পাখি নয়। বিমানকে ঘিরে ধরল মৌমাছির ঝাঁক! বোঁ বোঁ করে পাক খেতে লাগল বিমানের চার পাশে! আকাশে নয়। বিমান তখন ইঞ্জিন বন্ধ করে মাটিতেই দাঁড়িয়ে। ভিতরে যাত্রীরাও নেই।
কিন্তু কোন আক্রোশে মৌমাছির দল একটি বিমানকে এ ভাবে আক্রমণ করল, বুঝে উঠতে হিমশিম খেয়ে গেলেন বিমানবন্দরের কর্তারা! নিত্য যারা উড়ে বেড়ায়, বিমানে উড়াল দেওয়ার ইচ্ছে তাদের হল কেন, সেটাও রহস্য। একটু দূরে দাঁড়িয়ে অন্য বিমান। কিন্তু সে-দিকে নজরই নেই মৌমাছিদের। বিশেষ করে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানের দিকেই তাদের নজর গেল কেন, তা-ও বুঝতে পারছেন না সংস্থার কর্তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা বিমানবন্দরে। বিমানটি বেলা পৌনে ২টো নাগাদ আইজল থেকে কলকাতায় পৌঁছয়। বিমানবন্দরের ২৪ নম্বর বে-তে সেটিকে দাঁড় করানো হয়। যাত্রীরা নেমে যান নির্বিঘ্নেই। বিকেল পৌনে ৫টায় ফের যাত্রী নিয়ে বিমানটির মুম্বই রওনা হওয়া কথা ছিল। মাঝখানের সময়টুকুতে সাফাই এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। সামনে ও পিছনে খোলা ছিল দরজা। দু’টি দরজার সঙ্গেই সিঁড়ি লাগানো ছিল। তখনও মুম্বইয়ের যাত্রীরা বিমানে ওঠেননি।
হেন কালে ধেয়ে আসে মৌমাছির ঝাঁক। বিমান সংস্থার এক অফিসার জানান, কয়েক হাজার মৌমাছির রণং দেহি হামলার মুখে কর্মীরা ভয়ে দূরে সরে যান। দূর থেকে দেখা যায়, পিছনের দরজার ঠিক নীচের দিকেই বড় ধরনের চাক তৈরি করে ফেলেছে মৌমাছিরা। শুধু সেই চাক নয়, তত ক্ষণে গোটা বিমানেরই দখল নিয়েছে তারা। এবং নিছক গুঞ্জন নয়। বিমানের চার দিকে ঘুরে ঘুরে চলছে রীতিমতো বোঁ বোঁ গর্জন। যেন মানুষ নামের প্রাণীদের আর উঠতেই দেবে না ওই আকাশযানে!
এই অবস্থায় যাত্রীদের তো আর বিমানে তোলা সম্ভব নয়। যে-কোনও মুহূর্তে হুল ফুটিয়ে দিতে পারে মৌমাছিরা। অগত্যা তলব পড়ে বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক দমকল ইঞ্জিনের। ঠিক যে-ভাবে চানঘরে শাওয়ার থেকে জল পড়ে, দমকলের গাড়ি থেকে সেই ছন্দেই জলবর্ষণ করে তাড়ানো হয় মৌমাছিদের।
বিপদ অবশ্য তখনও কাটেনি। বাইরে সঙ্গীরা রণে ভঙ্গ দিলেও তত ক্ষণে বিমানের ভিতরে ঢুকে পড়েছে গুটিকয়েক নাছোড় মৌমাছি। বিমানের ভিতরে ঢুকে তো আর জল ছিটোনো যাবে না! অগত্যা মুখে কাপড় বেঁধে বিমান সংস্থার কয়েক জন কর্মী বিমানে ঢুকে কীটনাশক ছড়িয়ে তাড়িয়ে দেন ভিতরের মৌমাছিদের। ৭২ জন যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত সময়ের ৫০ মিনিট পরে বিমানটি কলকাতা থেকে মুম্বই রওনা হয়। |