উদাসীন সিঙ্গুর
‘অনিচ্ছুকদের’ এ বার চাল-গম বিনামূল্যেই
মি ফেরত আটকে আইনের জটে। সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জন্য ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাঁদের পরিবারের জন্য মাসিক ভাতার পরিমাণও বাড়িয়ে এক হাজার থেকে দু’হাজার টাকা করা হয়েছিল। এ বারও আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্য সরকারের ঘোষণা, ‘অনিচ্ছুক’দের পরিবারপিছু মাসে ৬০ কিলো করে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
পুজোর মরসুমে, আগামী অক্টোবর থেকে খাদ্য দফতর বিনামূল্যে ‘অনিচ্ছুক’দের চাল-গম দেবে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আগামী ১৮ অক্টোবর খাদ্য দফতর শিবির করে এই প্রকল্পের সূচনা করবে। খাদ্য দফতরের দাবি, সিঙ্গুরে এখন ৩৭৪৬ জন ‘অনিচ্ছুক’ কৃষক রয়েছেন।
আয়লা-কবলিত ৩ লক্ষ ১০ হাজার মানুষকেও এখন ২ টাকা কিলো দরে পরিবারপিছু মাসে ৬০ কিলোগ্রাম করে খাদ্যশস্য দেওয়া শুরু হয়েছে। খাদ্য দফতরের এক সূত্রের বক্তব্য, এখন আয়লা-কবলিত মানুষ ও সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের ওই চাল দিতে মাসে ২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা করে ভর্তুকি দিতে হয়। বিনামূল্যে সমপরিমাণ চাল-গম দিতে হলে মাসে কিলো প্রতি কমপক্ষে ৪ টাকা করে ভর্তুকি দিতে হবে। খাদ্য দফতরের এক অফিসারের বক্তব্য, এ দিনই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে, ওই খাতে বছরে অতিরিক্ত কত টাকা লাগবে, তার হিসাব করা সম্ভব হয়নি।
রাজ্যে মমতার ক্ষমতায় আসার অন্যতম সোপান ছিল সিঙ্গুরের জমি-আন্দোলন। আদালতের রায় যখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছে, সেই সময় ‘অনিচ্ছুক’দের ‘পাশে’ থাকার বার্তা দিতে বিনামূল্যে চাল-গম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তাতে বিশেষ চিঁড়ে ভেজার ইঙ্গিত নেই। সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা প্রদ্যুৎ ঘোষের ১২ বিঘা জমি চলে গিয়েছে টাটাদের প্রকল্প এলাকায়।
এ বার নিখরচায় চাল পাওয়া যাবে জেনেও তাঁর চিন্তা সেই জমি নিয়েই। তিনি বলেন, “এই বাজারে মাত্র ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছিল। ওই টাকা সামান্যই। এ বার তা না-লাগলে ভাল। কিন্তু আমাদের জমি ফেরতের কী হবে?” তাঁর প্রশ্ন, “শুনেছিলাম সুপ্রিম কোর্টে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের জমির ব্যাপারটা মীমাংসা হবে। কিন্তু কোথায় কী?” আর এক ‘অনিচ্ছুক’, সিংহের ভেড়ির নেপাল দাস বলেন, “পুজো আসছে। চালের দাম লাগবে না, এটা মন্দের ভাল। কিন্তু এখন দু’হাজার টাকায় কী হয়? টাকা আরও কিছু না-বাড়ালে সংসার চালানোই বড় দায়।”
তবে সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতা মানিক দাসের বক্তব্য, “আমরা চালের দাম না-নেওয়ার ব্যাপারে সরকারকে আগেই অনুরোধ করেছিলাম। বিনা পয়সায় চাল পাওয়ায় চাষিরা খুশি।” সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা টাকা বাড়ানোর যে দাবি তুলছেন, তা অবশ্য ঠারেঠোরে স্বীকার করেছেন মানিকবাবু। তাঁর কথায়, “সরকারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। দেখা যাক, কী হয়।” প্রসঙ্গত, আগেই সিপিআইএমএল (লিবারেশন) চাষিদের এককালীন ৭ লক্ষ এবং মাসে ৭ হাজার টাকা করে দেওয়ার দাবি তুলেছে।
এত দিন সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’দের ২ টাকা কিলো দরে মাসে ৬০ কিলো করে খাদ্যশস্য দেওয়া হচ্ছিল রেশন দোকানের মাধ্যমে। ওই প্রকল্প চালু করতে ওই সব ‘অনিচ্ছুক’ পরিবারকে অন্নপূর্ণা অন্ন যোজনা প্রকল্পের রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে।
আইনি জটিলতায় পড়ে সিঙ্গুরে জমি ফেরতের প্রশ্নের ফয়সালা না-হওয়ায় ‘অনিচ্ছুক’দের ক্ষোভ প্রশমন করতেই প্রথমে তাঁদের জন্য মাসে ১০০০ টাকা অনুদান ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেপরেই খাদ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ওই ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের পরিবারপিছু ২ টাকা কিলো দরে মাসে ৩৫ কিলো চাল দেওয়া হবে। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ৬০ কিলো। আগামী অক্টোবর থেকে ওই চাল-গম বিনামূল্যেই দেওয়ার কথা বলছে খাদ্য দফতর।
প্রসঙ্গত, এ দিন খাদ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে বিপন্নপ্রায় উপজাতি রয়েছে তিনটি। পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি এলাকায় বসবাসকারী বেহর সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যা এখন ৩৩৩ জন। দ্বিতীয় জনগোষ্ঠী হল জলপাইগুড়ির টোটো। এখন তাদের মোট সংখ্যা ১৩৯১ জন। তৃতীয় বিপন্নপ্রায় জনগোষ্ঠী পশ্চিম মেদিনীপুরের লোধ। তাদের সংখ্যা এখন ৬০ হাজারের কিছু বেশি। ওই তিন জনগোষ্ঠীর সকলকেও বিনামূল্যে পরিবারপিছু ৬০ কিলো খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। এর জন্য রাজ্যের বছরে অতিরিক্ত এক কোটি টাকা করে খরচ হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.