কাউকে চুরির অভিযোগে ধরা হয়। কেউ ছিনতাইয়ে যুক্ত সন্দেহে ধরা পড়ে। সাধারণত, ধৃতদের জেরার জন্য লকআপে রাখা হয়ে থাকে। সেটাই দস্তুর। ইদানীং বালুরঘাট থানার পুলিশ ওই ধরনের অভিযোগে কাউকে ধরলে চট করে লকআপে রাখার ভরসা পাচ্ছে না। কারণ, লকআপে রাখার পরে সন্দেহভাজনরা এমন সব বায়না জুড়ে দিচ্ছে তা মেটাতে না-পারলে গারদের লোহায় মাথা ঠুকে রক্ত বার করে ফেলছে তাদেরই কেউ কেউ। খোঁজখবর করে পুলিশ জেনেছে, ধৃতদের যে অংশটি মাদকাসক্ত, তারাই নেশার টানে উন্মত্ত হয়ে ওই কাণ্ড ঘটাচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ধরনের সন্দেহভাজনদের একটি চক্র ‘কিলবিশ’ নামে একটি গোষ্ঠী গড়ে নানা অপরাধমূলক কাজকর্ম করছে। তাই পুলিশ সন্দেহভাজন মাদকাসক্তদের ধরার পরে কোনও সরকারি হোমে বা পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার কথা ভাবছে। অথচ বালুরঘাটে তেমন হোম নেই। ফলে, পুলিশের সমস্যা আরও বেড়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ বলেন, “বালুরঘাট শহরে হেরোইন, ব্রাউন সুগার সরবরাহকারীদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ধরা হয়েছে কয়েকজন কারবারীকে। ফলে পাউডারের সরবরাহ না পেয়ে অনেকক্ষেত্রে ব্যাথা ও কাশির সিরাপের মতো ওষুধ নেশা হিসাবে ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে কিছু মাদকাসক্ত। অনেকে ধরাও পড়ছে। এ সব মাদকের নেশা বন্ধ করতে হলে সকলের সাহায্য দরকার। সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে।” শুধু পুলিশ নয়, মাদকাসক্ত বন্দিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষও। কিছুদিন আগে টিকটিকির লেজ পোড়াতে দেখা যায় বালুরঘাট জেলের কয়েক বন্দিকে। তার পরে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই বন্দিদের জেলের হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা করাতে হয়। সম্প্রতি বালুরঘাট থানায় আইসি হিসেবে যোগ দেওয়ার পরে মনোজ চক্রবর্তীও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আইসি জানান, মাদকাসক্তদের সুস্থ জীবনে ফেরাতে শিলিগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ইতিমধ্যে চার জনকে চিকিৎসার জন্য ওই সংস্থার পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়ে সুস্থ করে তুলেছে। বালুরঘাট থানার কয়েকজন অফিসার জানান, মাদকাসক্তদের জন্য শহরে চুরি ছিনতাই বাড়ছে। সে জন্য নজরদারি বাড়িয়ে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করার পরে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশই নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ধরার পড়ার পরে নেশার রসদ না-পেলে লকআপে রক্তারক্তি ঘটানোর চেষ্টা করছে। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “কিলবিশ নামের ওই গ্রুপের ছেলেদের নিয়ে ভয় বেশি। লকআপের ভিতর কিছু হয়ে গেলে চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।” বালুরঘাট শহরের ৩ দিকে বাংলাদেশ সীমান্ত। চোরাচালানের সুবাদে শহরে মাদকের রমরমা বলে অভিযোগ রয়েছে। শহরবাসীদের তরফেও মাদক বিরোধী প্রচারাভিযান বাড়ানোয় জোর দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। |