নজরদারি নেই, পশ্চিমে অটো-রাজ
বারবার দুর্ঘটনা ঘটে। তবু হুঁশ ফেরে না।
বুধবারই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল-রানিচক রুটে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই একটি অটো উল্টে মারা গিয়েছেন একজন। ৪ জনের বদলে অটোটিতে ছিলেন ১২ জন যাত্রী। তার কিছুদিন আগেই কলকাতায় চলন্ত অটো থেকে পড়ে জখম হয় চার বছরের অদ্রিকা ঘোষাল। ওঠে বেপরোয়া ভাবে অটো চালানোর অভিযোগ। বারবার এমন ঘটনা ঘটলেও ছবিটা কিন্তু পাল্টাচ্ছে না। বৃহস্পতিবারও মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরে ৮-১০ জন যাত্রী তুলে দিব্যি চলেছে একাধিক অটো। যাত্রাপথে পুলিশি নজরদারিও ছিল না। কেউ প্রতিবাদও করেননি। যাত্রীদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে যে কোনও সময় শহর ও শহরতলিতেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি।
কলকাতার দুর্ঘটনার পরই পরিবহণ মন্ত্রী বিভিন্ন অটো ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেছিলেন। কোনও ভাবেই ৪ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না বলে ‘ফরমান’ জারি করেন মন্ত্রী।
—নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম মেদিনীপুরে অবশ্য পরিবহণ দফতরের পরিকাঠামো ‘বেহাল’। অন্তত অভিযোগ এমনই। জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে দফতরের কার্যালয়। তবে ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুরের মতো এলাকায় কোনও কার্যালয় নেই। ফলে, সব সময় রাস্তায় নেমে অভিযান চালাতে পারেন না পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। জেলা সদরের দফতরের আবার কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা মেনে জেলা পরিবহণ আধিকারিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, “কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে তার মধ্যেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। যে সব চালক বিধি লঙ্ঘন করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয়। এ বার নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” একই বক্তব্য ডিএসপি (ট্রাফিক) প্রভাত চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, “বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। চালকদের সতর্ক করা হয়।”
এই জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৮৫০টি অটো চলাচল করে। অধিকাংশই অবশ্য মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঘাটালের মতো শহরে। ঝাড়গ্রামে অটো রয়েছে। তবে সংখ্যায় কম। আগের থেকে এখন মেদিনীপুর, খড়্গপুরে অটোর সংখ্যা বেড়েছে। নতুন নতুন রুটে অটো চালু হয়েছে। এর ফলে মাঝেমধ্যে যানজট দেখা দেয়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে অটোর দাপট। ঠিক কী কী অভিযোগ ওঠে?
১) প্রায় সব অটোই ‘বাড়তি’ যাত্রী তোলে। অনেক সময় ৮-১০ জন যাত্রী না হলে অটো ছাড়েই না।
২) অত্যন্ত বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে অটোগুলি।
৩) অনেক সময় বেশ কিছু অটো নির্দিষ্ট রুট ভেঙে চলাচল করে। অর্থাৎ, ‘কাট-রুট’ দিয়ে চলে।
এই সব অভিযোগ মানছেন জেলা পরিবহণ আধিকারিকও। তিনি বলেন, “অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হয়। কয়েকদিন আগেই কয়েকজন চালককে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছি।” এ বার বিষয়টি নিয়ে আরও ‘কড়া’ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে পরিবহণ দফতর।
পাশাপাশি শহরে নতুন অটো চালানোর অনুমতি না দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। জেলা পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “শহরে বেশি সংখ্যক অটো চললে সমস্যা আরও বাড়বে। এ বার নতুন অটোর অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর ফলে গ্রামের সঙ্গে শহর ও শহরতলির যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। যে সব নতুন অটো চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে, সেগুলির ৭০ শতাংশ যাত্রাপথই যেন গ্রামের রাস্তা হয়, যেখানে বাস- ট্রেকার চলে না, এই বিষয়টি আমরা ভেবে দেখছি। বাকি ৩০ শতাংশ যাত্রাপথ বড় রাস্তা হতে পারে।” জেলার সর্বত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। বিস্তীর্ন এলাকায় পাকা রাস্তা নেই। মোরাম কিংবা মাটির রাস্তা রয়েছে। একাংশ পাকা রাস্তা আবার দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি। ফলে, আশপাশের গ্রামের মানুষ চরম সমস্যায় পড়েন। একাংশ গ্রামে যাতায়াতের জন্য ট্রলি, গরুর গাড়িই ভরসা। এরফলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সময় লাগে। আশ্বাস মিলছে। তবে অটো-দৌরাত্ম্য বন্ধে পুলিশ-পরিবহণ দফতরের নজরদারি আদৌ আরও বাড়ে কি না, সেটাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.