মহিলা ‘অপহরণ’-এর অভিযোগ পাওয়ার পরে কী ভাবে খোঁজ করা যায় তা নিয়ে চিন্তামগ্ন ছিলেন থানার মেজবাবু। মাঝেমধ্যে টেবিলের উপরে রাখা কাগজপত্র উল্টেপাল্টে দেখছেন আর মাথা চুলকোচ্ছেন। বেশ কয়েক কাপ চাও গলাধকরণ করেছেন। ফের এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলেন। বোঝা যাচ্ছিল প্রাণপণে তদন্তের সূত্র খুঁজে চলেছেন। চোখ বুজে চিন্তায় একেবারে ডুবে গিয়েছিলেন। হঠাৎই চেয়ার-টেবিলের ঠোকাঠুকিতে সম্বিৎ ফিরল। চোখ মেলে তাকাতেই উল্টোদিক থেকে ভেসে এল, ‘আমার খোঁজ করছেন’। অবাক থানার মেজবাবু চিত্তরঞ্জন দাস। যাঁর খোঁজ পাওয়ার জন্য তিনি হন্যে ছিলেন, সেই মহিলা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। পুলিশকর্তাকে আরও অবাক করে দিয়ে মহিলা ফের বলে উঠলেন, “সকলে বলছে আমি নাকি অপহৃত হয়েছি। কই আমাকে তো কেউ অপহরণ করেনি।” হাঁপ ছাড়লেন মেজবাবু। দ্রুত মহিলাকে নিয়ে ছুটলেন আদালতে, জবানবন্দি নেওয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার সকালে এমনই ঘটনা ঘটল বসিরহাট থানায়।
কী ঘটেছিল? |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেশখালির ভাঙাতুষখালি গ্রামের বাসিন্দা মীনাআরা বিবি বিয়ে করেছিলেন বিলাত আলি লস্করকে। পরে স্বামীর মৃত্যু পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল লস্করকে। মীনাআরা বিবির অভিযোগ, তাঁর প্রথম স্বামীর ছেলে মিজানুর লস্কর মেছোভেড়ির টাকা দেওয়ার নাম করে তাঁকে বসিরহাটে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে এসে ভুল বুঝিয়ে আড়াই বিঘা জমি লিখিয়ে নেয়। প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি। পরে বাড়ি ফিরে তিনি সব বুঝতে পারেন। এর পরেই তিনি গত ২৫ জুন ছেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনার পর গত ২৮ জুলাই ছেলে মিজানুর আদালতে জানায়, “সম্পত্তি ও টাকার লোভে মায়ের দ্বিতীয় স্বামী কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে মারধর করে মাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।” আদালতের নির্দেশে তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু গ্রামে গিয়ে কোনও রকম সূত্র পায়নি তারা। এ দিন মীনাআরা বিবি পুলিশকে জানান, ছেলে তাঁকে ঠকিয়েছে বুঝতে পেরে তিনি আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বাবা ও দাদার সঙ্গে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ছেলে আদালতকে জানায়। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |