|
|
|
|
মজুরি কম, প্রতিবাদে চা-শ্রমিকেরা |
নিলয় দাস • বীরপাড়া |
অন্য বাগানে ৯০ টাকা মজুরি পেলেও রামঝোড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ ত্রিপাক্ষিক চুক্তি লঘ্নন করে শ্রমিকদের ৬৭ টাকা মজুরি দেওয়ার প্রতিবাদে সরব হল শ্রমিকরা ৯০ টাকা মজুরির দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে টানা আড়াই ঘণ্টা কাজে না গিয়ে বাগানের অফিসের সামনে গেট মিটিং করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে শ্রমিকরা। জলপাইগুড়ির জেলা শাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “রামঝোরার শ্রমিকদের অন্ত্যোদয় যোজনা রেশন ও ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে আজও সহায়তা করা হচ্ছে মালিক পক্ষ কেন মজুরি থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে তা বুঝতে পারছি না বিষয়টি শ্রম দফতরকে জানানো হয়েছে।” কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম অধিকর্তা মহম্মদ রিজাউনুর। তাঁর কথায়, “৯০ টাকার কম বেতন শ্রমিকদের দেওয়া হবে তা ভেবে পাচ্ছি না। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি ভঙ্গ করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার ঘটনা নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে অভিযোগ জমা পড়লে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।” ২০০২ সালের ১১ আগস্ট ডুয়ার্সের বীরপাড়ার রামঝোরা চা বাগান বন্ধ করে চলে যায় মালিক পক্ষ। বাগানের শ্রমিকরা রীতিমত বিপাকে পড়ে যান। অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে এবং অর্ধাহারে দিন কাটিয়ে নানান অসুখ বিসুখে পড়ে শ্রমিক সহ তাদের পরিবারের বহু মানুষের মৃত্যু হয়। রামঝোরা বাগানের দুরবস্থার কথা শুনে বাগানে যান তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। এর পর নড়ে চড়ে বসে তৎকালীন বাম সরকার শ্রমিকদের স্বল্প মূল্যে চাল,গম সরবরাহ থেকে চিকিৎসা ও ১০০ দিনের কাজ শুরু করা হলে মৃত্যুর হার অনেকটা কমে। বিশ্ব বাজারে ভারতীয় চায়ের চাহিদা বাড়তে শুরু করার পরে ২০১০ সালে বাগানটি চালু করেন নতুন মালিক পক্ষ। বাগানটি খোলার পর উৎপাদন তেমন হবে না সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষে অন্ত্যোদয় যোজনার চাল, গম ও ১০০ দিনের কাজ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। ২০১০ সালে শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৬৭ টাকা। গত বছর ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বাগান শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী, এপ্রিল মাস থেকে ৫ টাকা মজুরি বেড়ে বর্তমানে বাগান শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৯০ টাকা। ব্যতিক্রম শুধু রামঝোরাতে। গাছ থেকে পাতা মিলছে না বলে তারা ৬৭ টাকার বেশি মজুরি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। দ্রুত বাড়তি মজুরি দেওয়ার আশ্বাস দিলে প্রথম দিকে শ্রমিকরা আন্দোলনে যাননি। এখন কবে মজুরি বাড়বে সে আশ্বাস মালিক পক্ষ না দেওয়ায় শ্রমিকরা আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেন। এন ইউ পি ডব্লু নেতা মনি ডারনাল এবং সিটু নেতা রবীন রাই এক সুরে বলেন, “বন্ধ থাকাকালীন বাগানের মানুষ দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন করলে বাগান বন্ধ হবার ভয়ে আতঙ্কিত ছিলেন। তারা মালিম সে সুযোগ নিয়ে ৬৭ টাকার বেশি মজুরি দিচ্ছেন না। কর্তৃপক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করছে মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে তাই তারা আজ আন্দোলনে নেমেছে প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগী না হলে আন্দোলন চলবে।” বাগানের শ্রমিক নেতা রমেশ শর্মা বলেন, “১১০৩ জনের মধ্যে কাজে নেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৮৪ জন শ্রমিককে প্রশাসন রেশন দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ আমাদের ন্যায্য মজুরি ৯০ টাকা কেন দিচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না বাগানে ফের অভাব দেখা দিচ্ছে।” বাগানের ম্যানেজার হেমন্ত পোপলি বলেন, “বাগানের ৪৫২ হেক্টর জমিতে চা গাছ রয়েছে পুরোটাই বহু পুরনো গাছ আমরা ৪০ শতাংশ জমিতে নতুন চারা লাগিয়েছি তেমন ভাবে উপাদন মিলছে না আগামী দু বছরের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শ্রমিকদের পুরো মজুরি মিলবে বলে জানিয়েছি আমাদের দিকটা তাদের ভাবা উচিত।” রামঝোরা বাগানের মিডল লাইনের বাসিন্দা দিওয়ান ছেত্রীর পরিবারে সাত জন সদস্য তার উপার্জনে সংসার চলে তাঁর কথায়, “৬৭ টাকা দিয়ে কী হয়, আজকাল কী নিদারুণ কষ্টে আমরা এখানে বেঁচে রয়েছি তা আমরাই জানি।” |
|
|
|
|
|