অস্কারের পাশে দৌড়তে চান ‘একলব্য’ বিশ্বজিৎরা
রান অস্কার! রান!
লন্ডন অলিম্পিকের ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ের ফাইনাল। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন অস্কার পিস্টোরিয়াস! ‘ব্লেড রানার’ নামেই যিনি পৃথিবীবিখ্যাত! বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার অজ পাড়াগাঁ পাঁচালে বিশ্বজিৎ সাইনির চোখ তখন প্রতিবেশীর টিভি পর্দায়। কথা বলতে না পারলে কী হবে! চোখমুখ, গোটা শরীর দিয়ে ঠিকরে বেরোচ্ছে ওই ডাক!
রান অস্কার! রান!
বিশ্বজিৎ আর অভিষেক সাইনি। জন্ম থেকেই মূক ও বধির দু’ভাই। জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় গত দু’বছর ধরে দৌড়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। অস্কার পিস্টোরিয়াসকে ‘দ্রোণাচার্য’ বলে মানেন এই দুই ‘একলব্য’। স্বপ্ন দেখেন, ২০১৩-য় গ্রিসের প্যারা অলিম্পিকে ৪০০ মিটার দৌড়ের ট্র্যাকে অস্কারের পাশেই দৌড়বেন ওঁরা।
স্বপ্নের ছুট শুরু ঠিক চার বছর আগে। ২০০৮ সালে বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজের হয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃকলেজ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। তখনই টনক নড়েছিল বাবার। স্ত্রী, দুই প্রতিবন্ধী ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে টিউশনি করে সংসার চালানো কার্তিক সাইনি প্রতিভা চিনতে ভুল করেননি। সে বছর রাজ্য স্তরে ওই প্রতিযোগিতায় অষ্টম হন বিশ্বজিৎ।
স্বপ্নে অস্কার পিস্টোরিয়াস।
তার পর আর দু’বার ভাবা নয়। বিশ্বজিতকে দৌড়ের মাঠে এগিয়ে দেন কার্তিকবাবু। তিনি জানাচ্ছেন, দুর্গাপুরের একটি সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বজিৎ রাজ্য ও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ২০১০ সালে রাজ্য স্তরের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হন তিনি। পরপর দু’বছর ২০১১ ও ২০১২ সালে জাতীয় স্তরের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়ে ভারত চ্যাম্পিয়নের শিরোপা পান।
বিশ্বজিতকে দেখে অনুপ্রাণিত হলেন ছোটছেলে অভিষেকও। কার্তিকবাবু বলেন, “কোচিং করানোর মতো সামর্থ্য তো আমার নেই। সকাল বিকেল গ্রামের মাঠে দাদার পিছনে দৌড়েই সে-ও এ বছর ১০০ মিটারে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।” গত জুলাই মাসে দুই ভাই টরন্টোতে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড ডেফ চ্যাম্পিয়নশিপে’ ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সামনে আরও অনেক কাজ। কার্তিকবাবু জানালেন, সম্প্রতি দিল্লির ক্রীড়া মন্ত্রকের এক আধিকারিক বিশ্বজিৎ-অভিষেক দু’জনকেই ২০১৩ সালে গ্রিসের প্রতিবন্ধী অলিম্পিকে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তার পর থেকেই আশায় বুক বেঁধেছেন দুই ভাই। সংবাদপত্রের পেপার কাটিং থেকে ইতিমধ্যেই কৃত্রিম পায়ের দৌড়বীর অস্কারের একটি ছবি জোগাড় করে ফেলেছেন বিশ্বজিৎ। ‘গুরু’র ছবি সামনে রেখে চলছে হাড়ভাঙা অনুশীলন। দুই ‘একলব্যে’র স্বপ্ন, প্যারা অলিম্পিকে অস্কারের পাশে দৌড়নোর যোগ্যতা অর্জন করা।
তাঁকে ছোঁয়ার নীরব প্রস্তুতি বিশ্বজিৎ (বাঁ দিকে) আর অভিষেকের। ছবি: শুভ্র মিত্র
অস্কারকেই কেন ‘গুরু’ মানছেন ওঁরা? প্রতিবন্ধীদের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অলিম্পিকের মতো মূলধারার প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার বিষয়টাই সব থেকে বেশি নাড়া দিয়েছে দুই ভাইকে। অস্কারের দেখাদেখি তাঁদেরও এখন লক্ষ্য, প্রতিবন্ধীদের প্রতিযোগিতার বাইরে অন্য প্রতিযোগিতাগুলিতেও যোগ দেওয়া। বিশ্বজিৎ ও অভিষেক ইশারায় জানালেন, এক দিন ঠিকই আন্তর্জাতিক মানের দৌড়বীর হয়ে উঠবেন! বাবার স্বপ্ন সফল করবেন!
ছেলেরা অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এই আশা বাবারও। তাঁর শুধু একটাই চাহিদা, “সরকার দুই ছেলের জন্য ভাল কোচের ব্যবস্থা করুক।” বাকি কাজটা ছেলেরাই করবেন বলে তাঁর বিশ্বাস।
স্থানীয় চিকিৎসক তথা তৃণমূল নেতা জয়মাল্য ঘর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দু’জনকে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের কাছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই দু’ভাইকে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য দিয়েছে সরকার। প্যারা অলিম্পিকের প্রস্তুতির জন্য সল্টলেকের সাই কমপ্লেক্সে তাঁদের ছ’মাস কোচিংও দেওয়া হবে।”
বাঁকুড়ার পাঁচাল এখন সত্যিই স্বপ্ন দেখছে। প্রিয়জনদের বিশ্বাস, এক দিন ঠিকই স্বপ্ন ছোঁবেন দুই ভাই। কে জানে, হয়তো অস্কারকেও!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.