|
|
|
|
যানজট রুখতে উদ্যোগী হুগলি পুলিশ |
রাস্তায় সিগনালিং ব্যবস্থার সঙ্গে বসবে সিসি ক্যামেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে জেলা জুড়ে যানজট মোকাবিলায় উদ্যোগী হয়েছে হুগলি পুলিশ। নেওয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা।
জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে শুরু করে ব্যান্ডেল, চন্দননগর, ডানকুনি, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, আরামবাগ, তারকেশ্বর, সর্বত্রই বিপুল গাড়ির চাপ সামাল দিতে হিমসিম অবস্থা পুলিশের। বহু জায়গায় ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে যে পরিমাণ ট্রাফিক-কর্মী দরকার, তা নেই পুলিশের হাতে। সে কারণেই, গাড়িঘোড়া নিয়ে নিত্য ‘মাথাব্যথা’ সারাতে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে চাইছেন জেলার পুলিশকর্তারা। সংশ্লিষ্ট শহরে যানজট নিয়ন্ত্রণে সামিল হতে পুলিশের তরফে অনুরোধ জানানো হয়েছে পুরসভাগুলিকেও।
সম্প্রতি হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জেলার পুরপ্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে বড় পর্দায় (প্রজেক্টর) জেলার বর্তমান যান-চিত্র এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে তাতে আপাতত ঠিক হয়েছে জেলার ২০টি ব্যস্ত জায়গায় ‘ওভারহেড গেট’ তৈরি করা হবে। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থার পাশাপাশি ওই সমস্ত গেটে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো থাকবে। গেটগুলির পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় ভাবে পুলিশ সুপারের অফিস থেকে পর্যবেক্ষণ (মনিটর) করা হবে। পুলিশের দাবি ওই ব্যবস্থায় ওভারহেড গেটের কাছাকাছি অর্থাৎ ক্যামেরার আওতার মধ্যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে নিমেষের মধ্যে পুলিশ তা জানতে পারবে। ফলে, দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হবে। এ ছাড়া, কোনও গাড়ি সিগন্যাল ভাঙলে সেটির নম্বর থেকে চালকের চেহারা সবটাই ধরা পড়ে যাবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়। |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এমনিতেই পুলিশকর্মী প্রয়োজনের তুলনায় কম। ট্র্যাফিক পুলিশের সংখ্যা আরও নগন্য। ফলে, সব সময়ে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। নতুন ব্যবস্থায় সন্দেহজনক যে কোনও গাড়ি অথবা সন্দেহভাজন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট মোড় দিয়ে গেলে, তা ক্যামেরায় ধরা থাকবে। দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়া কোনও গাড়ির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এতে দোষীদের ধরা এবং তদন্তের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে।”
গত বছর দু’য়েক ধরে বৈদ্যবাটি এবং ডানকুনি পুরসভা স্থানীয় যুবক-যুবতীদের রাস্তায় নামিয়ে (গ্রিন পুলিশ এবং সিভিল পুলিশ) ট্রাফিক সমস্যা সামাল দিয়েছে নিজেদের এলাকায়। বৈঠকে এ জন্য দুই পুরসভাকে ধন্যবাদ জানান পুলিশ সুপার। ইতিমধ্যেই বৈদ্যবাটি পুরসভার প্রায় ২৭ জনকে যান-নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। এই স্বেচ্ছাসেবকেরা শ্রাবণী মেলায় বৈদ্যবাটি নিমাইতীর্থ ঘাট-রাস্তার ‘জনপ্লাবণ’ সামাল দিচ্ছেন পুলিশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।
আরও এক ধাপ এগিয়ে বৈদ্যবাটি পুরসভা এ বার ‘বিপর্যয় মোকাবিলা তথা উদ্ধারকারী দল’ (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কাম রেসকিউ টিম) তৈরি করতে চাইছে। গোটা রাজ্যে কলকাতা ছাড়া আর কোথাও এই দল নেই। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে চিঠি দিয়েছেন বৈদ্যবাটির পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ।
হুগলির ১০টি পুরসভা গঙ্গার ধারে অবস্থিত। প্রায়ই গঙ্গায় মানুষের ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কলকাতা থেকে ডুবুরি এসে পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বৈদ্যবাটি পুরসভা রাজ্যের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে তাঁদের বাছাই করা দক্ষ সাতারুদের প্রশিক্ষণ দিক রাজ্য। পাশাপাশি, স্পিড বোট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, পোশাক-সহ ডুবুরির যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করুক। রাজ্যের অনুমোদন পেলে এই দলের সদস্যদের বেতন বিশেষ কোনও খাতে পুরসভা থেকে দেওয়ার কথাও ভেবে রেখেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। অজয়প্রতাপবাবু বলেন, “আমরা এখনই ১০ জনকে নিয়ে এমন একটি দল তৈরি করতে প্রস্তুত আছি। আমাদের হাতে এমন ছেলে আছে যে বেশ কয়েক মিনিট জলে ডুবে থাকতে পারে। আবার কেউ তরতরিয়ে গাছে উঠতে পারে। ফলে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম পেলে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য বিশেষ দল আমরা তৈরি করতেই পারি।” |
|
|
|
|
|