পুস্তক পরিচয় ২...
বিজেতা ও বিজিতদের মধ্যে যোগসূত্র
‘সুদীর্ঘ চারি বৎসর যাবৎ মুদ্রা-রাক্ষসীর কবলে আবদ্ধ থাকিয়া, “বঙ্গে স্বূফী-প্রভাব” সাধারণ্যে প্রকাশিত হইল। ইহাতে বঙ্গের মুসলিম্ সংস্কৃতির যে দিকটি চিত্রিত করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে, তাহা বঙ্গীয় মুসলিম্ সংস্কৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ দিক বলিয়া আমার বিশ্বাস।... ইহাতে যদি কোন মুসলমান মনে আঘাত পাইয়া থাকেন, তাহা আমার ইচ্ছাকৃত নহে...।’ বইটির শুরুতেই জানাচ্ছেন মুহম্মদ্ এনামুল্ হক্। প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫। বিবেকানন্দ বুক সেন্টার থেকে ওই বঙ্গে স্বূফী প্রভাব/বঙ্গীয় মুসলিম-সংস্কৃতির ইতিহাসের অধ্যায় (৩০০.০০) বইটি ফের প্রকাশিত হল আনন্দ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায়। ভূমিকায় সম্পাদক বলেছেন, ‘সে সময়ে পাঠকসমাজের কাছে বাংলাদেশে সুফিবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে বাংলায় লেখা কোনো গ্রন্থ বা প্রবন্ধ চোখে পড়ে না।’ এনামুল্ হক্ এ-বইতে তাঁর ‘স্বূফীরাই বাঙ্গালার মুসলমান বিজেতা ও হিন্দু বিজিতদের মধ্যে মিলনের যোগসূত্র’ শীর্ষক অংশে লিখছেন ‘ধর্ম্মান্ধ ও গোঁড়া বিজেতৃগণের আপ্রাণ চেষ্টা যেখানে নিতান্তই ব্যর্থ ও নিষ্ফল বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে, মুসলমান সাধকদের উদার ভাব ও শান্ত প্রবর্ত্তনা সেখানে আশ্চর্য্যরূপে সাফল্য মণ্ডিত হইয়াছে। সকলস্তর ও সকল সম্প্রদায়ের সহিত অবাধ মিলনের দ্বারা, বিজেতা ও বিজিতদের মধ্যে এই মুসলমান সাধকগণ যোগসূত্রের সৃষ্টি করিয়াছিলেন।’
এনামুল্ হক্-এর বইটির পরেও বাংলায় সুফিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে অনেক তথ্যই আড়ালে থেকে গিয়েছিল। সেই অসম্পূর্ণতা পূরণের তাগিদেই আনন্দ ভট্টাচার্য লিখেছেন বাংলায় সুফি আন্দোলন (আশাদীপ, ২৭৫.০০)। সুফি ইতিহাস চর্চার ধারা, মধ্য এশিয়ায় এর প্রভাব, সুফিবাদের বৈশিষ্ট্য ও পরম্পরা, সুফি পরিমণ্ডল গঠন ও আধিপত্য বিস্তার ইত্যাদি বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত এ-বই। শেষোক্ত অধ্যায়ে আনন্দবাবু লিখেছেন, ‘বাংলায় সুফিদের অনুপ্রবেশ ব্যাখ্যা করতে হলে প্রথমেই বীরভূম জেলার কথা বলতে হয়। বীরভূম সীমান্ত অঞ্চল বা প্রান্তিক সীমায় অবস্থিত। বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের সতেরো বছর পরে বীরভূম জেলায় ১২২১ সালের ২৯ জুলাই এক শিলালিপি থেকে জানা যায় যে সেখানে এক সুফি খানকা গড়ে উঠেছিল। ইরান থেকে আসা এই সুফি যদিও নিজেকে ফকির বলে পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আরও একাধিক সুফি দরবেশের আবির্ভাব হয়েছিল।... মধ্য এশিয়া থেকে আগত সুফি সম্প্রদায় লক্ষ্মণাবতী, গৌড় ও পাণ্ডুয়াকে কেন্দ্র করে সুহরাবর্দী, ফিরদৌসী ও চিশ্তি সিলসিলার প্রসার ঘটিয়েছিল।’ বইয়ের শেষে আছে একটি মূল্যবান গ্রন্থ ও প্রবন্ধপঞ্জি।
কল্পনা সেনের রামপ্রসাদ সেন ও সমকালীন ভারতবর্ষ/ ষোড়শ শতাব্দী-অষ্টাদশ শতাব্দী-তে (সুচেতনা, ৩০০.০০) কুমারহট্টের আঞ্চলিক ইতিহাস, রামপ্রসাদ সেনের পারিবারিক ইতিহাস, তাঁর অধ্যাত্মবাদ ও ভারতীয় রাগসঙ্গীত, বাংলার বারো ভুঁইয়ার ইতিবৃত্ত ইত্যাদি। যত্ন করে রামপ্রসাদের গানের (তাল-সহ) সংকলনও করেছেন কল্পনা, তাতে বাঙালির প্রিয় সব গান
আমি কি দুখেরে ডরাই?
ভবে দেও দুঃখ
মা আর কত চাই
ধম্মপদ (১২০.০০) তিব্বতি থেকে হিন্দি অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করেছেন ওয়াংচুক দোরজি নেগি, তা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন রামকৃষ্ণ দাস, প্রকাশক পরশপাথর। সদ্য লাদাখে তিব্বতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল হলে এক অনুষ্ঠানে চতুর্দশ দলাই লামা এই বাংলা ধম্মপদ-এর উদ্বোধন করলেন। বুদ্ধদেবের বাণী ও উপদেশের সংগ্রহ বৌদ্ধ সাহিত্যের এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘ভগবদ্গীতায় ভারতবর্ষ যেমন আপনাকে প্রকাশ করিয়াছে, ... ধম্মপদং গ্রন্থেও ভারতবর্ষের চিত্তের একটি পরিচয় তেমনি ব্যক্ত হইয়াছে।’ নেগি তাঁর প্রাক্কথন-এ জানিয়েছেন ‘মানুষ কী জানে তা বড় কথা নয়, মানুষ কী কর্ম করে তার উপরেই জোর দিয়েছিলেন তথাগত বুদ্ধ। করা এবং জানার মধ্যে করাকেই তিনি প্রধান মানতেন। ব্যাখ্যা ছাড়া ধম্মপদকে ঠিক ভাবে বোঝা যাবে না।... ধম্মপদ পড়া মানে হল সাক্ষাৎ তথাগত বুদ্ধের সঙ্গে কথা বলা। তাঁর ব্যক্তিত্বকে বোঝা।’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.