ক্লাব জোট বনাম ফেডারেশনের ‘যুদ্ধ’ বৃহস্পতিবার আরও তীব্র আকার নিল।
দ্বারকার ফুটবল হাউসে তিন ঘণ্টার আলোচনায় তর্কাতর্কি, ঝামেলা, ওয়াক আউট কিছুই বাদ গেল না। আই লিগ ক্লাবগুলির জোটের দাবি সভার চেয়ারম্যান মেনে না নেওয়ায় ভেস্তে গেল আলোচনা। স্থগিত করে দেওয়া হল সভা।
নিট ফল, এ বারের আই লিগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তৈরি হল না সূচি। নতুন যে সব নিয়ম এ বারের লিগে চালু হওয়ার কথা সেগুলোও স্থগিত রইল। যার মধ্যে দু’টির বদলে চারটি কার্ড দেখার পরই একজন খেলোয়াড় এক ম্যাচ সাসপেন্ড হবেন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফেডারেশন ৬ অক্টোবর থেকে লিগ চালু করতে চেয়েছিল। এখন সেটা কবে হবে কেউ জানে না।
আই লিগ নিয়ে ঝামেলা চললেও এ দিনই ক্লাবগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ফেড কাপের সূচি ঘোষণা করে দিল ফেডারেশন। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান খেলবে শিলিগুড়িতে। প্রয়াগ ইউনাইটেড যাবে রাঁচিতে খেলতে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ফেড কাপ চালু করার ব্যাপারে ক্লাবগুলি সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিলেও, ফেডারেশনের ছাতার তলা থেকে বেরিয়ে আই লিগের ‘আলাদা কমিটি’ না করা হলে লিগে তারা যোগ দেবে না, কার্যত জানিয়ে দিল জোট। ফেড কাপের সূচি যা হয়েছে তাতে মরসুমে প্রথমবার শিলিগুড়িতে সেমিফাইনালে (২৭ সেপ্টেম্বর) ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইস্টবেঙ্গল সহজ গ্রুপে পড়েছে। তবে গ্রুপ অব ডেথ-এ রয়েছে র্যান্টি মার্টিন্সদের প্রয়াগ ইউনাইটেড। আই লিগের ১৪ দল এবং যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্ব থেকে উঠে আসা দু’টি দলকে নিয়ে হবে ফেড কাপ। চারটি গ্রুপে ভাগ করে। |
শিলিগুড়ি |
(গ্রুপ বি)-মোহনবাগান: চার্চিল ব্রাদার্স (২০ সেপ্টেম্বর)
মোহনবাগান: এয়ার ইন্ডিয়া (২২ সেপ্টেম্বর)
মোহনবাগান: যোগ্যতা প্রাপক দল (২৪ সেপ্টেম্বর)
(গ্রুপ সি)-ইস্টবেঙ্গল: স্পোর্টিং ক্লুব (২১ সেপ্টেম্বর)
ইস্টবেঙ্গল: ও এন জি সি (২৩ সেপ্টেম্বর)
ইস্টবেঙ্গল: যোগ্যতা পাওয়া দ্বিতীয় দল (২৫ সেপ্টেম্বর) |
রাঁচি |
(গ্রুপ এ)- ডেম্পো:পৈলান অ্যারোজ (২০ সেপ্টেম্বর)
পৈলান : মুম্বই (২২ সেপ্টেম্বর)
পৈলান : লাজং (২৪ সেপ্টেম্বর)
(গ্রুপ ডি)- প্রয়াগ: সালগাওকর (১৯ সেপ্টেম্বর)
প্রয়াগ: পুণে (২১ সেপ্টেম্বর)
প্রয়াগ: সিকিম (২৩ সেপ্টেম্বর) |
দুটি সেমিফাইনাল: ২৬ সেপ্টেম্বর (রাঁচি)
ও ২৭ সেপ্টেম্বর (শিলিগুড়ি)। |
ফাইনাল ৩০ সেপ্টেম্বর (শিলিগুড়ি)। |
|
ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল সভায় ছিলেন না। সভাপতিত্ব করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত। ফেডারেশন পদাধিকারীরাও ছিলেন। ছিলেন স্পনসর আই এম জি-র দুই প্রতিনিধি আশু জিন্দাল ও প্রীতি শ্রীবাস্তব। ডেম্পো, সালগাওকর, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, প্রয়াগ-সহ ১৩ ক্লাবের প্রতিনিধিরা ছিলেন। ভাইচুং ভুটিয়া পাঠিয়েছিলেন সিকিম ইউনাইটেডের যুগ্ম মালিক আনন্দ কৃষ্ণনকে। ঝামেলা শুরু হয় রিলায়্যান্সের প্রস্তাবিত ফুটবল আই পি এল নিয়ে। ক্লাব কর্তারা এই টুর্নামেন্ট করা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান। তাঁদের বক্তব্য, ফুটবলের আই পি এল চালু হলে আই লিগের অবস্থা হবে ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচের মতো। তর্কাতর্কির মাঝেই ওয়াক আউট করেন ভাইচুংয়ের ক্লাবের প্রতিনিধি।
এর পরেই আই লিগ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ক্লাব কর্তারা দাবি জানান, জে লিগের ধাঁচে ‘আলাদা সত্তা’-র কমিটি গড়ে আই লিগ হোক। স্পনসররা জানান, ফেডারেশনের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। নতুন ভাবে কমিটি করে লিগ করতে গেলে আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। ক্লাব কর্তারা একযোগে দাবি জানান, ফেডারেশন এবং স্পনসররা যে ক্লাবগুলির দাবি মেনে নিয়ে কাজ শুরু করবে সেটা নথিবদ্ধ হোক। রাজি হননি ফেডারেশন কর্তারা। তখন মোহনবাগানের দেবাশিস দত্ত দাবি করেন, এটা নিয়ে ভোটাভুটি হোক। তাতে ঝামেলা তীব্র আকার নেয়। সুব্রত দত্ত জানিয়ে দেন, ফেডরেশনের গঠনতন্ত্রে এরকম কোনও ভোটের নিয়ম নেই। সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের প্রতিনিধিরা উঠে দাঁড়ান। সভা স্থগিত হয়ে যায়। সুব্রতবাবু বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম কোর কমিটি করে আপাতত আই লিগের কাজ হোক। তারপর স্পনসররা আইনগত দিক দেখুক। পরে আবার আলোচনা করা যাবে। ওঁরা মানলেন না।” |