মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে ফিরেই শুনলাম চিন্টুর সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। খেলা শেষ হওয়ার পর আধ ঘণ্টা মতো অপেক্ষা করে ফোনটা করেছিলাম। ধরেনি। কিছুক্ষণ পরে নিজেই ফোন করে বলল, ‘স্যর, বোলা থা না ম্যায় ছোড়নেওয়ালা নেহি?’ ছাড়বার ছেলে নয় জানতাম। লাঞ্চের আগে ওর যেটুকু ব্যাটিং দেখেছি মনে হয়েছে খুব প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটা চাহনি। ঠাণ্ডা মাথা। যেন কী করতে হবে, সব জানে।
বুচিবাবু খেলার জন্য আমি এখন কোচ হিসেবে সৌরাষ্ট্র টিমের সঙ্গে চেন্নাইয়ে। মাত্র চার দিন আগে অসমের সঙ্গে ম্যাচ ছিল আমাদের। ওই ম্যাচটায় চিন্টু মানে চেতেশ্বর পূজারা আমাদের হয়ে খেলেছিল। খুব বেশি রান করতে পারেনি। ২২ না ২৪ কিছু একটা করেছিল। সেদিনই রাতে ওর হায়দরাবাদের ফ্লাইট ধরার কথা। যাওয়ার আগে ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। আমি বললাম, তুমি কিন্তু রেডি থেকো। মনে হচ্ছে ফার্স্ট ইলেভেনে থাকবে আর তিনেই খেলাবে ওরা তোমাকে। চিন্টু ঘাড় নেড়ে বলেছিল, “স্যর, চান্স মিলনেসে ম্যায় ছোড়নেওয়ালা নেহি। শুরুতে আউট না হলে উইকেট দেব না।” |
এটাই পূজারা, আমাদের চিন্টু। বাইশ দিনের মধ্যে যে ছেলে অনূর্ধ্ব ২২ ও রঞ্জি মিলিয়ে তিনটে ট্রিপল হান্ড্রেড মারতে পারে, সে নিশ্চয়ই টেস্ট খেলার জন্য জন্মেছে। আইপিএল বা ওয়ান ডে নয়। একবার ক্রিজে থিতু হয়ে গেলে ও কিন্তু ক্লান্তিহীন ভাবে ব্যাট করে যেতে পারে। তিন নম্বরে ও কতদিন খেলবে জানি না, তবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি ওটাই ওর পছন্দের ব্যাটিং পজিশন। এখানেই ও সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ। এখানে কখনও ০ রানে এক উইকেট থাকা অবস্থায় নামতে হতে পারে, আবার কখনও স্কোর থাকতে পারে ৫০-১। যখন বলের পালিশটা উঠে যাবে। ডন থেকে ভিভ, বিশ্বসেরা ব্যাটরা এই পজিশনে ব্যাট করেছেন।
প্রায় ষোল বছর এই জায়গাটায় ব্যাট করেছে দ্রাবিড়। চিন্টু দ্রাবিড়ের উত্তরসূরি কি না, নিয়ে যারা মাথা ঘামাচ্ছে, তাদের বলব দ্রাবিড়ের সঙ্গে তুলনা ওর ক্ষতি করে দিতে পারে। চিন্টুর স্টান্সটা অনেকটা দ্রাবিড় ঘরানার। হাঁটু সামান্য ভেঙে নেওয়া স্টান্স। সৌরাষ্ট্রের হয়ে রঞ্জি অভিষেকের আগে নেটে ওর এই স্টান্সটা আমি ঠিক করে দিয়েছিলাম। কারণ এতে ওর ড্রাইভ করতে সুবিধে হচ্ছিল। চিন্টুর সমস্যা, ওর ক্রমাগত চোট পাওয়ার প্রবণতা। এটা নিয়ে অনেকবার বলেওছি। ভারতীয় ক্রিকেটে মোটামুটি ভদ্রস্থ জায়গা করতে এই চোট পাওয়া নিয়ে ওকে অনেক সতর্ক থাকতে হবে। বকলে মাথা নীচু করে শোনে, ছেলেটার বড় গুণ ক্রিকেটের নিষ্ঠাবান ছাত্র। সব সময় ব্যাটিং নিয়ে কিছু শিখতে চায়। ক্লান্তিহীনতার কথা তো বললামই। টানা তিনটে সেশন ব্যাট করেও ফেরার সময় ওকে দেখে মনে হয় না, ক্লান্ত। এখন ১১৯ নট আউট, অন্য দিকে সহায়তা পেলে চিন্টুর কাছে ডাবল সেঞ্চুরি করাটা কিন্তু খুব বড় ব্যাপার নয়। |