারতাম না, তাই না বাবা?’
দোকানি এ বার অধৈর্য। বলল, ‘দাদা, আইসক্রিমের দামটা দেবেন তো? আইসক্রিম তো গলে জল হয়ে গেল, ছেলের কথার ঠেলায়!’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, এই নাও’, বলে বাবা দামটা দিতেই বুবুন বলল, ‘কী হবে বাবা, আইসক্রিম যে গলে যাচ্ছে!’
‘কী আর হবে! তুমি আর আমি ভাগাভাগি করে এখুনি খেয়ে নেব। ওটার যা অবস্থা বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না!’
‘ও তা হলে দিদি আর বাপ্পা? ওরা আইসক্রিম খাবে না? ওদের জন্যে অন্য কিনবে?’
‘না আর আইসক্রিম না।’
‘ঠিক বলেছ বাবা। আইসক্রিম মিলেমিশে খেতে বড্ড ঝামেলা হচ্ছে। ওদের জন্যে বরং চকোলেট কিনে নাও তমালকাকুর দোকান থেকে। তার পর ওদের দু’জনকেই বলব আমার সঙ্গে ভাগ করে খেতে।’ বুবুন খুব আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করল। বাবার সঙ্গে আইসক্রিম ভাগ করে খেতে ওর মনে দ্বিধা নেই, কারণ ও জানে বাবা ওকে বড় অংশটাই দেবেন, দিদি আর বাপ্পাকে নিয়ে সেই ব্যাপারটায় ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিল না বুবুন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.