পুরনোদের খাতা: সচিন ১৯ গম্ভীর ২২ সহবাগ ৪৭
ভারতীয় ক্রিকেটে দেওয়াল গাঁথার কাজ শুরু পূজারার
রাহুল দ্রাবিড়ের যে দিন টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল, বয়স কত ছিল ছেলেটার?
মেরেকেটে সাত কি আট। পিঠে ক্রিকেটকিটের বদলে থাকত স্কুলব্যাগ। ক্রিকেট শব্দটার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল হয়তো, কিন্তু খেলায় হাতেখড়ি তখনও হয়নি। কে জানত, ষোলো বছর পর ওই ছেলেই নতুন দেওয়াল গাঁথার কাজ শুরু করে দেবেন!
সকাল দশটা নাগাদ যখন ছিপছিপে চেহারাটা ভারতীয় ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এল, মাঠে ফিসফাস চালু। প্রেসবক্সের ভ্রু কুঁচকে গিয়েছে। বিরাট কোহলির বদলে চেতেশ্বর পূজারা কেন? গম্ভীর আউট, সাত-তাড়াতাড়ি উইকেট পড়েছে, সহবাগের উপরে বিশেষ ভরসা করা যাচ্ছে নাএই অবস্থায় তো বিরাটই নামবেন। পূজারার চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন, স্বাভাবিক বিচারে তিনিই তিন নম্বর। কিন্তু মাঝের ছ’ঘণ্টাতেই পরিস্থিতির কী অদ্ভুত ভোলবদল। বিকেল চারটেয় জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির পর পূজারা ব্যাট তুলছেন, স্টেডিয়াম জুড়ে তেরঙার দাপাদাপি। ব্যাটের লোগেতে চুমু খাচ্ছেন, প্রেসবক্স আবিষ্কার করছে এ তো সেই একই লোগো। যেটা দ্রাবিড়ের ব্যাটে থাকত!
মিল অনেক। অমিলও প্রচুর। কিন্তু বৃহস্পতিবারের হায়দরাবাদ বুঝিয়ে দিল, ওয়ান ডাউন নিয়ে ধোনির সংসারে টেনশন এ বার কমতেই পারে। ভিভিএস লক্ষ্মণের কবজির শিল্প পূজারার নেই। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ক্লাসিক ঘরানারও তিনি নন। কিন্তু পূর্বসূরির মতো পূজারারও অসীম ধৈর্য আছে। দ্রাবিড়োচিত ভঙ্গিতে উইকেটে চল্লিশ ডিগ্রি গরমে উইকেটে পড়ে থাকতে পারেন। জানেন, কী ভাবে বোলারকে ক্লান্ত করতে হয়। তাই বলে কি ‘স্ট্রোকলেস ওয়ান্ডার’? মোটেই না। ২২৬ বলে ১১৯ নট আউটের পিছনে পনেরোটা বাউন্ডারিও আছে। আর সব ক’টা টেক্সটবুক স্ট্রোকে।
নবকল্লোল
পূজারা নট আউট ১১৯।
ছবি: এপি
কোহলি ঝকঝকে হাফসেঞ্চুরি।
ছবি: পিটিআই
সোজাসুজি বললে, বৃহস্পতিবার বিকেলে ধোনির গাড়িকে যে স্বস্তির হাইওয়েতে দেখাচ্ছে, তার কাঠামো যাবতীয় গুণাবলিসম্পন্ন এক টেস্ট ক্রিকেটারের তৈরি করে দেওয়া। পূজারা না থাকলে ম্যাচ রিপোর্টের প্লটই পাল্টে যায়। জুনিয়রদের অগ্নিপরীক্ষার মার্কশিটের চেয়ে অনেক বেশি করে উঠে আসে সিনিয়রদের বিপন্নতা। বিরাট কোহলিও (৫৮) কৃতিত্ব দাবি করবেন, কিন্তু সেটা সিকি ভাগ। আপাতত ৩০৭-৫। পূজারার সঙ্গে ধোনি (২৯ ন:আ:) আছেন। শুক্রবার গোটা দুই সেশন ব্যাট করা মানে সাড়ে চারশো-পাঁচশো রানের বহুতল এবং কিউয়িদের টুঁটি চেপে ধরা। বিশেষজ্ঞদের বলতে শোনা গেল, দ্বিতীয় দিন থেকেই নাকি বল ঘুরবে। ধোনির হাতে ওঝা-অশ্বিন, মন্দ কী?
সীমিত ক্ষমতা নিয়ে নিউজিল্যান্ড লড়াই ছেড়েছে, বলা যাবে না। ডাঁটা চচ্চড়ির মশলা দিয়ে রস টেলর বিরিয়ানি রান্নার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন। বরং প্রশ্ন উঠতে পারে, টিম ইন্ডিয়ার সিনিয়রদের মনোভাব নিয়ে। উপ্পলের পিচে প্রথম দিন বল একটু-আধটু লাফাবে, সুইং করবে, এটা তো ধোনিরা জানতেন। কিন্তু ৯৭ টেস্ট খেলে ফেলা বীরেন্দ্র সহবাগ (৪৭) যে ভাবে আউট হলেন, পাড়া ক্রিকেটেও তার ক্ষমা নেই। বীরুকে লোভ দেখাতে থার্ডম্যান সরিয়ে দিয়েছিলেন টেলর। ছিল অফস্টাম্পের বাইরে শর্ট পিচের কড়া দাওয়াই। এবং তাতেই লোভে পাপ, পাপে মৃত্যুর গল্প। গম্ভীরের (২২) আবার পা-ই নড়ল না। বল ব্যাটে চুমু খেয়ে জমা কিপারের হাতে। যা দেখে উত্তেজিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কমেন্ট্রি বক্সে বলতে হল, “ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতেও এই জিনিস দেখলাম। কেন যে ও ফ্রন্টফুটে আসছে না, বুঝতে পারছি না।” আর সচিন? নিন্দুকেরা বলেন, আচমকা ভিতরে ঢুকে আসা বলে ‘লিটল মাস্টারে’র দুর্বলতা বহু দিনের। এ দিনও বোল্টের স্কিড করে ঢুকে আসা বলে মিডল স্টাম্প মাটিতে, ৬২ বলে ১৯, পিচে হুমড়ি খেয়ে পড়তে-পড়তে বাঁচলেন ক্রিকেট-ঈশ্বর! স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে, ১২৫-৩। দর্শকদের মুখে মনখারাপের মেঘ। ভারত বিপন্ন।
কিন্তু বিপন্নতা যে আবার তাঁর সেরা বন্ধু। চব্বিশ বছরের ক্রিকেটজীবনে যত বার পূজারাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, ততই একরোখা দেখিয়েছে তাঁকে। রঞ্জিতে একাধিক বার ধসে পড়েছে সৌরাষ্ট্রের ব্যাটিং লাইন আপ আর তাঁর ব্যাট থেকে বেরিয়েছে ট্রিপল সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার মতো টিমের বিরুদ্ধে লক্ষ্মণকে না পাঠিয়ে আনকোরা পূজারাকে তিনে ঠেলেছেন ধোনি। পাল্টা জবাবে এসেছে ম্যাচ জেতানো ৭২। টেস্ট কেরিয়ার যখন সবে হামাগুড়ি দিচ্ছে, হাঁটুর চোট ভুগিয়েছে এক বছর। অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়া হয়নি। সঞ্জয় মঞ্জরেকর ঠিকই বলছিলেন যে, “ওর মানসিকতাটাই আলাদা।” আলাদা নিশ্চয়ই। চোট সারিয়ে এমন রূপকথার প্রত্যাবর্তন ক’জনের পক্ষে সম্ভব? আজও কি তাঁকে রক্তাক্ত করার কম চেষ্টা হয়েছে? তিনটে স্লিপ, গালি, পয়েন্ট সুদ্ধ অফে ছ’টা ফিল্ডার তাঁর জন্য ওঁত পেতে ছিল। মার্টিনের বাউন্সার, বোল্টের সুইংয়ের বিষ গলাধঃকরণ করতে হয়েছে নিয়ম করে। তবু দেওয়াল তৈরির কাজে বাধা পড়েনি। উল্টে খারাপ বলের ঠিকানা হয়েছে বিলবোর্ড। টেস্ট ক্রিকেট কী বস্তু সেটা বুঝতে রায়নার উচিত নিয়ম করে পূজারার ‘ক্লাস’ করা। আর বিরাট যদি আর একটু নিজেকে সময় দিতেন, যদি ব্যাটের মেজাজ একটু নিয়ন্ত্রিত হত, লক্ষ্মণের পাড়ায় কিন্তু নতুন জুটির সম্ভাবনা ছিল।
যা হয়নি, হয়নি। যা হয়েছে, সেটাও বা কম কী? পূজারা-বিরাট ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেটে আরও একটা অমর জুটির জন্ম দেবেন কি না, জানা নেই। পূজারার ‘দেওয়াল’-ও শেষ পর্যন্ত টিকবে কি না, সে উত্তরও ভবিষ্যৎ দেবে। কিন্তু আপাতত তাঁকে নিয়ে বড় স্বপ্ন বোধহয় দেখাই যায়।

স্কোর বোর্ড
ভারত: ৩০৭-৫
গম্ভীর ক ফান উইক বো বোল্ট ২২
সহবাগ ক গুপ্টিল বো ব্রেসওয়েল ৪৭
পূজারা ন.আ. ১১৯
সচিন বো বোল্ট ১৯
বিরাট ক গুপ্টিল বো মার্টিন ৫৮
রায়না ক ফান উইক বো পটেল ৩
ধোনি ন.আ. ২৯
অতিরিক্ত: ১০
মোট: ৮৭ ওভারে ৫ উইকেটে ৩০৭।
পতন: ৪৯, ৭৭, ১২৫, ২৫০, ২৬০।
বোলিং: মার্টিন ১৮-২-৬০-১, বোল্ট ১৬-২-৬৩-২, ব্রেসওয়েল ১০.৪-১-৫৩-১
ফ্রাঙ্কলিন ১১.২-০-৩৩-০, পটেল ২৪-৬-৫৮-১, উইলিয়ামসন ৭-০-৩১-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.