অভাবের তাড়নায় তিনি কিডনি বিক্রি করলেও টাকা মেরে দিয়েছে দালাল। কলকাতা লাগোয়া গড়িয়ার এক তরুণীর এই অভিযোগ পেয়ে দুর্গাপুরের বেনাচিতি থেকে ওই দালাল ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
যিনি অভিযোগ জানিয়েছেন, তিনি বিবাহিত হলেও বর্তমানে একাই থাকেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে বেনাচিতির নতুনপল্লি থেকে শ্রীকান্ত শীল ও তাঁর স্ত্রী সীমাকে ধরা হয়। দু’জনেই কিডনি পাচার চক্রে জড়িত থাকতে পারেন বলে পুলিশের সন্দেহ। শ্রীকান্ত আসলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের বাসিন্দা, বেনাচিতিতে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর আদালত তাঁদের ছয় দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। অভিযোগকারিণীর জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়।
পুলিশের কাছে অভিযোগে তরুণী জানিয়েছেন, বছর দুয়েক আগে দক্ষিণেশ্বরে এক সাধুর মাধ্যমে শ্রীকান্তের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল। আর্থিক টানাটানি থেকে রেহাই পেতে শ্রীকান্ত তাঁকে কিডনি বিক্রির পরামর্শ দেন। সব ব্যবস্থা করে দেবে বলেও জানান। বিনিময়ে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি রাজি হয়ে যান। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কলকাতার এক নামী নার্সিংহোমে তাঁর কিডনি কেটে রোগীর দেহে বসানো হয়। তরুণীর অভিযোগ, “সেরে উঠে আমি শ্রীকান্তর কাছে টাকা চাই। কিন্তু এক টাকাও দেয়নি।” উল্টে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি পুলিশকে জানান। |
তরুণী জানান, বছরখানেক আগেই তিনি কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি থানায় শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রীকান্ত ধরা পড়েননি। পরে খোঁজখবর নিয়ে তিনি শোনেন, বেনাচিতিতে শ্রীকান্তের শ্বশুরবাড়ি। মাঝে-মধ্যেই সেখানে সস্ত্রীক গা ঢাকা দিয়ে থাকেন তিনি। বুধবার এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত হয়ে দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। পুলিশের দাবি, ধৃতরা জেরায় একাধিক বার কিডনি কেনাবেচার কথা কবুল করেছে। মূলত কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় তাদের কারবার সীমাবদ্ধ। দু’জনের বিরুদ্ধেই আর্থিক প্রতারণা, ভীতি প্রদর্শন ও বেআইনি অঙ্গ প্রতিস্থাপন জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কলকাতা ও দুই চব্বিশ পরগনায় একাধিক বার কিডনি পাচার চক্রের হদিস মিলেছে। অভিযান চালানো হলে কিছু দিন কারবার বন্ধ থাকে। তার পরে ফের শুরু হয়। মূলত আর্থিক সঙ্কটের কারণেই অনেকে এই সব চক্রের কাছে কিডনি বিক্রি করেন। কিছু সময়ে জোর করে বা ভুল বুঝিয়ে কিডনি নেওয়ার মতো অভিযোগও সামনে এসেছে। আপাতত ধৃত দু’জনকে জেরা করে কিডনি পাচার চক্রের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। |