নেহরু কাপের একটা ম্যাচ জেতার পরই বব হাউটনের সঙ্গে উইম কোভারম্যান্সের তুলনা টেনে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। ভারতের নতুন ডাচ-কোচ এই তুলনা শুনে বিরক্ত হলেও ফুটবলারদের একাংশের মনে তিনি ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছেন কথা বললেই বোঝা যাচ্ছে।
টিম হোটেলে ফুটবলারদের সঙ্গে না থেকে বব থাকতেন অন্য হোটেলে। ভারতের নতুন কোচ কিন্তু সারাদিনই থাকছেন সুনীল ছেত্রী-রহিম নবি-সুব্রত পালদের সঙ্গে একই হোটেলে। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার সব সময় কোভারম্যান ফুটবলারদের সঙ্গী। ফুটবলারদের একাংশ মনে করছেন, এটা টিমকে উদ্বুদ্ধ করার পক্ষে সেরা টনিক। ফুটবলারদের মোটিভেশন তৈরির পক্ষে যা এখানে সিরিয়া ম্যাচে কাজ করছে। “এক এক কোচ এক এক রকম ভাবে উৎসাহ দেন। বব স্যার এক ভাবে করতেন, নতুন স্যার সেটা করছেন বন্ধুর মতো সঙ্গী হয়ে,” বলছিলেন রহিম নবি। যিনি দু’জনের আমলেই দলে অপরিহার্য। দলের আর এক সিনিয়র সুব্রত পাল অবশ্য এটা নিয়ে কোনও আলোচনায় যেতে রাজি নন। বললেন, “দু’জনেই আমার গুরু। গুরু নিয়ে কিছু বলার যোগ্যতা আমার নেই। তবে গত বছর খেলতে পারিনি। দুটো টুর্নামেন্টে না খেলার কষ্ট ছিল। এ বার নিজের খেলাটা উপভোগ করছি।” আর সুনীল ছেত্রীর প্রতিক্রিয়া, “হারলেও সেটা মনে রাখতে নেই। জিতলেও উচ্ছ্বাসে গা ভাসাতে রাজি নই। কোভারম্যান্সের আমলে আমরা সঠিক পথেই চলেছি।” সিরিয়া ম্যাচের পর ভারতের ড্রেসিংরুমে অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়া।
ফুটবলাররা গত তিন সপ্তাহ কোচের সঙ্গ উপভোগ করলেও কোভারম্যান্সকে যথেষ্ট সমীহও করছেন, মূলত শৃঙ্খলার জন্য। প্রতিদিন সকালে বোর্ডে ডাচ-কোচ লিখে দিচ্ছেন, কখন কী করতে হবে। ঠিক সময়ে সেটা না করলেই জরিমানা দিতে হচ্ছে। টিম সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই জরিমানার কবলে পড়েছেন নাকি দু’জন। নতুন কোচের সাফ কথা, ‘যা করতে হবে সব একসঙ্গে করতে হবে।’ আরও দু’টো ব্যাপারে কোচ সতর্ক করেছেন পুরো দলকে। তা হল ফুটবলারদের সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে রাখা এবং নিজের স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে বাইরে সামান্যতম ধারণাও না দেওয়া। সে জন্যই সম্ভবত মূল কেন্দ্র দিল্লি থেকে বহু দূরে জেপি গ্রিনের মতো জায়গায় দলকে রাখার কথা ফেডারেশনকে বলেছেন তিনি। হাউটন অবশ্য অনেক খোলামেলা ছিলেন। ফুটবলারদের কথাবার্তা নিয়ে তেমন কড়াকড়ি করতেন না।
এ দিন সিরিয়ার বিরুদ্ধে খেলা কোনও ফুটবলারকেই অনুশীলন করাননি কোভারম্যান্স। সামান্য স্ট্রেচিং করিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। মিনিট পঁয়তাল্লিশ ধরে রিজার্ভ বেঞ্চকে অনুশীলন করান তিনি। সিরিয়া ম্যাচের সিডি দেখিয়ে বুঝিয়ে দেন কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে। বিকেলে চলে এসেছিলেন মলদ্বীপ-নেপাল ম্যাচ দেখতে। শনিবার ভারতের প্রতিপক্ষ মলদ্বীপ। এ দিন তারা ২-১ জিতল নেপালের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষ নিয়ে যে তিনি অঙ্ক কষা শুরু করেছেন সেটা বিরতিতে স্টেডিয়ামে বসে ডাচ কোচের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেল। বললেন, “মলদ্বীপ একটু হলেও ভাল টিম। যথেষ্ট শক্তিশালীও।” তাঁর ল্যাপটপে মলদ্বীপের স্ট্রাইকার অধিনায়ক আসফাক আলির নামে দাগ পড়েছে। বলেও দিলেন, “কয়েক জনকে চোখে পড়েছে। তবে সাত নম্বর (আসফাক) ছেলেটা সবথেকে ভাল।” সুব্রত পালকে বুধবার সময় নষ্ট করার জন্য হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন উজবেক রেফারি। কোভারম্যান্স জানিয়ে দিলেন, ওই কার্ড দেখানোটা তাঁকে খুশি করতে পারেনি।
মলদ্বীপ নিয়ে অঙ্ক কষা শুরু করে দিলেও, নিজের দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কোভারম্যান্স। জানিয়ে দিয়েছেন, “তিন সপ্তাহ অনুশীলনের পর আমি সিরিয়া ম্যাচের আগেই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। জেতার পর আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছি। নেহরু কাপটা জেতার জন্য আমরা খেলছি। সেটা জিততে চাই।”
|