|
|
|
|
‘অভিযুক্ত’ জেলা সম্পাদক |
হস্তক্ষেপের দাবি, ফেসবুকে মমতাকে আর্জি ফব নেতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আলিপুরদুয়ার |
গোষ্ঠী-কোন্দলে এমনিতেই জেরবার বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। এ বার জেলা সম্পাদক ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনার নাম করে বহু টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন দলেরই এক নেতা। ফ ব-র আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য অলোক রায়ের অভিযোগ জানানোর পদ্ধতিও অভিনব! সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ‘ফেসবুক’-এ অভিযোগপত্র ‘আপলোড’ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ওই নেতা।
এই ঘটনায় স্বভাবতই ফ ব-র অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। সাংগঠনিক কারণেই জলপাইগুড়ি জেলা কমিটি ভেঙে আলিপুরদুয়ারের জন্য পৃথক সাংগঠনিক কমিটি গড়েছিল ফ ব। আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক করুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দলে আলোচনা করে কেউ এমন অভিযোগপত্র দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের দলের কেউ যদি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদেরই নেতার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পাঠিয়ে থাকেন, তা হলে তার দায় অভিযোগকারীকেই নিতে হবে।” পাশাপাশি, জেলায় দলীয় পর্যায়েও কী ঘটেছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ফ ব-র জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক গোবিন্দ রায় অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অলোকবাবুর বক্তব্য, ২০১০ সালে আলুর অত্যাধিক ফলন হওয়ায় অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহ দফতর জলপাইগুড়ির একটি সমবায়ের মাধ্যমে আলু কেনে। ওই সমবায়ের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন জলপাইগুড়ির তদানীন্তন ফ ব বিধায়ক গোবিন্দবাবুর স্ত্রী সবিতাদেবী। আলু কেনার জন্য জলপাইগুড়ির কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ লক্ষ টাকার ওভার ড্রাফ্ট দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে, গোবিন্দবাবুই ওই সমবায় ব্যাঙ্কের সভাপতি ছিলেন। অলোকবাবুর অভিযোগ, যে চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনা হয়েছে বলে সরকারি নথিতে দেখানো হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিষয়টি জানেন না। অলোকবাবুর কথায়, “আমি তথ্য জানার অধিকার আইনের মাধ্যমে আলু চাষিদের নামের তালিকা সংগ্রহ করেছি। তা নিয়ে খোঁজখবর করে দেখেছি, অধিকাংশ চাষিই আলু কেনার বিষয়টি জানেন না। ওই তালিকায় এক জন লোকই নানা নামে সই করেছেন বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।”
তবে দলের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক গোবিন্দবাবু বিষয়টিকে ‘খুব একটা গুরুত্ব’ দিতে চাননি। তিনি বলেন, “অলোক অনেক দিন ধরে আমার কাছে চাকরির জন্য ঘোরাঘুরি করেছে। আমি বিধি ভেঙে চাকরি দিতে পারিনি। এখন চিঠি-চাপাটি লিখে কিছু নথিপত্র বার করে নানা জায়গায় ছুটছে শুনেছি। ওই সময়ে আলু কেনায় কোনও দুর্নীতি হয়নি। অভিযোগও ঠিক নয়। এ ভাবে আমাকে বিব্রত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না।” ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটির ওই সদস্য যে ঘটনার কথা বলছেন, সেই ব্যাপারে আগেই পরিবর্তনের সরকারের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল। সরকার তদন্তও করেছে। বিষয়টি নতুন নয়।”
আলিপুরদুয়ারের সূর্যনগরের বাসিন্দা অলোকবাবুর দাবি, তথ্য জানার অধিকার আইনে তিনি ৩১০ পাতার তালিকা পেয়েছেন। তাতে ১৬৭ পাতা রয়েছে আলিপুরদুয়ার-১ ও ২ নম্বর ব্লক থেকে আলু কেনার বিষয়ে। তাঁর অভিযোগ, “তালিকায় যে সমস্ত কৃষকের নামে সই করা হয়েছে, তা এক জনেরই হাতের লেখা। বিষয়টি আলিপুরদুয়ার-১ ও ২ নম্বর ব্লকের বিডিও-দের জানিয়েছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ফেসবুকের মাধ্যমে তথ্য-পরিসংখ্যান জানিয়ে অভিযোগ করেছি।” দলের বৈঠকে বিষয়টি তোলেননি কেন? অলোকবাবুর জবাব, “এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। দলকে এর মধ্যে জড়াতে চাই না।”
তবে আলিপুরদুয়ার-১ বিডিও প্রদীপ্ত ভগত জানান, অলোকবাবু যে অভিযগোপত্র দিয়েছেন, তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “দু’টি মাস্টার রোলের পাতা অলোকবাবু দিয়েছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, ২০১০ সালে এখানে আলু কেনা হয়েছে কি না? তা নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। তবে প্রাথমিক ভাবে মাস্টার রোল দেখে আমাদেরও কিছু সন্দেহ হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|