পুলিশের ‘অকর্মণ্যতা’র জন্য কিছু দিন আগেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দাকে ডেকে পাঠিয়ে তিরস্কার করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তার পরেও কলকাতা বা রাজ্য পুলিশে গয়ংগচ্ছ ভাব না-কাটায় বৃহস্পতিবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেলের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই সঙ্গে তিনটি মামলায় চার-চার জন পুলিশ সুপারকে তলবও করেছে তারা।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেলের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছে, ঠিক এক সপ্তাহ পরে, ৩০ অগস্ট বেলা সাড়ে ১০টায় উচ্চ আদালতে হাজির হতে হবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারদের। তারও এক সপ্তাহ পরে, ৬ সেপ্টেম্বর হাজির হতে হবে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, জেলা পুলিশ নিষ্ক্রিয় ও উদাসীন এবং তাঁরা সেই নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতার কোনও প্রতিকার করতে পারছেন না।
এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে সন্দেশখালি এলাকা থেকে ১২ জন তরুণী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই মেয়েগুলিকে উদ্ধার করার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে ‘হেবিয়াস কর্পাস’ বা সশরীরে হাজিরার মামলা করে। নিখোঁজ মেয়েদের উদ্ধার করার জন্য জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এ দিন মামলাটির শুনানির সময় দেখা যায়, একটি মেয়েকেও উদ্ধার করা যায়নি। নিখোঁজদের কোনও হদিসও দিতে পারেনি পুলিশ। ওই তরুণীদের উদ্ধারের ব্যাপারে জেলা পুলিশ আদৌ তৎপর হয়নি।
পুলিশের বক্তব্য ছিল, পাচার হওয়া মেয়েদের উদ্ধারের জন্য সিআইডি-র একটি স্পেশ্যাল সেল গড়া হয়েছে। সেই সেলই ওই নিখোঁজ তরুণীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশের এই বক্তব্যে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। তারা বলে, স্পেশ্যাল সেল তৈরি হলেই জেলা পুলিশের আর কোনও ভূমিকা থাকে না, এটা হতে পারে না। থানা কাজ করবে না, জেলা পুলিশ কাজ করবে না, নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকবে এটা বরদাস্ত করা যায় না। এর পরেই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারদের তলব করে ডিভিশন বেঞ্চ।
২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল এবং সিপিএমের সমর্থকদের মধ্যে একটি সংঘর্ষে দু’জন মারা যান। সেই সংঘর্ষের পরেই মনসুরা বিবি নামে এক মহিলা তাঁর স্বামী নিখোঁজ বলে এফআইআর করেন। কিন্তু এত দিনেও পুলিশ মনসুরার স্বামীকে খুঁজে বার করতে উদ্যোগী হয়নি। স্বামীকে খুঁজে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ওই মহিলা শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে মামলা করেন। মনসুরার স্বামীকে খুঁজে বার করার জন্য জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এ দিন সেই মামলার শুনানিতেও দেখা যায়, জেলা পুলিশ কিছুই করেনি। পুলিশের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে ডেকে পাঠায় ডিভিশন বেঞ্চ।
লতারানি মাইতি নামে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের এক মহিলা ২৩ এপ্রিল সবং থানায় এফআইআর করে জানান, মোটরবাইকে চড়ে এসে কিছু যুবক তাঁর ১৭ বছরের মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। মেয়েকে উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে ওই মহিলাও হাইকোর্টে মামলা করেন। শুনানি চলাকালীন দেখা যায়, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরেও পুলিশের হেলদোল নেই। লতারানির মেয়ের ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেনি তারা। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে তলব করে উচ্চ আদালত। |