কাউকে কাটে না, এমনকী ফোঁসও করে না। এমন সাপের খোঁজ বাবুরাম সাপুড়ে পেয়েছিলেন কি না, জানা নেই! তবে কাটে না, চিবোয় না এমন এক ইঁদুর খুঁজে বের করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এক দল গবেষক!
প্রাণিজগতের নবতম সদস্য এই মূষিকটির খাদ্য শুধু কেঁচো! বাসস্থান ইন্দোনেশিয়ার স্যাঁতস্যাঁতে জঙ্গল। নাম রাখা হয়েছে পসিডেন্টোমিস ভার্মিড্যাক্স। এবং বিজ্ঞানীদলটির দাবি ইঁদুরটি আক্ষরিক অর্থেই ‘অনন্য।’
কেন? বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, ইঁদুর স্তন্যপায়ী প্রাণী। রোডেনশিয়া বর্গের অন্তর্ভুক্ত। ইঁদুর এবং এই বর্গের অন্য সদস্যদের বৈশিষ্ট্য মুখগহ্বরের সামনের দিকে দু’জোড়া (উপরে এক জোড়া এবং নীচে এক জোড়া) দাঁত ‘ইনসাইসর।’ এই চারটি দাঁত সব সময়ই বাড়তে থাকে। সর্বদা কিছু না কিছু চিবিয়ে সেটা ঠেকিয়ে রাখে এই বর্গের প্রাণীরা। আর এখানেই নিজের বর্গের অন্য ইঁদুরদের থেকে আলাদা পসিডেন্টোমিস। কেটে কুটিকুটি করার ‘সৃষ্টিছাড়া’ অভ্যাসটাই এদের নেই! কারণ অন্যদের মতো এদের ইনসাইসরগুলি সরু, ধারালো নয়। |
বরং কিছুটা ভোঁতা ও খাঁজযুক্ত। সেগুলি সবসময় বাড়েও না। যার ফলে পসিডেন্টোমিস হয়ে উঠেছে আপাদমস্তক ‘সুবোধ!’ বিজ্ঞানীদের অনুমান, কেঁচো টুকরো করতে ব্যবহার হয় ইনসাইসরগুলি। আরও আছে। একটি ইঁদুর ধরে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, খাবার চিবোনোর জন্য রোডেনশিয়া বর্গের অন্য সদস্যদের যে ‘পেষক’ দাঁত বা ‘মোলার’ থাকে সেগুলিও নেই পসিডেন্টোমিস-এর।
বিজ্ঞানীদলের সদস্য আনাগ আচমাদির কথায়, “ক্ষুরধার দাঁত আর অনবরত চিবোনোর অভ্যাসই রোডেন্টদের চেনায়। কিন্তু এই ইঁদুরের দাঁত বলতে শুধু অদ্ভুত ইনসাইসর যেটা চিবোনোর কাজে লাগে না!” ‘ফোকলা’ ইঁদুরের বিজ্ঞানসম্মত নামেও সেই ব্যতিক্রম স্পষ্ট। পসিডেন্টোমিস-এর অর্থ ‘কম দাঁতওয়ালা ইঁদুর।’ আর ভার্মিড্যাক্স মানে ‘কেঁচো খায় এমন প্রাণী।’ আর এক বিজ্ঞানী কেভিন রো-র কথায়, “পসিডেন্টোমিস যে ভেজা পরিবেশে থাকে সেখানে শক্ত কিছু দাঁত দিয়ে কাটার দরকার হয় না। খাবার হিসেবে সহজেই মেলে কেঁচো। ফলে ইঁদুর হলেও প্রায় দাঁতহীন এরা।” ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটির ‘বায়োলজি লেটারস’-এ এই নতুন প্রাণীর কথা প্রকাশিত হয়েছে। |