|
|
|
|
দুর্নীতির প্রতিবাদে পথে যুব কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
ঢালাও বেআইনি নির্মাণ চললেও স্রেফ মোটা টাকা লেনদেনের জন্য কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন পুরসভা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলে অভিযোগে পথে নামল যুব কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি পুরসভায় ঘটনাটি ঘটেছে। তার আগে হিলকার্ট রোডে মিছিল করে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত এবং বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা সাহার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শ্লোগান দেন। পরে পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধানকে স্মারকলিপি দেন। ১০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের, প্রয়োজনে পুরসভা অচল করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি নকশা অনুমোদন ছাড়াই ১১টি ভবনের নির্মাণ কী ভাবে চলছে তা নিয়ে মাসিক অধিবেশনে প্রশ্ন ওঠে। পুরসভা থেকে ডেপুটি মেয়র-সহ ৩ জন মেয়র পারিষদ এবং আধিকারিকেরা পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থাকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। বেআইনি নির্মাণের ছবি তোলা হয়। তাও বেশ কিছু বেআইনি নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ায় লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন যুব কংগ্রেসের শিলিগুড়ি বিধানসভা কমিটির সভাপতি পিন্টু ঘোষ। তাঁদের অভিযোগ, “অবৈধ নির্মাণ নিয়ে আগেও অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন হচ্ছে বলে আমাদের সন্দেহ। সংশ্লিষ্ট মেয়র পারিষদ, মেয়রের ভূমিকা নিয়েও আমাদের সন্দেহ রয়েছে। আশা করি, ১০ দিনের মধ্যে বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। না হলে আমাদের সন্দেহ পুরোপুরি সত্যি বলে প্রমাণিত হবে। তখন আমরা আরও বড় আন্দোলনে নামব। শিলিগুড়ি জুড়ে প্রচার করে জনমত সংগঠিত করব।” এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় উদ্বিগ্ন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। ঘটনাচক্রে, গৌতমবাবু এখনও শিলিগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলরও। |
|
অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মেয়রের দফতরের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: কার্তিক দাস। |
তিনি বলেন, “তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের ক্ষমতায় থাকা এই পুরবোর্ডের উপরে মানুষের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। তাই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রেখেই সব সময় চলতে হবে। বাসিন্দাদের প্রত্যাশায় যাতে আঘাত না দেওয়া হয় তা পুর কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে।” মেয়র অবশ্য দলের যুব সংগঠনের ওই আন্দোলনকারীরা দলের কেউ নয় বলে দাবি করেছেন। মেয়র বলেন, “যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের আন্দোলনের ব্যাপারে দলের রাজ্য বা জেলা কমিটি অনুমোদন নেই। কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক পুরসভায় এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বলে শুনেছি। তাঁরা আমার কাছে আসেননি। এঁরা যুব কংগ্রেসের কেউ বলে মনে করি না।” মেয়রের বক্তব্য, “আমি নিজে কোনও অন্যায় করিনি। কোনও আর্থিক লেনদেনে জড়িত বা অবৈধ কাজ করেছি প্রমাণ থাকলে যে কেউ আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন। যে ১১টি ভবনের নির্মাণ কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলির নকশা আটকে রাখা হয়েছে। পুরসভার আইন সেলের মত নিয়েই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেজন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে। অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার প্রয়োজন হলেও তা করতে আমরা পিছপা হব না।” তবে মেয়র পারিষদ বা আধিকারিকদের কেউ এ ব্যাপারে ঘুষ নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন না। বিল্ডিং বিভাগে মেয়র পারিষদ সীমা সাহা বলেন, “অভিযোগ যে কেউ তুলতেই পারেন। তাতে আমাদের কিছু করার নেই। দলেরই কোনও কাউন্সিলর পদ পেতে আড়াল থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে এ সব করাচ্ছেন।” সীমাদেবীর বক্তব্য সমর্থন করেন মেয়রও। এই ব্যাপারে মেয়র ও সীমা দেবীর অভিযোগের তির যাঁর দিকে, সেই ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি সুজয় ঘটক বলেন, “অবৈধ নির্মাণ নিয়ে লেনদেনের অভিযোগ তো শহরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। ওই নির্মাণ ভেঙে দিলেই লেনদেনের অভিযোগ মিথ্যে বলে প্রমাণ হয়ে যাবে। যুব কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি দিয়েছে শুনেছি। এটা তো দলের পক্ষে ভাল ব্যাপার। অবৈধ নির্মাণের পক্ষে সওয়াল করতে ওঁরা তো যাননি। ওঁদের উৎসাহ না-দিয়ে দোষী বলে বেআইনি কাজে প্ররোচিত করতে পারব না।” তাঁর দাবি, তিনি কোনও পদের প্রত্যাশী নন, বরং দলের এক জন সাধারণ কর্মী তথা কাউন্সিলর হিসেবেই কাজ করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। এ দিকে, পিন্টুবাবুরা চলে যাওয়ার পর যুব কংগ্রেসের দার্জিলিং লোকসভা কমিটির তরফে কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়ে জানানো হয়, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটকের প্ররোচনাতেই পিন্টুবাবু এবং কিছু লোকজন মেয়রের নামে কুৎসা রটাতে চাইছেন। যুব কংগ্রেসের জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় নেতৃত্ব তাদের সমর্থন করে না বলে জান যুব কংগ্রেসের দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায়চৌধুরী। তবে পুর কমিশনার বলেছেন, “অবৈধ নির্মাণের বিষয়ে অভিযোগের বিষয়গুলি তিনি পুরবোর্ডের নজরে আনবেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।” |
|
|
|
|
|