|
|
|
|
গণ-ইস্তফার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন বিজেপির অন্দরেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা থেকে গণ-ইস্তফার প্রশ্নে ঝড় উঠেছে খোদ বিজেপির অন্দরেই। লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, যশবন্ত সিন্হা-র মতো নেতাদের বক্তব্য, কয়লা বণ্টন কেলেঙ্কারিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। ফলে একে পুঁজি করে এখনই সরকারের উপর চরম ঘা দেওয়া হোক। এ জন্য লোকসভা থেকে গণ-ইস্তফা দেওয়ার পথেও হাঁটতে চান অনেকে। সুষমা নিজে উদ্যোগী হয়ে আগামী সপ্তাহের গোড়ায় এনডিএ-র বাইরে থাকা অ-কংগ্রেসি দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করবেন। জয়ললিতা, নবীন পট্টনায়কের দল ছাড়াও মায়াবতী-মুলায়মের মতো ইউপিএ-র শরিক দলগুলিকেও সঙ্গে পেতে চান সুষমারা। আপাত ভাবে সংসদের চলতি অধিবেশনে একজোট হয়ে সরকারকে কোণঠাসা করার লক্ষ্য থাকলেও ওই দলগুলি এখনই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত কি না, তা-ও দেখে নিতে চায় বিজেপির একাংশ।
দলের একাংশের এই মনোভাবের সঙ্গে মোটেই এক মত নন অরুণ জেটলি, মুরলী মনোহর জোশী, রবিশঙ্কর প্রসাদরা। বরং তাঁরা মনে করেন, লোকসভা থেকে গণ-ইস্তফা শেষ অস্ত্র হওয়া উচিত। তার আগে ধাপে ধাপে এগোক দল। প্রথমে যৌথ সংসদীয় কমিটি থেকে ইস্তফা দেওয়া হোক। রাস্তায় নেমে আন্দোলন হোক। তার পর সময় বুঝে চরম ধাক্কা দেওয়া হবে। অর্থাৎ গণ-ইস্তফা।
বিজেপি নেতা ও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান মুরলী মনোহর জোশী আজই কমিটির বৈঠকে কয়লা কেলেঙ্কারি-সহ বিদ্যুৎ, বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত সিএজি-র রিপোর্টগুলি আলোচনার জন্য গ্রহণ করেছেন। তিনি মনে করেন, একবার পিএসি-র বৈঠক শুরু হলে আরও অনেক কিছু প্রকাশ্যে আসবে। তখন সরকারের উপর চাপ আরও বাড়ানোর সুযোগ মিলবে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “ডিসেম্বরে গুজরাতে নির্বাচনের পর নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসবেন। সেই আশঙ্কায় বিজেপির কিছু নেতা যদি এখনই নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করেন, সেই কৌশল কতটা সফল হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিজেপির আন্দোলন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত, বিজেপির বিরুদ্ধে নয়!”
গণ-ইস্তফা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় আজ সুষমা-যশবন্তরা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেন, “এই ভাবনা একেবারেই অমূলক।” তবে সরকারের উপর চাপ
বাড়ানোর কৌশল নিয়ে বিজেপির মধ্যে মতভেদ
ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। সংসদের অচলাবস্থা কাটাতে আজ লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের ডাকা বৈঠক
বয়কট করেন বিজেপির লোকসভার নেতারা। আডবাণী-সুষমার নির্দেশে অনন্ত কুমার সে কথা জানিয়েও আসেন স্পিকারকে। কিন্তু রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির ডাকা বৈঠকে জেটলি, রবিশঙ্কর প্রসাদরা হাজির হন! সেখানে জেটলি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা দাবিতে
আমরা অনড়। সরকার যদি দায়বদ্ধতা দেখাতে না পারে,
তা হলে বিজেপির থেকেও যেন কোনও প্রত্যাশা তারা
না রাখে।”
আনসারির ডাকা বৈঠকে গিয়েছিলেন তৃণমূলের লোকসভা নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিজেপির বয়কটের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “স্পিকারের বৈঠক যেভাবে বিজেপি
বয়কট করল, সেটি অভূতপূর্ব ঘটনা। সংসদীয় গণতন্ত্রে স্পিকার হলেন সর্বোচ্চ। তাঁর ডাকা বৈঠককে অগ্রাহ্য করা অত্যন্ত অবমাননাকর।”
বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, সরকারের পাশে থেকে তাঁদের আক্রমণ করলেও তৃণমূল বা মুলায়মরা চান, লোকসভা নির্বাচন তাড়াতাড়ি হয়ে যাক। তাই তাঁরা
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে সনিয়া গাঁধীর প্রস্তাবিত নাম খারিজ করে একজোট হয়েছিলেন। মুলায়মের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব এখন যতটা প্রকাশ্য, মমতার সঙ্গে ততটা নয়। এনডি-র বাইরে থাকা এই অ-কংগ্রেসি দলগুলিকে এক সূত্রে গাঁথতেই এখন মরিয়া বিজেপি। তাতে ইন্ধন যুগিয়েছে সঙ্ঘের একটি অংশ।
দলের একাংশের ব্যাখ্যা, আট বছর বিজেপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় আরএসএসের একটি অংশ অস্থির হয়ে উঠেছে। তারাও এখন চাইছে, যেন-তেন-প্রকারে মনমোহন সরকারকে উৎখাত করে বিজেপি ক্ষমতা দখল করুক। কিন্তু বিজেপি অন্দরের হাল দেখে তারাও দ্বিধাগ্রস্ত। |
|
|
|
|
|