কিশোর মৃত, হাতুড়ের বাড়ি ভাঙচুর
হাতুড়ের কাছে চিকিৎসা করানোর পরে এক কিশোরের মৃত্যু হলে সেই হাতুড়ের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে সাগরদিঘির কাবিলপুরে। ওই কিশোরের নাম আরিয়ান ইসলাম (১৩)। তার বাবা আতাউর রহমান অভিযোগ করেছেন, “ওই হাতুড়ের চিকিৎসার পরেই আমার ছেলে মারা গিয়েছে।” এই অভিযোগ তিনি থানাতেও করেছেন।
তিনি জানান, কয়েক দিন ধরেই আরিয়ানের জ্বর হচ্ছিল। তাঁরা থাকেন রঞ্জিতপুরে। মঙ্গলবার সকালে পাশের গ্রাম কাবিলপুরে ওই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান ছেলেকে। ওই হাতুড়েই তাঁর ছেলের রক্ত পরীক্ষা করেন। আতাউর বলেন, “রক্ত পরীক্ষায় জানা যায়, ছেলের টাইফয়েড হয়েছে। সেই মতো ওই চিকিৎসক আমার ছেলেকে দু’টি ইঞ্জেকশন দেন। তারপরে বাড়ি নিয়ে চলে আসি আরিয়ানকে। বাড়ি ঢুকতেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে আমার ছেলে। তখন ওই হাতুড়েকে আবার খবর দিয়ে ডেকে পাঠাই। তিনি ফের দু’টি ইঞ্জেকশন দেন। তাতে ছেলের অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় আমাকে বলেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে।” তিনি তখন আরিয়ানকে সাগরদিঘি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানকার জরুরি বিভাগ থেকেই আরিয়ানকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে। সেই দিন রাত সাতটা নাগাদ তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছন। পৌনে আটটা নাগাদ মারা যায় আরিয়ান। আতাউর বলেন, “ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শেষ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল, তাঁদের কিছু করার ছিল না।”
বুধবার গ্রামে দেহ নিয়ে এসে কবর দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামে এই নিয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। আরিয়ান ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিল। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আরিয়ানের ব্যবহারও ভাল ছিল। গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, “সামান্য জ্বরে ছেলেটির মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারেনি। সকলেই মনে করছিল, ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের জন্যই এই কাণ্ড ঘটেছে।” সেই ক্ষোভই ভেঙে পড়ে বৃহস্পতিবার সকালে। আতাউর বলেন, “ওই হাতুড়ের বাড়ি গিয়েছিলাম আমরা। জানতে চেয়েছিলাম কেন মারা গেল আমার ছেলে। তখনই উত্তেজিত হয়ে সামান্য ভাঙচুর করেছেন কয়েকজন। পরে আমরাই তাঁদের সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।”
ওই হাতুড়ের অবশ্য দাবি, সম্পূর্ণ অকারণে ভাঙচুর করা হয়েছে। তাঁর ফার্মাসিস্টের ডিগ্রি রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, “আমি ওই ছেলেটিকে ডেরিফাইলিন ডেকাড্রন ইঞ্জেকশন দিয়েছিলাম। তাতে খারাপ কিছু হওয়ার প্রশ্নই নেই। বাড়িতে গিয়েও তাকে সেই ইঞ্জেকশনই আবার দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ছেলেটির মৃত্যু হয়। কিন্তু তাতে আমার কোনও হাত ছিল না। গ্রামবাসীরা আমার বাড়ি ভাঙচুর করেছে।” কিন্তু চিকিৎসা ঠিক মতোই হলে, কেন ওই কিশোরের মৃত্যু হল, তার কোনও জবাব তিনি দিতে পারেননি। মুর্শিদাবাদের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, “যে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে বলে ওই হাতুড়ে দাবি করছেন, তা মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকারি হাসপাতালে ব্যবহার করা হয়। এতে কারও মৃত্যু হতে পারে না।” তাঁর অনুমান, “যথা সময়ে যে চিকিৎসা দরকার ছিল, তা হয়নি বলেই ওই কিশোর মারা গিয়েছে।” অজয়বাবুর বক্তব্য, “কী হয়েছে, তা আমরা পুরোটা জানি না। ওই চিকিৎসক যা যা দাবি করছেন, সেটাই হয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়। ময়নাতদন্ত করা উচিত ছিল। তবে রোগীর বাড়ির লোক তা করতে চাননি।” সাগরদিঘি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র রঞ্জিতপুর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার। গ্রামের কাছে গৌরীপুরে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও তাতে কেবল বহির্বিভাগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা এক্রামুল হক বলেন, “সামান্য অসুখ বিসুখে আমরা হাতুড়েদের কাছেই যাই। হাসপাতালে যেতে গেলে সারা দিনের কাজ নষ্ট হয়। ওই হাতুড়ের যথেষ্ট পসারও রয়েছে।”
অজয়বাবুর বক্তব্য, “গ্রামাঞ্চলে হাতুড়েদের চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। সরকারি হাসপাতালে সব মানুষকে এখনও নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি হাতুড়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.