প্রশাসনের আপত্তিতে বুদ্ধের সভা নিয়ে জট
নানা জায়গায় বিরোধীদের সভা করার প্রশাসনিক অনুমতি নিয়ে টালবাহানা চলছেই। সেই তালিকায় এ বার যোগ হল স্বয়ং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কর্মিসভাও।
হুগলির আরামবাগের রবীন্দ্রভবনে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর কর্মিসভার পরিকল্পনা ছিল বুদ্ধবাবুর। জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলার যুক্তি দেখিয়ে ওই সভা করার অনুমতি দেয়নি। এতে ক্ষুব্ধ সিপিএম। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানায়। সিপিএমের দুই প্রাক্তন সাংসদ রূপচাঁদ পাল এবং শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়ও ওই দলে ছিলেন। পরে সুদর্শনবাবু জানান, স্বরাষ্ট্রসচিব ঘটনাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। জেলার এসপির সঙ্গে দেখা করেও এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম। তাদের মতে, ওই সভায় অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ‘অগণতান্ত্রিক’।
রাজ্য অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই সুদর্শনবাবুদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন মহাকরণে বলেন, “আমরাও তো বহু জায়গায় অনুমতি পাইনি! এটা একটা পদ্ধতি। জেলা প্রশাসন যদি মনে করে, কোনও জায়গায় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা রয়েছে, তা হলে অনুমতি না-ই দিতে পারে। আমার মনে হয়, যা হয়েছে, আইন মেনেই হয়েছে। অনুমতি নেওয়ার প্রশ্ন আছে মানে অনুমতি না-ও মিলতে পারে! মুখ্যমন্ত্রীকেও সভা করতে গেলে অনুমতি নিতে হয়।” আরও এক ধাপ এগিয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বুদ্ধবাবুরা বরং, কিছু দিন বিশ্রাম নিন! বাড়িতে বইপত্র পড়ুন!”
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সভা করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ‘পুনর্বিবেচনা’র পথ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। এ দিন হুগলির জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন বলেন, “আরামবাগের আইসি সভা করার পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলে প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে আমি স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা বলি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি পুলিশকে।” হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর) ওই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে সোমবার রিপোর্ট দিতে বলেছি। তার পরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রাথমিক ভাবে অনুমতি না মেলায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সিপিএম নেতৃত্ব প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সিপিএম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, এই ভাবে বিরোধীদের ‘মুখ বন্ধ’ করা যায় না। তাঁর বক্তব্য, “আরামবাগের মানুষ তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ফুঁসছেন। ওখানে বিদ্রোহ হতে পারে। বুদ্ধবাবু গিয়ে সভা করলে ওই মানুষরা সাহস পাবেন। তৃণমূল তা চায় না। সেই কারণেই পুলিশ-প্রশাসন আইনশৃঙ্খলার অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ কক্ষের সভারও অনুমতি দেয়নি।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু শিলিগুড়িতে বলেন, “সভা, সমিতি করাটা গণতান্ত্রিক অধিকার। আরামবাগের রবীন্দ্রভবনে সভা সমিতি তো হয়েই থাকে! আমি কলকাতার বাইরে আছি। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে মন্তব্য করব।”
ঘটনা হল, বুদ্ধবাবুর সভার অনুমতির জন্য সিপিএম পুলিশের কাছে আবেদন জানায়। তার প্রেক্ষিতে আরামবাগের আইসি সুকোমল দাস মহকুমাশাসককে জানান, সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সভার ‘অনুকূল’ নয়। হুগলি জেলা সিপিএম নেতৃত্বের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, সম্প্রতি তাঁদের পরিষদীয় দল আরামবাগ-গোঘাটে সফর করেছে। তখন সমস্যা হয়নি। তা সত্ত্বেও বুদ্ধবাবুর সভা নিয়ে ‘অহেতুক জলঘোলা’ করা হচ্ছে। তা ছাড়া, ওই সভা প্রকাশ্যে নয়, বন্ধ প্রেক্ষাগৃহে দলীয় কর্মীদের নিয়ে হওয়ার কথা। সুতরাং, সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা নিরর্থক। প্রসঙ্গত, বাম জমানায় আরামবাগ দীর্ঘ দিন সিপিএমের ‘মুক্তাঞ্চল’ ছিল। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতার আসার পরে ওই এলাকা একচ্ছত্র ভাবে তৃণমূলের দখলে চলে যায়। সূর্যবাবু এ দিন আরও বলেন, “আরামবাগে তৃণমূল গণতান্ত্রিক অধিকার পালন করতে দিচ্ছে না। ওরা বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে চায়। আজ ওরা বুদ্ধবাবুকে সভা করতে দিচ্ছে না। কাল কংগ্রেসকেও সভা করার অনুমতি না দিতে পারে।” যদিও এই পরিস্থিতিতে ‘হতাশ’ হওয়ার পক্ষপাতী নন বিরোধী দলনেতা। বরং, তাঁর ব্যাখ্যা, “কংগ্রেস আমলে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধন নিয়ে জ্যোতি বসুকে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাতে মানুষের মুখ বন্ধ করা যায়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.