দলের শীর্ষ স্তরে এখনও হয়নি।
তবে সিপিএমের গণসংগঠনের নেতৃত্বে এ বার ‘পরিবর্তন’ আসছে।
আসন্ন সম্মেলন-পর্বে ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃত্বে রদবদল চাইছে সিপিএম। তার মধ্যে এসএফআইয়ের রাজ্য নেতৃত্বে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছে আলিমুদ্দিন। শেষ মুহূর্তে কোনও নড়চড় না-হলে এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি পদে এ বারই প্রথম দেখা যেতে পারে মহিলা মুখ। তরুণ এবং ঝকঝকে শিক্ষাগত কেরিয়ার এই দুই মাপকাঠিকে সামনে রেখে ছাত্র সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বকে সাজাতে চাইছে আলিমুদ্দিন। যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য নেতৃত্বে নতুন মুখ হিসাবে কাদের আনা যায়, সেই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্য এখনও হয়নি।
জলপাইগুড়ির আলিপুরদুয়ারে আজ, শুক্রবার থেকে এসএফআইয়ের ৩৪তম রাজ্য সম্মেলন শুরু হচ্ছে। ওই সম্মেলন থেকেই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক পদে দেবজ্যোতি দাস এবং সভানেত্রী হিসাবে মধুজা সেন রায়কে নিয়ে আসার কথা। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বুধবারের বৈঠকেই ওই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছে। আরও কিছু গণসংগঠনের মতো রাজ্যে এসএফআইয়ের সদস্যসংখ্যায় যখন ধস নেমেছে, সেই সময়ে সভানেত্রী পদে মহিলা মুখকে তুলে আনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ছাত্র-নেতা দেবজ্যোতি শিক্ষাগত যোগ্যতায় এম টেক। প্রেসিডেন্সির ছাত্রী মধুজা এম ফিল করছেন। উজ্জ্বল শিক্ষাগত কেরিয়ার নিয়ে রাজনীতিও যে করা যায়, এই ‘বার্তা’ই ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে বলে সিপিএমের একাংশের অভিমত।
দলীয় রাজনীতির বিন্যাসে মধুজার উপরে যেমন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর ‘আশীর্বাদ’ রয়েছে, তেমনই দেবজ্যোতির পিছনে সমর্থন রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের। ঘটনাচক্রে, বিমানবাবু ও গৌতমবাবুই আজ আলিপুরদুয়ারে এসএফআইয়ের সমাবেশে দুই প্রধান বক্তা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য বলছেন, “ছাত্র ও যুব নেতৃত্বকে পর্যায়ক্রমে সংগঠনের অন্যান্য কাজে নিয়ে যাওয়াই আমাদের দলের নীতি।” প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, এসএফআইয়ের বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র ডিওয়াইএফআইয়ে চলে যাবেন। আর বিদায়ী রাজ্য সভাপতি কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়কে কলকাতা জেলা কমিটির অধীনে দলের কাজে ব্যবহার করা হবে।
সিপিএমের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, “আগে চল্লিশের কাছাকাছি বয়সেও ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বকে দেখা যেত। এখন সেই গড় বয়স তিরিশের আশেপাশে নিয়ে আসা গিয়েছে।” বস্তুত, এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি পি কে বিজু এ বার তাঁর বয়সের কারণ দেখিয়েই ওই পদ থেকে সরতে চেয়েছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে চাইছিলেন, কেরলের সাংসদ বিজু সর্বভারতীয় সভাপতি এবং ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে যান। কিন্তু বিজুই দলকে জানিয়েছেন, ছাত্র সংগঠনের পক্ষে তাঁর বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেরলেরই আর এক নেতা ভি শিবদাসন সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। ঋতব্রতের স্বপদে বহাল থাকারই সম্ভাবনা।
এসএফআইয়ের পরে বাঁকুড়ায় বসবে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলন। আভাস রায় চৌধুরীকে রাজ্য সম্পাদক রেখে দিতে চাইছেন দলের একাংশ। মূলত সে জন্যই সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব বিকল্প নাম চূড়ান্ত করতে পারেননি। সর্বভারতীয় স্তরেও সাধারণ সম্পাদক তাপস সিংহ ও সভাপতি সি রামকৃষ্ণনের সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেখানেও ‘যোগ্য বিকল্পে’র খোঁজ চলছে। সেপ্টেম্বরে সর্বভারতীয় সম্মেলনের আগে দলের পলিটব্যুরো এ নিয়ে ফয়সালা করতে পারে বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত।
বাম সংগঠনে নেতৃত্ব বদলের প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাম ছাত্র আন্দোলনের ‘শক্ত ঘাঁটি’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আধিপত্য’ বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। বুধবারই সেখানে কলা বিভাগে সংগঠনের শাখা খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। তাঁর কথায়, “ওই দিন নবীনবরণ উৎসবের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৩০০ ছাত্রছাত্রীকে সংগঠনের সদস্য করেছি।” সংগঠনের বিস্তার করতে আগামী দিনে যাদবপুরে ‘কেরিয়ার প্লেসমেন্ট ফেস্ট’ আয়োজনের চেষ্টা করছেন রাজ্যের প্রধান শাসক দলের ছাত্র নেতৃত্ব। |