দুই বলদকে প্রতিদিন মাঠে চরাতে নিয়ে যাওয়া, শিঙে তেল মাখানোসবই নিজেই করতেন প্রৌঢ়। সেই বলদের গুঁতোয় হাসপাতালে শুয়ে নিজের ভাগ্যকে দায়ি করেছেন পাড়া থানার রাঙামেট্যা গ্রামের বাসিন্দা গোপাল মাহাতো। তিনি বলেন, “কী জানি। হয়তো অদৃষ্টে ছিল।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঞ্চাশ -বাহান্নর এই প্রৌঢ়ের জীবিকা বলতে চাষ। এ বছর বৃষ্টির অবস্থা ভালো নয় বলে এখনও তিনি ধান রোয়ার কাজ শেষ করে উঠতে পারেননি। বুধবার সকালে তিনি নিজের দু’টি বলদ সঙ্গে নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। হালের দুই প্রান্তে বাঁধা ছিল বলদ দু’টি। প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, হটাতই দড়ি খুলে একটি বলদ বেরিয়ে যায়। তাকে বাগে এনে ফের হালে বাঁধতে যেতেই বলদটি শিং সোজা গোপালবাবুর তলপেটে ঢুকিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, শিঙের গুঁতোয় ফুট চারেক দূরে ছিটকে পড়েন তিনি। কাছাকাছি জমিতে যাঁরা কাজ করছিলেন তাঁরাই তাঁকে বাড়ি নিয়ে আসেন। পরে অবস্থা দেখে প্রৌঢ়কে সরাসরি পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। |
হাসপাতালে গোপাল মাহাতো। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় দ্রুত তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। নয়নবাবু বলেন, “যখন ওই প্রৌঢ়কে আনা হয় তখন তাঁর জ্ঞান ছিল না। শিং তলপেটে ঢুকে ছয় ইঞ্চির মত গর্ত হয়ে গিয়েছিল। এই রোগী এক ধরনের অ্যানিমিয়াতে ভুগছিলেন। রক্তও কম ছিল। তাই খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। বর্তমানে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগে যে বলদগুলি দিয়ে চাষ করতেন বছর ছয়েক আগে সেগুলিকে কাশীপুরের হাটে বেচে দিয়ে বরাবাজারের বড়টাঁড় হাট থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকায় এই বলদ জোড়া কিনেছিলেন গোপালবাবু। তাঁর এক আত্মীয় জানিয়েছেন, ওই বলদগুলির বয়স হয়ে গিয়েছিল। তাই সেগুলি বেচে দিয়েছিলেন। গোপালবাবুর ভাগ্নে মিহির মাহাতোর কথায়, “প্রতিদিন বলদ দুটিকে চরাতে মাঠে নিয়ে যাওয়া, শিঙে তেল মাখানো, তাদের স্নান করানো, গোয়াল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সব নিজেই করতেন। ওই বলদ কেন এমন আচরণ করল বুঝতে পারছি না। আমি নিজেও তো আগে এই বলদগুলি নিয়েই চাষ করেছি। কখনও এমন করেনি।” |