মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে কঠিন সময়ে কংগ্রেসের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন, তখন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে কেন্দ্রেরই দ্বারস্থ হলেন সিপিএম নেতৃত্ব। তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ, রাজ্যের কোনও বিষয় নিয়ে কেন্দ্র কথা বললেও যাঁরা এত দিন বিরোধিতায় সরব হতেন, তাঁরাই আজ প্রকারান্তরে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থায় কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপ চাইলেন।
তৃণমূল সরকার রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় আঘাত হানছে এই অভিযোগ জানিয়ে আজ সিপিএম নেতারা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী কিশোরচন্দ্র দেও-র শরণাপন্ন হয়েছেন। আর সিপিএমের এই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই নতুন করে রাজ্যে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সিপিএমের দাবি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদে বামফ্রন্ট নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা পরিষদের আর্থিক দায়িত্ব জেলাশাসকের হাতে তুলে দিয়েছিল রাজ্য। ওই নির্দেশিকা সোমবারের মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে আর্থিক বরাদ্দ আটকে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন জয়রাম রমেশ। উল্টো দিকে, রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, কেন্দ্র এমন কোনও নির্দেশ দেয়নি। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী কেন, প্রধানমন্ত্রীরও টাকা আটকানোর ক্ষমতা নেই। কী কারণে ওই জেলায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যা করে জয়রামকে চিঠিও লিখেছেন তিনি।
আজ উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার জেলা সভাধিপতিদের সঙ্গে নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি, অমিতাভ নন্দীরা সংসদভবনে গিয়ে জয়রাম রমেশ ও কিশোরচন্দ্র দেও-র কাছে দরবার করেন। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতি আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে এই জেলা পরিষদের আর্থিক দায়িত্ব জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই জেলায় উন্নয়নের কাজ থমকে গিয়েছে। অথচ এই জেলা দু’টি পঞ্চায়েতে কাজের নিরিখে প্রথম সারিতে রয়েছে। ইয়েচুরি বলেন, “অভিযোগ শোনার পরেই জয়রাম রমেশ মহাকরণে পঞ্চায়েত দফতরের সচিবের সঙ্গে কথা বলেন। নির্দেশিকা প্রত্যাহার না হলে আর্থিক বরাদ্দ আটকে যাবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি।”
অন্য দিকে কী বলছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী? সুব্রতবাবুর জবাব, “আমার দফতরের সচিব সৌরভ দাসের কাছে শুনেছি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফোন করেছিলেন। ওই জেলাগুলিতে কী হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন তিনি। কোনও নির্দেশ দেননি। তবে উনি জানতে চেয়েছেন শুনে আমি নিজেই গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জয়রামকে চিঠি পাঠিয়েছি।” সুব্রতবাবুর ব্যাখ্যা, ওই সব জেলা পরিষদে অচলাবস্থা দেখা গিয়েছিল। কারণ, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই জেলাগুলিতে বামফ্রন্ট সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। ফলে কাজকর্ম আটকে গিয়েছে। উন্নয়নের বরাদ্দ টাকা যাতে ফেরত না যায়, সে জন্যই এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। জয়রামকে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সাধারণ সভার বৈঠক নিয়মিত হচ্ছিল না। প্রকল্প কার্যকর করা ও উন্নয়নের অর্থ খরচ নিয়ে স্থায়ী সমিতিতে নিয়মিত গণ্ডগোল হচ্ছিল। একই ভাবে নদিয়ায় বামফ্রন্টের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা পরিষদ বাজেট পাশ করাতে পারেনি। আর্থিক ক্ষমতা জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হলেও জেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন সুব্রতবাবু।
পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রাজ্যের বিষয় হলেও সে বিষয়ে সিপিএম যে ভাবে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে, তা নিয়েও তৃণমূল শিবির থেকে প্রশ্ন উঠেছে। জয়রাম রমেশকে লেখা চিঠিতে উত্তর ২৪ পরগনার সিপিএম নেতা অমিতাভ নন্দী অবশ্য নিজেই তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, “এই বিষয়টি একেবারেই ব্যতিক্রমী হলেই কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়েছে পড়েছে।” সুব্রতবাবুর পাল্টা দাবি, রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে বলে সিপিএম কেন্দ্রের কাছে দরবার করে আদালতকে প্রভাবিত করতে চাইছে। |